এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে বাড়ছে নারীর আগ্রহ

গত তিন মাসে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে নারীদের জমা করা আমানত বেড়েছে ৬০ শতাংশ। আর পুরুষদের আমানত বেড়েছে ৩৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ। ফলে দেখা যাচ্ছে, এই খাতে পুরুষের চেয়ে নারীদের বেশি আগ্রহ বাড়ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু আমানত জমা করার ক্ষেত্রেই নয় এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে হিসাব খোলার ক্ষেত্রেও নারীরা পুরুষদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। ২০১৯ সালের মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে পুরুষদের হিসাব খোলার সংখ্যা বেড়েছে ১৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ। আর নারীদের সংখ্যা বেড়েছে ২০ দশমিক ৩৬ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এই সেবার কল্যাণে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে বিদেশ থেকে প্রবাসী আয়ও সহজে পৌঁছে যাচ্ছে। যেসব ব্যাংক এই সেবায় জোর দিয়েছিল, তারাই বর্তমান তারল্য সঙ্কটের সময়ে একটু ভালো অবস্থানে ও স্বস্তিতে আছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৩ সালে দেশে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার কার্যক্রম শুরু করে মাত্র পাঁচ বছরেই গ্রাহক তৈরি হয়েছে ৩৪ লাখ ১৬ হাজার ৬৭২ জন। তারা জমা করেছেন ৫ হাজার ২৮৪ কোটি টাকারও বেশি পরিমাণ আমানত। সাধারণত একটি ব্যাংকের শাখা পরিচালনা করতে বেশকিছু লোকবল ও মোটা অংকের অর্থ ব্যয় হয়। অথচ একটি ব্যাংক এজেন্টের মাধ্যমে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করলে, তা ব্যাংক ও গ্রাহক উভয়ের জন্যই সহায়ক হয়।

বিভিন্ন ব্যাংকের মনোনীত এজেন্টরা সারাদেশে ৮ হাজার ৬৭১ পয়েন্টে এই সেবা দিচ্ছে। ফলে এই ব্যাংকিং সেবা ইউনিয়নে ইউনিয়নে পাওয়া যাচ্ছে। স্কুলেও বসেছে ব্যাংকিং কার্যক্রম। এজেন্টের মাধ্যমে সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় দেওয়া ভাতাও গ্রামে সহজে পাওয়া যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এ-টু-আই প্রকল্পের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে ইউনিয়ন পর্যায়ে সেবা সম্প্রসারণও করছে অনেক ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রামের প্রত্যন্ত এলাকার যে কেউ যখন তখন ইচ্ছে করলেই লেনদেন করতে পারছেন। যেকোনো প্রয়োজনে দরকার হলে অল্প সময়েই টাকা পাচ্ছেন।’

তিনি বলেন, ‘এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ব্যয়ও সাশ্রয়ী, নিরাপদ ও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর। তাই প্রতিনিয়ত এর প্রসার ঘটছে।’

তথ্য অনুযায়ী, এই সেবায় গ্রাহক তৈরির শীর্ষে রয়েছে ডাচ বাংলা ব্যাংক। এই ব্যাংকটিতে এখন ১৫ লাখ ৩৮ হাজার গ্রাহক রয়েছেন। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ব্যাংক এশিয়া গ্রাহক তৈরি করেছে ১০ লাখ ৬৪ হাজার। আর ইসলামী ব্যাংক সেবাটি চালুর অল্প দিনেই পেয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার গ্রাহক।

শহরের তুলনায় প্রায় ৫ গুণ বেশি গ্রামাঞ্চলে এ ধরনের সেবার হিসাব খোলা হয়েছে। ফলে এর মাধ্যমে ব্যাংক সেবা যে গ্রামে পৌঁছে গেছে, আর নারী হিসাবধারীর তুলনায় পুরুষ হিসাবধারীর সংখ্যাও প্রায় দ্বিগুণ।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, ডাচ বাংলা ব্যাংক গ্রাহক হিসাবের দিক থেকে শীর্ষে থাকলেও ব্যাংক এশিয়া এজেন্ট ও আউটলেট বিস্তৃতিতে শীর্ষে রয়েছে। ব্যাংকটির আউটলেট ২ হাজার ৯৬০টি। আর ডাচ বাংলা ব্যাংকের আউটলেট ২ হাজার ৯৫৩টি। এছাড়া এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের আউটলেট ৫৬৭টি এবং ইসলামী ব্যাংকের আউটলেট ৪৯৯টি।

এ দিকে আমানতের শীর্ষে রয়েছে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, ডাচ বাংলা, ব্যাংক এশিয়া ও ইসলামী ব্যাংক। এছাড়া এজেন্টের মাধ্যমে সাত ব্যাংক ২৩৭ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। এর মধ্যে ব্যাংক এশিয়া ২১০ কোটি টাকা এবং সিটি ব্যাংক ১৫ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত জুন পর্যন্ত এজেন্টদের মাধ্যমে মোট ৯ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকা রেমিটেন্স এসেছে। যেখানে ডাচ বাংলা ৩ হাজার ৫১০ কোটি টাকা, ব্যাংক এশিয়া ২ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক ১ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা, ইসলামী ব্যাংক ১ হাজার ১১২ কোটি টাকা এনেছে।

২০১৩ সালে ব্যাংক এশিয়াকে লাইসেন্স দেওয়ার মাধ্যমে দেশে এজেন্ট ব্যাংকিং শুরু হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে এরই মধ্যে মোট ২১টি বাণিজ্যিক ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের লাইসেন্স পেয়েছে।

সারাদেশে বর্তমানে ১৯টি ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সেগুলো হলো— ডাচ-বাংলা, ব্যাংক এশিয়া, আল-আরাফাহ ইসলামী, সোস্যাল ইসলামী, মধুমতি ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, এনআরবি কমার্শিয়াল, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি, মিডল্যান্ড ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, এবি ব্যাংক এবং এনআরবি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংক।

ওডি/টিএফ