• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

আমেরিকান পোকায় খাচ্ছে চুয়াডাঙ্গার ক্ষেত

  চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি

১৯ জানুয়ারি ২০১৯, ১৪:১৩
ভুট্টা ক্ষেত
চুয়াডাঙ্গার ভুট্টা ক্ষেতে ‘ফল আর্মি ওয়ার্ম’ এর প্রকোপ (ছবি : সংগৃহীত)

আমেরিকা মহাদেশের মারাত্মক ক্ষতিকারক পোকা ‘ফল আর্মি ওয়ার্ম’। ফসলের জন্য বিধ্বংসী এই পোকা আমেরিকা, আফ্রিকার পর ভারত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এর মধ্যে আফ্রিকায় তো দুর্ভিক্ষেরই সৃষ্টি করেছে পোকাটি।

গত ২২ ডিসেম্বর চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার গোবিন্দহুদা গ্রামের একটি ভুট্টাক্ষেতে ভয়াবহ এ পোকার অস্তিত্ব ধরা পড়ে। পোকাটি এতটাই ভয়াবহ যে মুহূর্তেই ক্ষেতের পর ক্ষেতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত ক্ষেতের পরিমাণ। কোনো প্রতিষেধক ব্যবহার করেই প্রতিকার মিলছে না বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পোকাটির কারণে প্রথমেই ধ্বংসের মুখে পড়বে দেশের ভুট্টা চাষ। এরপর ছড়িয়ে পড়বে ধান-গমসহ অন্য ফসলে। অল্প সময়ে দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় হুমকি হয়ে দাঁড়াবে ‘ফল আর্মি ওয়ার্ম’ এর কারণে। তবে, কৃষি বিভাগ বলছে, ফল আর্মি ওয়ার্ম প্রতিরোধে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রস্তুতি নিয়েছে তারা।

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার গোবিন্দহুদা গ্রামের কৃষক রবজেল মন্ডল জানান, গত কয়েক বছর ধরে নেক ব্লাস্টের কারণে গম আবাদ করা যাচ্ছে না। ধান ও পাটের আবাদে ধারাবাহিক লোকশান গুণতে হচ্ছে। শুধুমাত্র ভুট্টা আবাদই তার মতো হাজার হাজার কৃষকদের বাঁচিয়ে রেখেছিল। কিন্তু এখন ‘ফল আর্মি ওয়ার্মে’ সেটিও ধ্বংস হলে পরিবার নিয়ে পথে বসতে হবে।

একই কথা বলেন উপজেলার রামনগর গ্রামের ভুট্টা চাষি সবদুল আলী তার মতে, এখনই ফসলের জন্য এ পোকা দমনে সরকারি পদক্ষেপ দরকার। তা না হলে ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে কৃষকেদের।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. খন্দকার শরিফুল ইসলাম জানান, ফল আর্মি ওয়ার্ম বাংলাদেশে একেবারেই অপরিচিত পোকা। এতদিন দেখা যেত আমেরিকা আর কানাডায়। এই পোকা পাতা ও কান্ড খেয়ে ফেলে নষ্ট করে ফসল। পাড়ি দিতে পারে দিনে ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি পথ। ২০১৭ সালে আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে বেশ কয়েকটি দেশে খাদ্যশস্য নষ্ট করে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টির জন্যও দায়ী পোকাটি। তিনি আরও জানান, পোকাটির সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর দিক হলো, এরা দ্রুত বংশবিস্তার করতে পারে। একদিনে জন্মগ্রহণ করে কয়েক হাজার বাচ্চা।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক কৃষিবিদ সুফি রফিকুজ্জামান জানান, গত বছরের ৩০ নভেম্বর চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার গোবিন্দহুদা গ্রামের কৃষক গোলাম মল্লিকের ভুট্টাক্ষেতে প্রথম ধরা পড়ে এ ভয়াবহ পোকার অস্তিত্ব। পরে পোকাটির নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকাতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর ২২ ডিসেম্বর নিশ্চিত হওয়া যায় এটিই ভুট্টা-ধানসহ ৮০ ধরনের ফসলের জন্য মরণঘাতী ‘ফল আর্মি ওয়ার্ম’।

দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামিউর রহমান জানান, ফল আর্মি ওয়ার্ম নির্মূলে তারা দিনরাত কাজ করছেন। স্থানীয় কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তার মতে, পোকাটি গরমকালে দ্রুতবেগে বংশবিস্তারে সক্ষম হলেও শীতে ভয়াবহতা কম। আর এ কারণে আক্রান্ত হওয়ার পরও পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে আতঙ্কিত না হবার পরামর্শ দিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক ড. মো. আব্দুল মুঈদ জানান, পোকাটি দমনে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড