• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

৩০ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৭৯৩ কোটি টাকার কর ফাঁকির অভিযোগ

  অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক

২২ আগস্ট ২০১৯, ১০:৫২
এনবিআর
(ছবি: সংগৃহীত)

দেশের ৩০টি বড় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে ৭৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা কর ফাঁকির প্রমাণ মিলেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বিশেষ নিরীক্ষায় এ বিশাল অঙ্কের ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) ফাঁকি ধরা পড়েছে।

যেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এই কর ফাঁকির প্রমাণ মিলেছে তাদের মধ্যে রয়েছে- ব্যাংক, বিমা প্রতিষ্ঠান, মোবাইল ফোন, ওষুধ, সিরামিক, দুগ্ধজাত পণ্য, সিমেন্ট, খাদ্য ও পানীয় খাতের প্রতিষ্ঠান। ইতোমধ্যেই কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে প্রায় সাড়ে ৫৩ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। আর বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোর ভ্যাট ফাঁকির অর্থ উদ্ধারের বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে এনবিআর সূত্রে জানা গেছে।

জানা গেছে, এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ ভ্যাট) অফিস গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তাদের আওতাধীন সন্দেহজনক প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক কার্যক্রম ও নথিপত্রের ওপর বিশেষায়িত নিরীক্ষা কার্যক্রম চালায়। সে সময় ৩০টি প্রতিষ্ঠানের এসব ফাঁকি ধরা পড়ে। সাধারণত অপেক্ষাকৃত বড় অঙ্কের ভ্যাট পরিশোধকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এনবিআরের এই অফিসের মাধ্যমে রাজস্ব পরিশোধ করে থাকে। এর মধ্যে মোবাইল ফোন কোম্পানিসহ অনেকের বিরুদ্ধেই রাজস্ব ফাঁকির প্রমাণ মিলেছে।

এই ভ্যাট ফাঁকি প্রসঙ্গে এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘ভ্যাট অফিসে দাখিল করা কাগজপত্র, প্রতিষ্ঠানে রক্ষিত নথি, শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ঘোষিত আর্থিক বিবরণী কিংবা ব্যাংক ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে জমা দেওয়া বিবরণী বিস্তারিত নিরীক্ষার মাধ্যমে এসব অনিয়ম ও ফাঁকি উদঘাটন হয়েছে। চলতি অর্থবছরও এ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এরই মধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ৫৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে। আর বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে এই কর ফাঁকির টাকা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দ্রুত উদ্ধার করা সম্ভব হবে।’

ভ্যাট অফিস মূলত বিশেষ বিশেষ বিষয়ে দক্ষ অর্থাৎ কারিগরি, তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানে অভিজ্ঞ ও আইনগত বিষয়ে পারদর্শী এনবিআরের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে এ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আর এই নিরীক্ষার অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব বিবরণী, আমদানির তথ্য যাচাই, কোন দরে বিক্রি হচ্ছে আর কোন দরে ভ্যাট অফিসকে দেখানো হচ্ছে, ডিলারের সঙ্গে লেনদেনের তথ্য যাচাই, কোথা থেকে কাঁচামাল আসে কিংবা যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ হচ্ছে কি না— ভ্যাট অফিসে প্রতি মাসে দাখিল হওয়া রিটার্নের তথ্য মিলিয়ে দেখা হয়। শুধু তাই নয়, মাঝে মাঝে প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে কাছে রক্ষিত কাগজপত্রও পর্যালোচনা করা হয়। তাছাড়া সম্প্রতি কোম্পানির আয়কর ও ভ্যাট ফাঁকি ধরতে গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।

তবে কর আদায়ে এনবিআরের এই শক্ত অবস্থান অনেক ফাঁকিবাজ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। আবার অনেক প্রতিষ্ঠান ফাঁকির আলামতও সরিয়ে ফেলছে বলে অডিটের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা ধারণা করছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, বড়ো ভ্যাট প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সঠিকভাবে ভ্যাট প্রদান করছে কি না, তা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এর বাইরে অতীতে ভ্যাট প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সঠিক হিসাবপত্র দিয়েছে কি না, তাও যাচাই করা হচ্ছে। ফলে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানেরই অনিয়ম বেরিয়ে আসছে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আলামত সরিয়ে ফেলার পর ভিন্ন উপায়ে অনিয়ম বের করা সম্ভব হয়েছে।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, পূর্বে এনবিআরের মাঠ পর্যায়ের ভ্যাট অফিসগুলো কিছু নিয়মমাফিক অডিট কার্যক্রম পরিচালনা করত। তবে গত তিন বছর থেকে তারা তাদের অডিটের ধরন বদলে ফেলেছে। তারা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের লেনদেনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করাসহ বিশদ অডিট কার্যক্রম শুরু করে। ফলে একের পর এক বিশাল অঙ্কের ভ্যাট ফাঁকি ধরা পড়ছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২৯টি প্রতিষ্ঠান অডিট করার মাধ্যমে ১ হাজার ৭৯৮ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি ধরা হয়।

এনবিআরের এই এলটিইউ-ভ্যাট বিভাগের অধীনে বর্তমানে ১৭০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ১৫৬টি প্রতিষ্ঠান এলটিইউতে অফিসে ভ্যাট প্রদান করে। তামাকজাত পণ্যের প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে এ অফিস সবচেয়ে বেশি ভ্যাট আদায় করে। সিগারেট খাতের কোম্পানিগুলোর কাছ থেকেই আদায় হয়েছে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আদায় হয় ২৫ হাজার ৫৪৫ কোটি টাকা।

ওডি/টিএফ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড