ইবি প্রতিনিধি
আগামী ১৭ মে থেকে আবাসিক হল ও ২৪ মে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে সেটি পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা। একই সাথে আগামী ১ মার্চের পূর্বে হল ও ক্যাম্পাস খুলে দিয়ে স্থগিত করা সকল পরীক্ষা পুনরায় চালু করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডায়না চত্বর সংলগ্ন আম বাগানে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী জিকে সাদিক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের পক্ষে দাবিগুলো উপস্থাপন করেন।
তিনি বলেন, গত ২২ ফেব্রুয়ারি মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে আগামী ১৭ মে হল ও ২৪ মে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন আমরা ওই সিদ্ধান্তকে পুনর্বিবেচনা করার দাবি করে এটিকে প্রত্যাখ্যান করছি। আমরা মনে করি, এই সিদ্ধান্ত সাধারণ শিক্ষার্থীদের পরিস্থিতি বিবেচনায় না নিয়েই গ্রহণ করা হয়েছে। কারণ তিনি ভ্যাকসিন দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার কথা বলেছেন। আমরা বলতে চাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে তিন মাস সময় কেন লাগবে সেটা বোধগম্য নয়। আমরা সেই প্রশ্ন শিক্ষামন্ত্রীর কাছে রাখতে চাই।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা দেখেছি সরকার সবকিছু স্বাভাবিক করে দিয়েছে। ইতোমধ্যে ৬৪ জেলায় স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি চলমান রয়েছে। এসব নির্বাচনে শিক্ষার্থীরাও প্রচার প্রচারণার কাজে অংশ নিয়েছে। এছাড়া ছাত্র রাজনৈতিক সংগঠনগুলো তাদের সব ধরনের কার্যক্রম চলমান রেখেছে। সরকার যদি সত্যি ছাত্রদের তথা দেশের মানুষের করোনা সংক্রমণ নিয়ে উদ্বেগ থাকতো তাহলে এতসব কার্যক্রম চলমান থাকতো না।
অন্যদিকে প্রায় ৬ মাস আগেই দেশের সব কওমি ও হেফজ মাদরাসাগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। সেই শিক্ষার্থীদের মাঝেও করোনা ছড়ানোর শঙ্কা রয়েছে। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিলে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাবে সরকারের এই দাবির কোনো যৌক্তিকতা আমরা পাচ্ছি না।
শিক্ষার্থীরা জানান, সংবাদমাধ্যমের তথ্য বলছে, সম্প্রতি করোনা সংক্রমণ ৫ থেকে ৮ শতাংশে চলে এসেছে। একদিকে সরকার সবকিছু উন্মুক্ত করে দিয়েছে, সব ধরনের গণজমায়েত চলছে, দেশে মাদরাসা (কওমী ও হেফজ) খুলে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে করোনা সংক্রমণও সর্বনিম্নে চলে এসেছে এবং ইতোমধ্যে ভ্যাকসিনও চলে এসেছে। সেই প্রেক্ষিতে আমরা বলতে চাই আগামী ১৭ মে হল ও ২৪ মে ক্যাম্পাস খুলে দেওয়ার যে অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সেটা থেকে সরে এসে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দ্রুত হল ও ক্যাম্পাস খুলে দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে হবে। অন্যথায় শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত ছাত্র সমাজ মেনে নেবে না। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও এই সিদ্ধান্ত মেনে নেবে না।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের পক্ষে জানানো হয়, শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণার পর ইতোমধ্যে ইবিতে সব ধরণের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। আমরা মনে করি এটি চরম হঠকারী সিদ্ধান্ত। কারণ ইতোমধ্যে অনেক বিভাগের পরীক্ষা চলছে, কিছু বিভাগে পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। যার ফলে শিক্ষার্থীরা বাড়ি থেকে এসে মেস বা বাসা ভাড়া নিয়ে ক্যাম্পাসের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে অবস্থান করছে। এমন পরিস্থিতিতে পরীক্ষা বন্ধ করে দিয়ে শিক্ষার্থীদের বিপাকে ফেলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের এমন খেলো আচরণ শিক্ষার্থীদের হতাশ করেছে। এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত আমরা প্রত্যাখ্যান করছি। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান রাখছি অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত থেকে সরে হল-ক্যাম্পাস খুলে শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক করুন। অন্যথায় শিক্ষার্থীরা এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ যে ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে সেটা আর বজায় থাকবে না। এ সময় সাধারণ শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিলে সেটার দায়ভার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেই নিতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলন শেষে শিক্ষার্থীরা প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। পরে দুপুর ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালামের কাছে আন্দোলনকারীদের একটি প্রতিনিধি দল সাক্ষাৎ করে তাদের দাবিগুলো উত্থাপন করে।
আরও পড়ুন : চলমান সকল পরীক্ষা স্থগিত করেছে কুবি প্রশাসন
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম জানান, এটি একটি জাতীয় ইস্যু, আমি ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের এই দাবির সাথে একমত। আমিও চাই শিক্ষার্থীরা তাদের পরীক্ষা দিক এবং ক্লাস রুমে ফিরে আসুক। কিন্তু আমাকে সরকার এখানে নিয়োগ দিয়েছে, এ জন্য সরকারের নির্দেশনার বাইরে গিয়ে আমি একা কিছু করতে পারিনা।
তিনি বলেন, সরকার, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেটা অবশ্যই ভেবে-চিন্তে বৃহৎ স্বার্থে নিয়েছেন। সুতরাং আমরা সেটার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এ সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছি। তারপরেও যদি চলমান পরীক্ষা গ্রহণের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করেন তাহলে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাৎক্ষণিকভাবে সেটা শিক্ষার্থীদের সাথে সমন্বয় করব।
সম্পাদক: মো: তাজবীর হোসাইন
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118241, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড