• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

গ্রামের স্কুলে ক্লাস নিলেন ইবি অধ্যাপক

  আবু সালেহ শামীম, ইবি প্রতিনিধি

০৮ ডিসেম্বর ২০১৯, ২০:১৯
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান
ক্লাস নিচ্ছেন সিনিয়র অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান (ছবি : দৈনিক অধিকার)

বাংলাদেশের বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষাদান পদ্ধতি মুখ থুবড়ে পড়েছে। পর্যাপ্ত শিক্ষক এবং শিক্ষকদের যোগ্যতার প্রশ্নে শিক্ষার্থীদের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে অনীহা।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদেরকে আন্তরিক এবং অনুপ্রাণিত করতে ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জের কোষারাণীগঞ্জ ইউনিয়নের আকাশীল গ্রামে অবস্থিত নাকাটিহাট শহীদ আব্দুল জব্বার উচ্চ-বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাঠদান করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সিনিয়র অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে ১৯৭০ সালে নির্মিত নাকাটিহাট শহীদ আব্দুল জব্বার উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জীবনের দর্শন কি হওয়া উচিৎ বিষয়ে অনুপ্রেরণামূলক পাঠদান করেন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান।

রবিবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুর ১ টার দিকে তিনি শিক্ষার্থীদের জীবন দর্শন নিয়ে এই অনুপ্রেরণা ও দিকনির্দেশনামূলক ক্লাস নেন। এই ক্লাসে ড.আসাদুজ্জামান শিক্ষার্থীদেরকে জীবনে কিভাবে সফল হতে হবে সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেন।

তিনি বলেন, ‘সবাই ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হতে পারবে না, কিন্তু কখনো চেষ্টা ছেড়ে দেওয়া যাবে না। আমাদের জীবনে চলার পথ কখনোই মসৃণ নয়, শত শত বাঁধা বিপত্তিকে পেরিয়ে আমাদেরকে সফলতার সোপানে উত্তীর্ণ হতে হবে। জীবনের চড়াই-উৎরাই গুলোতে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য নিজেকে তৈরি করতে হবে।’

এক পর্যায়ে ক্লাসে উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘আমরা যারা ছোট থেকে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখি, তখন আমরা সমাজকে প্রতিশ্রুতি দেই যে, আমরা ডাক্তার হয়ে গরিব ও অসহায় মানুষের সেবা করবো। কিন্ত ডাক্তার হওয়ার পর আমরা সেই প্রতিশ্রুতির কথা ভুলে যাই। এটা কেন? এর থেকে আমাদের বেড়িয়ে আসতে হবে, সমাজের প্রতি দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো আমাদের রক্ষা করতে হবে। আমাদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘জীবন গড়ার এটাই সর্বোত্তম সময়, মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষায় উচ্চ শিক্ষা ও সুশিক্ষার ভিত্তি বা মূল। এ সময় থেকেই আমাদের সততা ও নৈতিক শিক্ষার গুণাবলী অর্জন করতে হবে এবং তা জীবন চলার পথে প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিশ্রুতি, সম্মান ও বিশ্বাস এই তিনটি বিষয় সবসময় মনে রাখতে হবে। বর্তমান সমাজ থেকে এই তিনটি বিষয় একরকম উঠে যাচ্ছে। সমাজের উন্নয়নে এই বিষয়গুলো হৃদয়ে ধারণ করে সকলকে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হতে হবে এবং বিষয়গুলোকে অনুশীলন করতে হবে। যে সকাল আমরা পার করে এসেছি তা আমরা আগামীকাল কখনোই পাবো না, সুতরাং আমাদের প্রত্যেকটা সকালকে মূল্যায়ন করতে হবে। জীবনে সকলের লক্ষ্য থাকতে হবে দৃঢ়। তবেই ভিশন এবং মিশনের সমন্বয়ে এই তিনটি বিষয়কে ধারণ করে একজন সফল ব্যক্তি হতে পারেন।’

এ সময় নিজেকে কিভাবে দেশের উন্নয়নে আত্মনিয়োজিত করে সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তুলতে হবে সে বিষয়েও উপদেশ দেন শিক্ষার্থীদের। ক্লাসে তিনি আরও বলেন, ‘একজন শিক্ষার্থীই একটি দেশের আগামীর সম্পদ। দেশ গঠনে একজন সুশিক্ষিত, চরিত্রবান শিক্ষার্থীই মূল হাতিয়ার।’

দেশের উন্নয়নে, মানবতার উন্নয়নে কিভাবে নিজেকে নিয়োজিত করতে হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করেন ড. আসাদুজ্জামান। তিনি শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদেরকে গুণগত ও আধুনিক মানসম্পন্ন শিক্ষা গ্রহণের পরামর্শ দেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন এ রকম উদ্যোগ অব্যাহত থাকলে প্রকৃত শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি হবে।

ক্লাসে তিনি শিক্ষার্থীদের শর্টকাট টেকনিক ও গাইড বই নির্ভরতা কমিয়ে মূল বই বেশি বেশি পড়ার আহ্বান জানান। নিজের শিক্ষা জীবনের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘আমাদের সময় শিক্ষা সামগ্রী ও শিক্ষা অর্জন খুব সহজ ছিলনা। আমরা খড়, পাটকাঠি ও বাসের চাটাইয়ে বেড়া দেওয়া ধুলোমাটি মাখা মেঝে বিশিষ্ট প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেছি। বর্তমান সরকার তোমাদের অনেক বড় বড় বিল্ডিং দিয়েছে, কম্পিউটার দিয়েছে, ল্যাবরেটরি দিয়েছে, প্রজেক্টর দিয়েছে, ফ্রি বই দিচ্ছে, অসচ্ছলদের উপবৃত্তি দিচ্ছে। শিক্ষার জন্য বিদ্যালয়গুলোতে তোমাদের খরচ নেই বললেই চলে। তোমরা এখন অনেককিছু অনেক সহজে পেয়ে যাচ্ছ।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের সময় কোনো কোচিং ও প্রাইভেট সেন্টার ছিলনা। আমরা মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করতাম, স্কুল শিক্ষকদের দিকনির্দেশনা মেনে চলতাম।’ তিনি শিক্ষার্থীদের কোচিং ও প্রাইভেট সেন্টার পরিহার করে ক্লাসের প্রতি শতভাগ মনোযোগী হওয়ার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন।

দিকনির্দেশনামূলক এই ক্লাসে উপস্থিত থেকে ক্লাসটি উপভোগ করেন নাকাটিহাট শহীদ আব্দুল জব্বার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল আমীন, সহকারী শিক্ষক মুর্শেদা বেগম ও বিউটি রাণী রায়।

প্রধান শিক্ষক নুরুল আনীন বলেন, ‘একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র অধ্যাপক হয়ে তিনি আমাদের শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেবেন সেটা আমরা ভাবতে পারিনি। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ থেকে আগত বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে পেয়ে আমরা ও শিক্ষার্থীরা খুশি এবং আনন্দিত। তার ক্লাস শিক্ষার্থীরা খুব উপভোগ করেছে এবং অনুপ্রাণিত হয়েছে। আমরা চাই পরবর্তীতেও যেন তিনি আমাদের স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন।’

প্রত্যন্ত এক গ্রামে এসে ক্লাস নেওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করা হলে দৈনিক অধিকারের প্রতিবেদককে অধ্যাপক ড. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘গ্রাম সবসময় আমাকে অনুপ্রাণিত করে, আমিও গ্রামে বেড়ে উঠেছি। আমি বিশ্লেষণ করে দেখেছি কোষারাণীগঞ্জ ইউনিয়নের অনেক ছেলে মেয়ে আমার নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘অন্যান্য এলাকার তুলনায় এই এলাকার অনেক শিক্ষার্থী দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়, ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছে এবং তারা ব্যাপক সফলতার সাক্ষরও রাখছেন। এই বিষয়টি এই এলাকায় আসতে আমাকে ব্যাপকভাবে অনুপ্রাণিত করেছে।’

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘এই এলাকার প্রতিটি পরিবারের শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে দেশ ও মানব জাতির কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করবে।’

ওডি/এমএ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড