• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

একজন বিনয়ী সফল উদ্যোক্তা রাজ্জাক খান 

  নিজস্ব প্রতিবেদক

২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৮:৪০
মিনিস্টার-মাইওয়ান গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ রাজ্জাক খান
মিনিস্টার-মাইওয়ান গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ রাজ্জাক খান

বর্তমানে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ‘মিনিস্টার হাইটেক পার্ক লিমিটেড’। ২০০২ সালে উদ্যোগের শুরু। মাত্র পাঁচ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন এম এ রাজ্জাক খান।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ১৫শ বর্গফুটের একটি ভাড়া বাসায় পাঁচজন কর্মী আর নিজের শ্রম মিলে যাত্রা শুরু । প্রথম দিকে খুচরা যন্ত্রপাতি কিনে তা দিয়ে ১৪ ও ১৭ ইঞ্চি সাদা-কালো টেলিভিশন তৈরি করে বাজারজাত করেন। কালের পরিক্রমায় দেশীয় এ প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে সরাসরি জড়িত পাঁচ হাজার সদস্যের একটি পরিবারে পরিণত হয়েছে।

প্রতিষ্ঠাতা এম.এ.রাজ্জাক খান রাজের নেতৃত্বে মাইওয়ান থেকে জন্ম নিয়েছে ‘মিনিস্টার হাইটেক পার্ক লিমিটেড’। প্রায় দুই দশকের দীর্ঘ এই পথ চলা কেমন ছিল, তা দৈনিক অধিকারের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন এম এ রাজ্জাক খান।

মাইওয়ানের শুরুটা কীভাবে হয়েছিল?

‘চুয়াডাঙ্গাতে উচ্চ মাধ্যমিক শেষে উচ্চতর শিক্ষার জন্য ১৯৯৫ সালে আমি সিঙ্গাপুর চলে যাই । কিন্তু সবসময়ই ইচ্ছে ছিল দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কিছু করার। সেই লক্ষ্যেই ১৯৯৯ সালে দেশে চলে আসি। দেশে আসার পর সে সময় বিশ্বমানের একটি দেশীয় ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ডের অভাব বোধ করি। এভাবেই আসলে আমাদের শুরু। আমিসহ পাঁচজন মিলে ‘মাইওয়ান’ এর যাত্রা শুরু করি। তখন আমাদের মূলধন ছিল মাত্র পাঁচ লাখ টাকা। তখন মূলত অ্যাসেম্বলি (সংযোজন) করতাম। এরপর আস্তে আস্তে নিজেরাই ম্যানুফ্যাকচারিং (উৎপাদন) শুরু করি। শুরুটাই হয়েছিল স্কেডিং-এর মাধ্যমে। তারপর আমরা নিয়ে আসি কালার টেলিভিশন, আস্তে আস্তে ফ্রিজ এবং এয়ার কন্ডিশনের দিকে আমরা ধাবিত হই।’

‘প্রাথমিকভাবে আমরা মাইওয়ান নামে পরিচিত হলেও আমরা সমানে ভাবতে থাকি কীভাবে নতুন নামে মানুষের আরও কাছে পৌঁছানো যায়। তখন আসলে আমরা মিনিস্টার নামটি বেছে নেই। যা আল্লাহর রহমতে এখন সকলের কাছেই সমাদৃত।’

প্রোডাক্টের নাম কেন মিনিস্টার?

‘শুরুতেই আমরা ‘মাইওয়ান ইলেকট্রনিক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’নামে যাত্রা করি। তবে প্রথম দিক থেকেই আমরা আরও একটি নাম খুঁজছিলাম যা আমাদের সাধারণ মানুষের আরও কাছে নিয়ে যাবে। তখন ‘মিনিস্টার’ নামটা আমাদের খুব পছন্দ হয়েছে। এর অর্থ মানুষের জন্য কাজ করা। আর প্রেসিডেন্ট নামের তো একটি ব্র্যান্ড তো ইতোমধ্যে প্রসিদ্ধ। তাই আমি ভেবেছি আমরা মিনিস্টার নামটি আমাদের জন্য পারফেক্ট। এটাই আমাদের ব্যবসার মটো। তাই এই নামই দিয়েছি। এখন আমাদের ‘মিনিস্টার হাইটেক পার্ক লিমিটেড’নামের প্রতিষ্ঠানটি দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে।’

‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই বার আমাদের প্যাভেলিয়নে এসে ছিলেন। দুই বারই তিনি আমাকে একই প্রশ্ন করেছিলেন যে, মিনিস্টার নামটা দেওয়ার কারণ কি? প্রধানমন্ত্রীকেও আমি একই উত্তর দিয়েছি, উনি আমার উত্তরে হেসে দিয়েছেন। তিনি আমাদের ব্র্যান্ড নিয়ে যথেষ্টই আশাবাদী এবং আমাদের ব্র্যান্ড দেশের বাহিরে এক্সপোর্ট করার কথাও বলেছেন।’

কবে নাগাদ এক্সপোর্টে যাচ্ছেন?

‘কোভিড-১৯’ পরিস্থিতির আগে আমরা ব্যাপকভাবে কাজ করেছি এক্সপোর্টে যাবার জন্য। কিন্তু করোনা আক্রমণের ফলে আসলে সব ধরনের ব্যবসায়ী কার্যক্রমই থেমে গিয়েছে। কিন্তু এর আগে তুরস্ক থেকে ১০ সদস্যের একটি বড় টিম আমাদের ফ্যাক্টরি ভিজিট করে গিয়েছে। এছাড়াও আমি নেপাল, আয়ারল্যান্ড, দুবাই, যুক্তরাষ্ট্র এর মত দেশগুলোতেও এক্সপোর্ট নিয়ে কাজ করেছি। আমরা সকল ধরনের প্রস্তুতির কাজ শেষ করেছি। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমরা আবার আমাদের এক্সপোর্ট খাতকে আরও সুগঠিত কাঠামো দিতে পারব।’

‘বর্তমানে আমরা দশ হাজার লোকের কর্মসংস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের লক্ষ্য আগামী ১০ বছর অর্থাৎ ২০৩০ সাল নাগাদ ১ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করব। পারিবারিকভাবেই আসলে আমার ব্যবসায়ী হওয়া অনেকটাই নিশ্চিত ছিল। আমার দাদা ব্যবসায়ী ছিলেন দাদার থেকে এই ধারা আমার বাবার মাঝে আসে এবং তারপর পারিবারিক ধারাটা আমি অব্যাহত রেখেছি। আমার ব্যবসায়ীক রোলমডেল আমার বাবা, আমি ওনাকেই অনুসরণ করি। আর আমাদের মন্ত্রী পরিষদের অনেকেই আমাকে বিভিন্ন জায়গায় অনেকভাবে সাহায্য করেছেন এবং পথ প্রদর্শক হিসেবে পাশে থেকেছেন।’

কখনো কী মনে হয়েছে, যে আপনি রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় হবেন?

‘আমার জীবনের শুরু থেকেই আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত। আমি স্কুল জীবন থেকেই ছাত্রলীগের সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম। উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবর্ষে থাকা অবস্থায়ই ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। আমি সবসময়ই বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করে বড় বড় রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সাথে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করে গিয়েছি। এছাড়া ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮, ২০১৪ সহ সকল নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর পক্ষ থেকে প্রচারণায় প্রত্যক্ষভাবে আমি অংশগ্রহণ করেছি।’

‘একটা কথা না বললেই না, আমি ঢাকা-১৮ উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের নমিনেশন প্রত্যাশী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছি। যেখানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন আপা ছিলেন ঢাকা-১৮ আসনের সাংসদ। তিনি জ্বর, অ্যালার্জিসহ বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ৯ জুলাই রাতে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে মারা গেলে এ আসনটি শূন্য হয়। আমার নিজেরও ইচ্ছে ছিল একসময় নির্বাচন করব। দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাবো। এখন বাকিটা আমাদের জননেত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছা।’

আপনি যেহেতু নির্বাচন করতে ইচ্ছুক, আপনার এলাকায় আপনার পরিচিতি কতটুকু?

আমি আমার দেশীয় ব্র্যান্ড নিয়ে মানুষের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে সক্ষম হয়েছি। এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক কাজ কর্মের মাধ্যমে আমি নিজেকে মানুষের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছি। করোনা পরিস্থিতিতেও আমি রাজধানীসহ আমার আবাস্থল উত্তরা, বন্যাদুর্গত এলাকা এবং আমার গ্রামে প্রচুর পরিমাণ ত্রাণ বিতরণ করেছি। এর পাশাপাশি বিনামূল্যে মিনিস্টারের উৎপাদিত মাস্ক, স্যানিটাইজারের মত বিভিন্ন সুরক্ষা পণ্য বিতরণ করেছি। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে ডিজইনফেক্ট বুথ স্থাপন করেছি। এছাড়াও বিগত সময়ে দেশের মানুষের জন্যে সরকারের সাথেও কাজ করেছি এবং করে যাচ্ছি।

ব্যবসায় প্রতিবন্ধকতা এবং করোনাকালীন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ কী?

আসলে এখন এই করোনা পরিস্থিতির ধাক্কা পুরো বিশ্বের অর্থনীতিতে নাজেহাল করে দিয়েছে। আমাদের দেশও এর ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু তার পরেও ৩ মাস আগে যেমন স্থবিরতা বিরাজ করছিল। এখন তেমনটা নেই। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের দেশের সকল ব্যবসায়ী খাতের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা করেছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমরা প্রধানমন্ত্রীর থেকে আশানুরূপ সাহায্য পেয়েছি । তারপরেও এই সাহায্য আমাদের হাতে আসার আগের প্রক্রিয়ায় একটু সমস্যা দেখা দিলেও তা যে খুব গুরুতর ছিল এমনটা বলবো না। আমরা সবাই মিলে একজোট হয়ে কাজ করে আমাদের অর্থনীতির চাকা সচল করতে সক্ষম হয়েছি। ব্যাংকগুলোও কিন্তু এখন আর নতুন কোন ইনভেস্টমেন্টে যেতে চাচ্ছে না। যার দারুণ এখনও কিছু কিছু ব্যবসায়ীদের ঘুরে দাঁড়াতে সমস্যা হচ্ছে। আমাদের সকলেরই উচিত এই সমস্যা থেকে উত্তরণে একযোগে কাজ করে যাওয়া।

নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?

আমার একটাই পরামর্শ থাকবে আর সেটি হচ্ছে— উদ্যোক্তা হতে গেলে প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি এবং সাহস থাকতে হবে। নিজের ইচ্ছা অর্থাৎ লক্ষ্যের ওপর বিশ্বাস রেখে সাহসের সঙ্গে কাজ করে যেতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড