• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৪ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

চট্টগ্রাম বন্দর

পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে পদে পদে বাধা

  অধিকার ডেস্ক    ১৩ মে ২০১৮, ১৫:৫২

চট্টগ্রাম বন্দরে অবৈধ আর্থিক লেনদেন ও সময়ক্ষেপণসহ নানা বাধা অতিক্রম করে পণ্য আমদানি-রপ্তানি করতে হচ্ছে। এত অভ্যন্তরীণ বাজারে পণ্যের মূল্য বেড়ে যাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ভোক্তাশ্রেণি। আমদানি-রফতানি কার্যক্রমে এমন ১৮টি ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা বাধার সম্মুখীন হন বলে জানা গেছে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের সাম্প্রতিক একটি জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। দুদকের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বঙ্গোপসাগরের বহির্নোঙরে জাহাজ প্রবেশ থেকে শুরু করে বন্দরে পণ্য খালাস পর্যন্ত বেশ কয়েকটি ধাপ পেরোতে হয়। এসব ধাপে পেরতে নানা ধরনের প্রতি বাধার সম্মুখীন হতে হয়।

দুদকের এ জরিপে অংশ নেয়া ৮০ শতাংশ ব্যবসায়ী বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ছাড়করণ প্রক্রিয়ায় মোট ১১টি ক্ষেত্রে তারা বাধার মুখে পড়ছেন। এগুলো হলো— চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের রাসায়নিক পরীক্ষাগার কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতি, বহির্নোঙরে জাহাজ আসার পর দ্রুত বার্থিং পেতে সংশ্লিষ্ট বন্দর কর্মকর্তাদের অবৈধ আর্থিক লেনদেন, কাস্টমস সার্ভারের ধীরগতি, বন্দরে প্রয়োজনীয় সংখ্যক যন্ত্রপাতির (ফর্ক লিফট, ক্রেন, হাইস্টার প্রভৃতি) অভাব, বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভার ত্রুটি ও একটি মাত্র বাণিজ্যিক ব্যাংকের উপস্থিতি, কর্মকর্তার পাশাপাশি বন্দর ও কাস্টমস কর্মচারী কর্তৃক হয়রানি, বন্দরে এলসিএল কনটেইনারের (একই কনটেইনারে বিভিন্ন আমদানিকারকের পণ্য) পণ্যে আনস্টাফিংয়ে অতিরিক্ত সময়ক্ষেপণ, বন্দর ও কাস্টমসে সৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীর স্বল্পতা এবং প্রায় প্রতিটি পর্যায়ে অতিরিক্ত টাকার লেনদেন, শিপিং এজেন্টদের স্বেচ্ছাচার ও বিভিন্ন সময়ে অতিরিক্ত অর্থ দাবি, বন্দরের অভ্যন্তরে কায়িক ও রাসায়নিক পরীক্ষায় অতিরিক্ত সময়ক্ষেপণ।

দুর্নীতিমুক্ত ও মানসম্মত সেবা প্রদান নিশ্চিতকরণ এ জরিপের মূল বিষয় ছিল। বন্দর ব্যবহারকারী আমদানি-রফতানিকারক, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও ফ্রেইট ফরোয়ার্ডারসদের ওপর মোট ছয় ধরনের প্রশ্নের ভিত্তিতে জরিপটি সম্পন্ন করা হয়। এতে ব্যবসায়ীদের হয়রানির ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করার পাশাপাশি সমস্যা সমাধানে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে ১০টি সুপারিশও তুলে ধরা হয়েছে।

আমদানি ছাড়াও এ জরিপ রফতানি কার্যক্রমের সাতটি প্রতিবন্ধকতার বিষয় তুলে এনেছে। এগুলো হলো— রফতানিমুখী পণ্য জাহাজীকরণ করার সময় টাকা ছাড়া শুল্কায়ন না হওয়া, বন্দরের বিভিন্ন স্থানে হয়রানি ও সময়ক্ষেপণের ফলে নির্দিষ্ট পণ্যের জাহাজীকরণ বাধাগ্রস্ত হওয়া, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনলাইন সমস্যা, ই-এক্সপি সময়মতো অনলাইনে না থাকা, বন্ধের দিনে অথরাইজড ডিলার ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংক বন্ধ থাকার কারণে রফতানি প্রক্রিয়ায় সময়ক্ষেপণ, অফডকগুলোয় সময়মতো পণ্য আনলোড না করা, চট্টগ্রাম কাস্টমসের সার্ভারে ধীরগতি।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর জুলফিকার আজিজ এ বিষয়ে বলেন, আমদানি-রফতানি কার্যক্রমে বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কয়েকটি সহায়ক প্রতিষ্ঠান সম্পৃক্ত থাকে। কাজের গতিপ্রবাহ ঠিক রাখতে প্রতিটি সংস্থাকে নিজ নিজ ক্ষেত্রে সঠিক ভূমিকা রাখতে হবে। বন্দরে গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতির যে সংকটের কথা বলা হচ্ছে, তা ধাপে ধাপে কাটিয়ে উঠতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। অফডকগুলোর (বেসরকারি আইসিডি) কার্যক্রম তদারকির জন্য আলাদা কমিটি গঠন করা হয়েছে।

জরিপে শুধু আমদানি-রফতানি কার্যক্রমে বাধাগুলো না পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বেশকিছু সুপারিশও উঠে এসেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে— চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমসে সৎ, দক্ষ ও যোগ্য কর্মকর্তাদের দিয়ে পণ্যের নোটিং করানো এবং পণ্য খালাসে ৪৮ ঘণ্টা সময় নির্ধারণের মাধ্যমে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, অনলাইনে সব দপ্তরের ইন্সপেকশন সার্টিফিকেট প্রাপ্তির ব্যবস্থা করা, চট্টগ্রাম কাস্টমস ও বন্দরসংশ্লিষ্ট আগ্রাবাদ এলাকার সব ব্যাংক ও শিপিং এজেন্ট প্রতিদিন কমপক্ষে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা রাখার ব্যবস্থা করা, কাস্টমসের প্রতিটি শুল্কায়ন শাখায় কর্মকর্তার সংখ্যা বাড়ানো ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মাধ্যমে তদারকি জোরদার করা, প্রতিটি বিভাগে আলাদা মনিটরিং সেল গঠন করা, অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সার্ভার আপগ্রেড করা ও চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে নিজস্ব সার্ভার স্থাপন করা, বন্দরের যন্ত্রপাতির স্বল্পতা দূর করা এবং বন্দরের হাইস্টার ও ক্রেন অপারেটরদের কাজে তদারকি জোরদার করা।

এ ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, দেশের অর্থনীতির গতিপ্রবাহ ঠিক রাখার ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বন্দর ও চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ দুটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা। মূলত দুর্নীতিমুক্ত ও মানসম্মত সেবা প্রদান নিশ্চিত করতে এ জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। পাশাপাশি বাণিজ্যের অনুকূল পরিবেশ ও রাজস্ব আহরণ বাড়ানোও এ কার্যক্রমের উদ্দেশ্য।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড