• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় ভর্তি জালিয়াত চক্র

জালিয়াতির টাকা দিয়ে বাইক কেনার ইচ্ছে!

  সরকার আব্দুল্লাহ তুহিন, জাককানইবি প্রতিনিধি

০৮ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৩:৪৩
জাককানইবি
ছবি : প্রতীকী

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার সঙ্গে জড়িত জালিয়াত চক্রের একটি অডিও ফাঁস হয়। সেই অডিও রেকর্ডে এবারের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি করে উপার্জিত টাকা দিয়ে চক্রের এক সদস্যের বাইক কেনার ইচ্ছেসহ নানান প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে পাবলিক ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় আবারও তৎপর হয়ে উঠেছে এই চক্র।

সম্প্রতি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাককানইবি) স্থানীয় সরকার ও নগর উন্নয়ন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাব্বির রহমান (রোল-১৮১২৩৮৩৯) ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার পূর্বে এক শিক্ষার্থীকে প্রক্সি প্রক্রিয়ায় ভর্তি করিয়ে দেবে- এমন একটি চুক্তি করার কথোপকথন রেকর্ড আকারে ফাঁস হয়। ৭ মিনিট ৩৫ সেকেন্ডের ওই অডিও রেকর্ডে বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শফিক খানের সংশ্লিষ্টতার কথা উঠে এসেছে। ফাঁস হওয়া রেকর্ডে বলা হয়েছে শফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই জালিয়াত চক্রের প্রধান সিন্ডিকেট।

জানা যায়, ৩ লাখ টাকার বিনিময়ে প্রতি পরীক্ষার্থীকে চান্স পাইয়ে দেওয়ার শর্তে লেনদেন করে থাকে এই চক্র। প্রক্সি ও প্রশ্নপত্র ফাঁস এই দুই পদ্ধতিতে জালিয়াত চক্র পরিচালিত হয়। বর্তমানে প্রক্সি জালিয়াত তাদের জন্যে নিরাপদ অবলম্বন হয়ে উঠেছে। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এই চক্র সক্রিয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করতে ঝামেলা হলে সব সমস্যার সমাধান শফিক খান করে থাকে। তার এই ভর্তি বাণিজ্যের উপার্জিত অর্থে বিলাসবহুল জীবন যাপন করে। তার হাতের ঘড়ি, মোবাইল, বাইক ও মাইক্রোর মূল্য অনেক। শুধু ঘড়ির দামই ২৭ হাজার টাকা। প্রতিদিন ২ প্যাকেট সিগারেট আর মদের প্রয়োজন হয় তার। প্রতি সিজনে ৫০ লাখ টাকা আয় তার। এই সকল প্রকার ব্যয়ের কোনো অর্থ সে বাসা থেকেও আনেন না বলে জানা যায় এই চক্রের সদস্য সাব্বিরের মুখ থেকে। এমনকি শফিকও জালিয়াতি করে ভর্তি হয়েছে বলে ফাঁস হওয়া রেকর্ড থেকে জানা গেছে।

এবারের ভর্তি পরীক্ষায় ৭ জন পরীক্ষার্থী আছে তার (সাব্বিরের), যাদের প্রক্সি জালিয়াতি করে ভর্তি করা হবে। তার একমাত্র ইচ্ছে এইবারের টাকা দিয়ে একটা বাইক কিনবে। সাব্বির কেবল নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, জাহাঙ্গীরনগর, শাবিপ্রবি, মাওলানা ভাসানীতেও তার চক্রের মাধ্যমে এই জালিয়াতি করে থাকে। ফাঁস হওয়া অডিওতে এমনটিই শোনা যায়। চক্রের অন্যতম প্রধান হোতা শফিক খান পূর্বেও জালিয়াতি করে প্রশাসনের নজরে এসেছিল। কিন্তু প্রশাসন থেকে কোনো ব্যবস্থা ছাড়াই তিনি তার স্বাভাবিক শিক্ষা জীবন অতিবাহিত করছেন।

২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় ‘ডি’ ইউনিটের প্রথম শিফটের প্রকাশিত ফলে জালিয়াতি করে পঞ্চম স্থান অধিকার করে এই চক্রের আশ্রয়ে আসা মারুফ রহমান (রোল ১৩৮৫৮) নামের এক পরীক্ষার্থী। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী তুষার জিন্না ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী আপেল মাহামুদ আকাশের মাধ্যমে জাককানইবির শফিকের নেতৃত্ব দেওয়া জালিয়াত চক্রের সদস্য সাব্বিরের সঙ্গে সকল কার্যক্রম পরিচালনা করে। যার স্বীকারোক্তি দিয়েছে জালিয়াতি করে ভর্তি হতে আসা আটক শিক্ষার্থী মারুফ রহমান। অভিযুক্ত তুষার জিন্না ফুলবাড়িয়া ইসলামিয়া কলেজের আইসিটি শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা করছেন।

বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) ভর্তি হতে এসে আটক হওয়া শিক্ষার্থী মারুফ রহমানের জবানবন্দি অনুযায়ী সাব্বির তার মোবাইল ফোনসহ সঙ্গে আনা ব্যাগ নিয়ে যায়। অন্য দিকে এই কার্যে উৎসাহিত করে তুষার জিন্না, সহযোগিতায় ছিল জাবি শিক্ষার্থী আপেল মাহমুদ আকাশ। এ বিষয়ে শফিক খান, সাব্বির রহমান ও তুষার জিন্নার সঙ্গে একাধিক ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও ফোন বন্ধ দেখায় এবং তুষার জিন্না বর্তমানে পলাতক আছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

আপেল মাহমুদ আকাশ মুঠোফোনে জানান, ‘এটি মিথ্যা, এগুলোর সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ নেই। আমি কেবল তুষার ভাইয়ের কথায় মারুফের বাসায় কথা বলেছি।’

সাব্বিরের জড়িত থাকার বিষয়ে স্থানীয় সরকার ও নগর উন্নয়ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান তানিয়া আফরিন তন্বী বলেন, ‘অপরাধী যেই হোক তাকে আইনের আওতায় আনবে প্রশাসন। তবে সাব্বিরের নামের সঙ্গে যেহেতু আমাদের বিভাগের শিক্ষার্থী পরিচয়টা রয়েছে। আমরা রবিবার বিভাগের শিক্ষকরা বসে এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত নেব।’

জালিয়াত চক্রে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থীর সংশ্লিষ্টতা প্রসঙ্গে বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. এএইচএম কামাল বলেন, ‘যেহেতু বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে আমরা অ্যাকাডেমিকভাবে বসব এবং কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে যেন ভবিষ্যতে এমন আর কেউ না করতে পারে। তুষার জিন্না নামের শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে ড্রপ আউট তাই তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আর শফিক নামের শিক্ষার্থী সে যদি এই কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকে তবে বিভাগ অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান বলেন, ‘জালিয়াতি করে ভর্তি হতে আসা শিক্ষার্থী আটক হয়েছে এবং তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে এবং তার দেওয়া বক্তব্য অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও দুই জন শিক্ষার্থীর সংশ্লিষ্টতার কথা উঠে এসেছে। যদি অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হয় তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’

প্রসঙ্গত, গত ৫ ডিসেম্বর আটক হওয়া জালিয়াতি করে পরীক্ষা দিতে আসা শিক্ষার্থীসহ অজ্ঞাত ৩ জনের বিরুদ্ধে পাবলিক পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগ এনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মামলা দায়েরের ব্যাপারে সত্যতা নিশ্চিত করেছে ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।

ওডি/আরএআর/এমএ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড