জাবি প্রতিনিধি
সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ এনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) এক শিক্ষার্থীর মোবাইল ফোন দুই দিন জব্দ রাখার পর ফিরিয়ে দিয়েছেন প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান। দুইদিন ধরে তল্লাশি চালিয়েও রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কথোপকথন ও নিষিদ্ধ কোনো সংগঠনের সাথে সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় গতকাল বুধবার দুপুরে মোবাইল ফোনটি ফেরত দেয়া হয়েছে।
জানা যায়, গত সোমবার সন্ধ্যায় সমাজ বিজ্ঞান অনুষদ প্রাঙ্গণে ‘স্ব-চিন্তন’ নামক একটি পাঠ প্রস্তাবনার মোড়ক উন্মোচনের আয়োজন করেন একদল শিক্ষার্থী। আয়োজন চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরসহ কয়েকজন শিক্ষক সেখানে উপস্থিত হয়ে সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ এনে ৪৭ ব্যাচের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফ সোহেলের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন পাসওয়ার্ডসহ জব্দ করেন।
এছাড়া আরিফ পূর্ব থেকে ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ ও ‘রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন’র সাথে যুক্ত থাকায় প্রক্টরিয়াল বডি তাকে জেরা করে। পরে টানা দুইদিন জব্দ করে রাখার পর বুধবার দুপুরে সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে আরিফের মোবাইল ফোনটি ফেরত দেয়া হয়। এ সময় মোবাইলে শিবির সংশ্লিষ্টতা কিংবা সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনার কোন তথ্য-প্রমাণাদি পাওয়া যায়নি বলে নিশ্চিত করেন প্রক্টর।
প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, গত সোমবার মোড়ক উন্মোচন করার সময় আমরা সেখানে উপস্থিত হই। এ সময় তাদের বক্তব্যে কিছু শব্দ উঠে আসে যেগুলো আপাত বিচারে সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী বলে মনে হয়েছে। তাই আমরা তৎক্ষণাৎ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে মোবাইল ফোনটি নিয়ে আসি।
বিতর্কিত শব্দ ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে আরিফ সোহেল বলেন, আমাদের পাঠ প্রস্তাবনায় ‘আজাদি’, ‘জাহেলিয়াত’, ‘হুকুমাত’ শব্দগুলো থাকায় প্রশাসন আপত্তি জানায়। এক পর্যায়ে জেরা শেষে তারা আমার ফোনটি নিয়ে নেয়।
এ দিকে প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, মোবাইল ফোন জব্দের সময় প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান, সহকারী প্রক্টর মো. রনি হোসাইন, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক আহমেদ রেজা, গণিত বিভাগের অধ্যাপক মো. সাব্বির আলম এবং অব্যাহতিপ্রাপ্ত সহকারী প্রক্টর ও পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান জনি উপস্থিত ছিলেন। সেসময় প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা ছাড়াও অন্যান্য শিক্ষকরা তাদের উচ্চবাচ্য করে জেরা করেন এবং ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক আহমেদ রেজা তাদেরকে কট্টর হিন্দু বিদ্বেষী ও নব্য ইসলামিক দল হিসেবে আখ্যা দেন। এসময় অনেকেই তাদেরকে ‘শিবির’ হিসেবে আখ্যায়িত করলে মুহূর্তেই তা গোটা ক্যাম্পাসে আলোড়ন সৃষ্টি করে।
শিবির কিংবা নব্য ইসলামিক দল হিসেবে কার্য পরিচালনার অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে আরিফ সোহেল বলেন, আমাদের আদর্শ শিবিরের আদর্শের সম্পূর্ণ বিপরীত। যদি এটাকে কেন্দ্র করে আমাদেরকে শিবির ট্যাগ ও প্রচার করা হয় তা আমাদের জন্য খুবই বিব্রতকর। আমরা মূলত বুদ্ধিবৃত্তিক ও মননশীলতা চর্চা করে থাকি।
কোনো শিক্ষার্থীর পাসওয়ার্ডসহ মোবাইল জব্দ করে তার অনুপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার ব্যক্তিগত ফোনালাপ ও কথোপকথন চেক করতে পারেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে প্রক্টর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলাবিধি অনুসারে করা যায় না। বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে এটি করতে হয়েছে। তবে তার মোবাইল চেক করে আমরা এমন কিছু পাইনি।
তিনি আরও বলেন, তার অনুপস্থিতিতে চেক করা হলেও তার ব্যক্তিগত স্পেসে আমরা প্রবেশ করিনি। আমরা শুধু ঘটনা সংশ্লিষ্ট গ্রুপের মেসেজগুলো চেক করেছি।
এ দিকে এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করেছে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা জানায়, ‘স্ব-চিন্তন’ শিক্ষামূলক একটি বুদ্ধিবৃত্তিক ও মননশীল চর্চার প্লাটফর্ম। এখানে মুক্ত আলোচনার স্বার্থে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সদস্যরা থাকতে পারে। তবে এটির কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড