• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩২ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

অর্ধ শতাব্দী পেরোনোর গল্প

  মাহবুব এ রহমান, চবি প্রতিনিধি

১৮ নভেম্বর ২০১৯, ১০:৫৪
চবি
চবির রেলস্টেশন (ছবি : দীপ্র বণিক)

দেশের সর্ববৃহৎ ২১শ একরের ক্যাম্পাস চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। পাহাড়ঘেরা সুকোমল ক্যাম্পাস আজ পা দিয়েছে ৫৪ তে। সাফল্যের এক দীর্ঘ যাত্রায় এ জ্ঞান মাতৃকা পেছনে ফেলে এসেছে ৫৩টি বছর। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার এই ক্যাম্পাস যে কাউকে মুগ্ধ করে। কী নেই এ ২১শ একরের ক্যাম্পাসে! বোটানিক্যাল গার্ডেন, ঝুলন্ত ব্রিজ, ফরেস্ট্রি, চালন্দা গিরিপথ, সুইচ গেট এবং ঝর্ণাসহ পুরো ক্যাম্পাস পাঠ্যসূচির সহচর বিনোদন কেন্দ্র।

সারা বিশ্বের সঙ্গে একটা স্বাতন্ত্র্যতা রয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের। শহর থেকে ক্যাম্পাসের দূরত্ব প্রায় ২২ কিলোমিটারের। তাই শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য ১৯৮০ সালে চালু হয় শাটল ট্রেন। পৃথিবীর সব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাতন্ত্র্যটা এখানেই। যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পরিবহনের জন্য ছিল নিজস্ব ট্রেন। কিন্তু বর্তমানে তা বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ই পৃথিবীর একমাত্র শাটল ট্রেনের বিশ্ববিদ্যালয়।

ছবি

ঝুলন্ত ব্রিজ (ছবি : দীপ্র বণিক)

চবির ট্রেনের ঠিকানা কিংবা গন্তব্য বটতলি থেকে ক্যাম্পাসের জিরো পয়েন্ট। দুটো শাটলের পাশাপাশি আছে ১টি ডেমুও। প্রতিদিন প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার শিক্ষার্থীর বিশ্ববিদ্যালয় যাতায়াতের মাধ্যম এই শাটল ও ডেমু ট্রেন। শাটল দেখতে শুধু যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দর্শনার্থীরা আসেন তা কিন্তু নয়। বিদেশ থেকেও শাটল দেখতে চবিতে আসার অনেক নজির আছে। শাটলই হলো চবির প্রাণ।

অনেকে এই শাটলকে ‘ভ্রাম্যমাণ বিশ্ববিদ্যালয়’ও বলেন। আড্ডা, গল্প, গান, পড়ালেখা কী নেই এই শাটলে! বিভিন্ন বগিতে সবাই একসঙ্গে গান গেয়ে মাতিয়ে রাখেন পুরো ট্রেন। ‘জয়বাংলা ভাস্কর্য’ চবির সৌন্দর্য আর ঐতিহ্যে যোগ করেছে নতুন মাত্রা। দেরিতে হলেও দেশের স্বাধিকার আন্দোলনের স্মৃতিকে নির্দেশ করে স্বগৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে ‘জয় বাংলা’ ভাস্কর্য। পাশাপাশি ক্যাম্পাস আঙিনায় হাইটেক পার্ক নির্মাণের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে ইতোমধ্যে।

ছবি

রাতের কলা ঝুপড়ি (ছবি : দীপ্র বণিক)

১৯৬৬ সালের ১৮ নভেম্বর প্রতিষ্ঠা লাভের পর উপাচার্য ড. আজিজুর রহমান মল্লিকের হাত ধরে শুরু হয়ে হাটিহাটি পা পা করে ৫৩ বছরে এক নব যৌবনে এসে পা দিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমান উপাচার্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথম নারী উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার। এর ভেতরে এখানে অভিভাবকত্ব করেছেন ১৮ জন খ্যাতিমান ব্যক্তি।

ছবি

কাটাপাহাড়ের রাস্তা (ছবি : দীপ্র বণিক)

৫৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সবাইকে অভিনন্দন জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বলেন, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ৫৩ বছর পার করেছে বিশ্ববিদ্যালয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বমানের করে গড়ে তুলতে আমি আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাব। আমার সুদক্ষ সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে পথ চলতে চাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের যে গুরু দায়িত্ব রাষ্ট্রপতি আমার কাঁধে দিয়েছেন, তা সৎ ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করব। আর এ পথচলায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে একটি পরিবারের মতো এগিয়ে যেতে চাই। এ দিকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে ক্যাম্পাস যেন সেজেছে এক ভিন্ন সাজে। চারদিকে ভিন্ন আমেজ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও নানা আয়োজন করেছে দিনটিকে সামনে রেখে।

ছবি

জয়বাংলা চত্ত্বর (ছবি : দীপ্র বণিক)

২০১৯ সালে প্রকাশিত বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনলিপি অনুযায়ী বর্তমানে ২৭ হাজার ৮৩৯ জন শিক্ষার্থী নিয়োজিত এ জ্ঞান আঙিনায়। ৪টি বিভাগ নিয়ে শুরু করা চবিতে বর্তমান বিভাগ দাঁড়িয়েছে ৪৮টি। ৯টি অনুষদ আর ছয়টি ইনস্টিটিউটে চলছে বর্তমান প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের আবাসন সুবিধার জন্য রয়েছে ১২টি হল। ৮টি ছেলেদের এবং বাকি চারটি মেয়েদের জন্য। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধেও ছিল জ্ঞানদায়িনী মাতৃকার অংশগ্রহণ। স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রাণ দিয়েছেন একজন শিক্ষক, ১১ জন শিক্ষার্থীসহ ১৫ জন ব্যক্তিবর্গ।

ছবি

পায়রা চত্ত্বর (ছবি : দীপ্র বণিক)

প্রিয় ক্যাম্পাসের জন্মদিনে নৃবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মাসুম আহমদ ইকবাল বলেন, মনের কোনে জমা হওয়া স্বপ্ন নিয়ে একদিন এসেছিলাম পাহাড়ঘেরা সবুজাভ শাটলের ক্যাম্পাসে। অনেক কিছু দিয়েছে এই প্রাণের ক্যাম্পাস। প্রিয় ক্যাম্পাসের জন্মদিনে অনেক শুভেচ্ছা। যখন মনে হয় ক্যাম্পাস জীবনের ইতি টানার কথা, তখন মনটা নিমিষেই খারাপ হয়ে যায়।

হিউম্যান রিসোর্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২ম বর্ষের শিক্ষার্থী আরশি ইরতিজা বলেন, শহরেই থাকি। তাই অনেক কষ্টের যাত্রা করে প্রতিদিন ক্যাম্পাসে আসি। তাও ভালো লাগা কাজ করে ক্যাম্পাসের প্রতি, হয়তো ক্যাম্পাসে যে তারুণ্য উচ্ছ্বলতা পাই তার জন্য। ক্লাস শেষে সারাদিনের ক্লান্তি দূর হয়ে যায় শাটলের গান শুনে। প্রাণের চবি, হাজারো বছর ধরে তুমি জ্ঞানরূপিনী হয়ে আগলে রেখো তোমার জ্ঞানপিপাসুদের।

ছবি

হতাশার মোড় (ছবি : দীপ্র বণিক)

‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় গৌরবের সঙ্গে ৫৩ বছর পার করছে এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দদায়ক। দীর্ঘ পথচলায় বিশ্ববিদ্যালয় অসামান্য সাফল্য অর্জন করেছে। শিক্ষা-গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়। এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকুক প্রিয় ক্যাম্পাসের।’ ইংরেজি বিভাগের ২ম বর্ষের শিক্ষার্থী জাওয়াদুল জামান অরণ্যের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলছি-

শুভ জন্মদিন প্রাণের ক্যাম্পাস, শুভ জন্মদিন!

ওডি/আরএআর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড