• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩১ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

এসিআই লিমিটেডের আর্থিক তথ্য বিশেষ পর্যবেক্ষণের দাবি ডিএসইর

  অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক

০৩ জুন ২০১৯, ১৮:৪০
এসিআই

রিজার্ভ থেকে সাবসিডারি (সহযোগী) কোম্পানির লোকসান বহন করে নিজেদের লোকসানের কোম্পানি হিসেবে পরিচিত করে তোলায় এসিআই লিমিটেডের আর্থিক তথ্য বিশেষ নিরীক্ষার দাবি জানিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ।

দেশের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে গত ৩০ মে এক চিঠির মাধ্যমে এ দাবি জানানো হয়েছে।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, সরকারের ওপর মহল থেকে পুঁজিবাজার ভালো করার নির্দেশনা রয়েছে। সম্প্রতি স্টেকহোল্ডারদের দাবির প্রেক্ষিতে বেশ কিছু তড়িৎ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এসিআইর বিষয়ে ডিএসইর চিঠি কমিশন গুরুত্বসহকারে নিয়েছে। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে যে ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, তা নেওয়া হবে।

এসিআইর লোকসানের বিষয় খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করে ডিএসই। এসিআইর কাছে ওই তদন্ত কমিটি বছরের পর বছর ধরে রিজার্ভ থেকে সাবসিডারি কোম্পানির লোকসান বহনের কারণ জানতে চায়।

তদন্ত কমিটির প্রশ্নের উত্তরে এসিআই লিমিডেট জানায়- বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) শেয়ারহোল্ডারদের যত লোকসানই হোক, এসিআই লজিস্টিক লিমিটেড (স্বপ্ন) চালিয়ে যেতে বলেছে এবং দেশব্যাপী শাখা বিস্তার করতে বলেছে।

তবে ডিএসইর তদন্ত কমিটি এসিআইর এই ব্যাখ্যাকে অগ্রহণযোগ্য এবং অবিশ্বাসযোগ্য বলে অভিমত দেয়।

ডিএসইর পরিচালক ও তদন্ত কমিটির সদস্য মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, অনেকদিন থেকে বাজারে এসিআই সংক্রান্ত বেশকিছু অভিযোগ আসছে। দীর্ঘদিন ধরে ক্রমবর্ধমান হারে লোকসান বাড়ছে। এ কারণে ক্ষতিগ্রস্ত একজন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী অভিযোগ করেছেন।

একটি কোম্পানি অধিকতর লাভের আশায় সাবসিডারি কোম্পানি করে। একটি নতুন কোম্পানি করলে সাময়িকভাবে সেখানে লোকসান আসতে পারে। কিন্তু এটা যদি এক সময় মূল কোম্পানিকেই খেয়ে ফেলে, তাহলে মূল কোম্পানির শেয়ারহোল্ডাররা কোথায় যাবে? এ বিষয়ে আমরা এসিআইর কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছি, তারও ব্যাখ্যা দিয়েছে। এসিআই যে ব্যাখ্যা দিয়েছে তা অগ্রহণযোগ্য বলে জানান এই পরিচালক।

গত কয়েক বছর ধরে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানি এসিআই লিমিটেডের আর্থিক বিবরণীর তথ্য নিয়ে ডিএসই সন্দেহ প্রকাশ করে এবং গত ফেব্রুয়ারিতে ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ এই তদন্ত কমিটি গঠন করে।

এই তদন্ত কমিটি প্রধানের দায়িত্ব নেন ডিএসইর পরিচালক ও সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি ছিদ্দিকুর রহমান মিয়া। এছাড়া কমিটির সদস্য হিসেবে আছেন ডিএসইর পরিচালক ও সাবেক সভাপতি মো. রকিবুর রহমান, ডিএসইর প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) আবদুল মতিন পাটোয়ারী, পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন, স্বতন্ত্র পরিচালক মনোয়ারা হাকিম আলী এবং প্রফেসর ড. মো. মাসুদুর রহমান।

তদন্ত কমিটির সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এসিআইয়ের সাম্প্রতিক বছরগুলোর আর্থিক বিবরণী মনগড়া ও কারসাজিপূর্ণ বলে তাদের কাছে মনে হয়েছে। এটি ঘৃণিত অনৈতিক কাজ। ভবিষ্যতে যাতে কোনো কোম্পানি এ ধরনের অনৈতিক কাজ করতে না পারে, সেজন্য এসিআইর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করা হবে।

তারা আরও জানান, তালিকাভুক্ত কোম্পানি হলেও এসিআই লিমিটেডের পরিচালকরা যা ইচ্ছা খুশি তাই করতে পারে না। বছরের পর বছর ধরে রিজার্ভ থেকে সাবসিডারি (সহযোগী) কোম্পানির লোকসান বহন করবে তা হতে পারে না। অবশ্যই এ ধরনের অনৈতিক কাজ বন্ধ হওয়া উচিত।

এই কমিটির এক সদস্য বলেন, কোম্পানির সাম্প্রতিক গতিবিধি সন্দেহজনক। সহযোগী প্রতিষ্ঠানের লোকসানের নামে ৩৬ কোটি টাকা মূলধনের কোম্পানিটি ৯০০ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। এটি যেমন বিশ্বাসযোগ্য নয় তেমনি গ্রহণযোগ্যও নয়।, তাদের মালিকেরা স্বপ্নের লোকসান দেখিয়ে কোম্পানি থেকে টাকা সরিয়ে নিচ্ছেন বলে আমাদের সন্দেহ করছি।

তিনি আরও বলেন, গত ১০ বছর ধরে এসিআই তার রিজার্ভ থেকে লোকসানের বিপরীতে ভর্তুকি দিচ্ছে। এটা মেনে নেওয়ার মতো বিষয় নয়। স্বপ্ন যদি সত্যিই এতো লোকসান দিয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই এসিআই কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল সেটি বন্ধ করে দেওয়া। এটি একটি তালিকাভুক্ত কোম্পানি। শেয়ারহোল্ডাররাও এ কোম্পানির একাংশের মালিক। তাদের অর্থ নিয়ে নয়-ছয় করার অধিকার কারো নেই।

প্রসঙ্গত, এসিআই গত জানুয়ারিতে চলতি হিসাব বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের (২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এ সময় তারা পাঁচ কোটি ৪৪ লাখ টাকা লোকসান দেখায়। আর শেয়ার প্রতি লোকসান দেখানো হয় ৭৮ পয়সা। অথচ গত বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটি ৩০ কোটি ১৩ লাখ টাকা মুনাফা করেছিল। সে বছর ৫ টাকা ৪৪ পয়সা ইপিএস দেখানো হয়েছিল।

এ ঘটনার পর এসিআইর লোকসানের বিষয়টি পুঁজিবাজারে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও ডিএসইতে বিষয়টি খতিয়ে দেখানোর জন্য আবেদন করা হয়। পরবর্তীতে ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের সভায় এসিআই-এর আর্থিক বিষয়গুলো তদন্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং তদন্ত কমিটি গঠন করে।

ওডি/টিএফ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড