চুয়েট প্রতিনিধি
'যেতে নাহি দিব হায়/তবু যেতে দিতে হয়/তবু চলে যায়'- জীবনের এই কঠিন সত্যটি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন অনেক আগেই। তবুও মায়ার বাঁধন ছিঁড়তে চায় না মানুষ। প্রিয়জনকে ছেড়ে থাকতে চায় না একটি মুহূর্তও। প্রিয় মুহূর্ত গুলোকে আঁকড়ে যেন বেচে থাকার এক অনন্য আকুতি।
স্কুল কলেজ পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষা অর্জন মানব জীবনে যেন এক অন্য রকম গুরুত্ব বহন করে। ভর্তি যুদ্ধ থেকে শুরু করে কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের নানান চড়ায় উৎতায় পেরিয়ে একজন শিক্ষার্থী স্বাক্ষী হয় বহুজাতিক জ্ঞান, পরিচিত হয় বিভিন্ন সংস্কৃতির সাথে। অর্জন করে ভিন্ন ভিন্ন সব অভিজ্ঞতা। হাসি গানে ভরা যেমন এই চার বছরের বিশ্ববিদ্যালয় জীবন তেমনি পার করতে হয় কঠিন থেকে কঠিনতর সময়গুলো। সেসবের মধ্যেই শিক্ষার্থী খুঁজে নেয় সব জ্ঞান, ধারণা, আবিষ্কার করে জীবনের সব নতুন মানে।
কেক কাটছে ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক
সাগর সমতুল্য সব স্মৃতি, বিস্তৃত দিগন্তের মতো বিশালতার সমান ভাতৃত্ব, বন্ধুত্ব যখন পার করে বন্ধন ছিন্ন করতে হয়,তখন কেমন অনুভব হয়! বিদায়ের পর গাইবে হয়তো- "কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই,আজ আর নেই"। চার বছরের স্নাতক শেষ মুহূর্তে একজন শিক্ষার্থী কেমনই ভাববে! বন্ধনে আবদ্ধ ছোট ভাই বোন, পারিপার্শ্বিক পরিবেশই বা কিভাবে নিবে সেই ছিন্ন হতে যাওয়া সম্পর্ককে! হয়তো কবি গুরুর কবিতার সেই লাইনই বলে দেয় সব উত্তর।
প্রকৌশল শিক্ষা পেরিয়ে একজন শিক্ষার্থী তার পড়াশোনার সব বিষয়বস্তু শিখতে পারুক বা না পারুক সম্পর্কের বন্ধন আর প্রিয়জনদের স্মৃতি আঁকড়ে নিয়ে এগিয়ে যেতে শিখবেই। শিক্ষার সেই ধারা পেরিয়ে একদিন বাঁচবে সেই বিদায়ের ঘন্টা।
বাহারি আলপনা আঁকাতে ব্যস্ত শিক্ষার্থীরা
তেমনি চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে(চুয়েট) এ পার হলো শিক্ষা সমাপনী উৎসব-২০২৩। ২০১৭-১৮ শিক্ষা বর্ষের শিক্ষার্থীদের আয়োজনে এবারের উৎসবকে নামকরণ করা হয়েছিলো- সংবর্ত ১৭। " সংবর্তের ক্ষিপ্ত ডাক, এক সাথে এক সাত" স্লোগানকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে চলে নানাবিধ আয়োজন।
হা,' চ' তে চট্টগ্রাম, 'চ' তে চুয়েট। তাই বীর চট্টলার ইতিহাস ঐতিহ্যর কথা বলতে গেলে চুয়েটের এই শিক্ষা সমাপনী উৎসব নতুন মাত্রা বয়ে আনে। বলা হয়ে থাকে, চট্টগ্রাম অঞ্চলের বৃহৎ উৎসব গুলোর মধ্যে চুয়েট র্যাগ উৎসব অন্যতম। বীর চট্টলার পাহাড়ের কোল ঘেষে অবস্থান করা এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এতো বড় আয়োজনে উৎসবে মুখরিত হয় চুয়েটসহ পুরো চট্টগ্রাম।
গানে ব্যস্ত কিছু শিক্ষার্থী
করোনার পর নানা বিধ প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে দীর্ঘ চার বছর পর আয়োজন হয়েছিলো শিক্ষা সমাপনী উৎসব। কালের দীর্ঘ এই ব্যবধান আনন্দে নতুন মাত্রা যোগ করে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। গত ২৫ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) থেকে শুরু চারদিন ব্যাপী চলে এই উৎসব। এর আগে উৎসবের প্রস্তুতি স্বরুপ নেয়া নয় নানান সব উদ্যোগ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরের পাশে আকা হয় বাহারি আলপনা, চলে শিল্পীদের ব্যস্ত নাচের মহড়ায়, কেউ আবার গাইছেন গান। দেয়ালিকা, র্যাগ হাট, আলপনা, রাতের লাল নীল আলোর ঝলকানিতে এ যেন এক মহোৎসব। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর এবার সবকিছুই হচ্ছে ভিন্ন আঙ্গিকে। আলপনায় রয়েছে বিশেষ আকর্ষণ। ২০১৭ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস জীবন পুরোটা বিভিন্ন আলপনায় ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করছেন তাঁরা। এ ছাড়া বিদায়ী ব্যাচের ৭১১ জন শিক্ষার্থীর নাম আলপনায় যুক্ত করার পরিকল্পনা যুক্ত করা হয়েছে।
ফ্লাশমবের নাচে চুয়েট ছাত্রীরা
চারদিনের আয়োজনের এবারের অনুষ্ঠানের প্রথমদিনে (২৫ জানুয়ারি) ঊদ্বোধনী অনুষ্ঠান, চট্টগ্রাম শহর ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, ফ্ল্যাশমব, কালার ফেস্ট, বৃক্ষরোপণ এবং বিদায়ী ব্যাচের শিক্ষার্থীদের নৈশভোজ পর্ব ছিলো। পরবর্তী দিনের আয়োজনে ছিলল ফটো এক্সিবিশন। ২৭ জানুয়ারি শুক্রবার সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা এবং সর্বশেষ দিনে (২৮ জানুয়ারি), শনিবার ছিলো জমকালো কনসার্ট যেখানে পারফর্ম করছে ওয়ারফেজ, আর্ক, নেমিসিস, ক্রিপটিক ফেট, কার্নিভাল এবং উন্মাদের মতো জনপ্রিয় কিছু ব্যান্ড। যা রবিবার সকাল সাড়ে নয়টা পর্যন্ত চলে।
প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পরও বিশ্ববিদ্যালয়ে এতো বড় মহোৎসবের আয়োজনে খুশি সাধারণ শিক্ষার্থী,শিক্ষক, কর্মকর্তা কর্মচারীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবার । বছর পর বছর যেন এমন আয়োজন হয় সেই প্রত্যাশাই চুয়েটের সংশ্লিষ্ট সকলের। উল্লেখ্য যে, ২০১৯ সালে সর্বশেষ ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা (চুয়েটের ৪৫ তম ব্যাচ) তাদের শিক্ষা সমাপনী উৎসব 'চিরন্বয়'১৪ ' আয়োজন করে।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড