• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

একশনএইড বাংলাদেশের কলোকিয়ামের অনুষ্ঠানে

নারীবান্ধব বাজার নিশ্চিতের দাবি

  নিজস্ব প্রতিবেদক

১৯ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৫:১৬
একশনএইড বাংলাদেশের ন্যাশনাল কলোকিয়ামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা
একশনএইড বাংলাদেশের ন্যাশনাল কলোকিয়ামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা (ছবি : সংগৃহীত)

বাংলাদেশের গ্রামীণ নারীদের উদ্যোক্তা হওয়ার বিশাল সম্ভাবনা থাকলেও নানা প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর গুলশানে ‘বাজার ব্যবস্থাপনা এবং নারী কৃষি উদ্যোক্তা’ নিয়ে একশনএইড বাংলাদেশের ন্যাশনাল কলোকিয়ামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এমন মন্তব্য করেন বক্তারা।

বক্তারা বলেন, গ্রামীণ নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিতের জন্য নিরাপদ ও নারীবান্ধব বাজার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সেই সাথে নারীদের সরাসরি বাজার ব্যবস্থায় অংশগ্রহণও নিশ্চিত করতে হবে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. শেখ আজিজুর রহমান বলেন, দেশের অগ্রগতিতে নারীদের অবদান অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। নারী উদ্যোক্তাদের সহায়তায় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সব সময় তৎপর।

তিনি বলেন, পোল্ট্রি খাতের পাশাপাশি ডেইরি খাতেও রয়েছে নারী উদ্যোক্তাদের কাজ করার বিশাল সম্ভাবনা। তাই উৎপাদিত পণ্যের বিপণন জোরদার করা জরুরি। উদ্যোক্তাদের মধ্যে এই বিষয়ে সচেতনতা এবং দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে। তবে শুধু সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগও প্রয়োজন।

অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী পর্বে নিজের সংগ্রামের গল্প তুলে ধরেন পটুয়াখালীর রাশিদা বেগম।

সফল এই গ্রামীণ নারী উদ্যোক্তা বলেন, স্থানীয় বাজারে উৎপাদিত পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় আমাদের। আগে সরাসরি মূল বাজারে গিয়ে বিক্রি করার সুযোগ না থাকায় মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে নারী কৃষক ও উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত ছিল একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু বর্তমানে সেই অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে।

সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, নারী কৃষকদের মূল বাজার ব্যবস্থার সাথে সরাসরি যোগসূত্র তৈরির মাধ্যমে নারী কৃষকদের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিতের দাবি জানাই।

আরেক নারী উদ্যোক্তা হালিমা বেগম বলেন, ‘একশনএইড বাংলাদেশ’-এর মেকিং মার্কেট ওয়ার্ক ফর উইমেন (এমএমডাব্লিউডাব্লিউ) প্রকল্পের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তিনি সবজি চাষ শুরু করি। পরবর্তীতে স্থানীয় প্রশাসন ও ‘একশনএইড বাংলাদেশ’-এর সহায়তায় তিনটি কালেকশন পয়েন্টের মাধ্যমে উৎপাদিত সবজি বিক্রয় করে অর্থ উপার্জনে সক্ষম হই।

ন্যাশনাল কলোকিয়ামে নারী উদ্যোক্তাদের স্টলে কৃষিপণ্য

বগুড়ার নারী উদ্যোক্তা শিরিন বেগম জানান, গ্রামীণ নারীরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হলে একদিকে যেমন নির্যাতনের শিকার হওয়া থেকে রক্ষা পাবে তেমনি নারী-পুরুষ উভয়ের উপার্জনে সংসারে আসবে সমৃদ্ধি। যেমন- আমার মাসিক আয় বর্তমানে ১৫-২০ হাজার টাকা। এই অর্থ আমি আমার সন্তানের শিক্ষা ও সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ করতে পারছি।

উদ্বোধনী আলোচনায় আরও বক্তব্য রাখেন ‘ওয়ার্ল্ড ভিশন’-এর প্রোগ্রাম পরিচালক টনি এম গোমেজ।

টনি গোমেজ বলেন, অর্থনৈতিকভাবে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে আর এর পেছনে ভূমিকা রাখছে নারীর ক্ষমতায়ন ও মানসিকতার ইতিবাচক পরিবর্তন। নারীরা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করার মধ্য দিয়ে এই পরিবর্তন আসছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সুনিশ্চিত করতে প্রয়োজন মানসিকতার পরিবর্তন। পাশাপাশি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর বৃহত্তর অংশগ্রহণ ও সমতা নিশ্চিত করতে হবে। বাজার ব্যবস্থাকে নারীবান্ধব করে গড়ে তুলতে হবে।

এসকেএস ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রাসেল আহমেদ লিটন বলেন, গ্রামীণ নারীদের আগ্রহ থাকলেও উপযুক্ত পরিবেশ ও সুযোগের অভাবে তারা মূল বাজারের সাথে যুক্ত হতে পারেন না। দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও তারা জানতেন না কীভাবে সেই দক্ষতা কাজে লাগিয়ে আয়-উপার্জন করা যায়, অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া যায়। এই কর্মসূচির আওতায় নারীদের বাজার ও ব্যাংকের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এই কর্মসূচির মাধ্যমে প্রায় এক হাজার পরিবারে নারী উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে যারা শুধু নিজেদের ক্ষমতায়নই নিশ্চিত করেনি বরং অন্যান্যদের জন্যও কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছেন। যার ফলে উন্নয়ন ঘটেছে ছয় হাজারেরও বেশি পরিবারের।

‘একশনএইড বাংলাদেশ’-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, বাংলাদেশের নারীরা অনেক সচেতন এবং অবস্থার উন্নয়নেও তারা অনেক বেশি সচেষ্ট। কিন্তু তাদের জন্য নেই পর্যাপ্ত বাজার ব্যবস্থাপনা। আমাদের গ্রামীণ কৃষি উদ্যোক্তারা, বিশেষ করে নারীরা যেন উপযুক্ত পরিবেশ পায় এবং বাজার ব্যবস্থাপনায় সরাসরি অংশ নিতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারি ও বেসরকারি উভয় পক্ষকে কাজ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘একশনএইড বাংলাদেশ’-এর মেকিং মার্কেট ওয়ার্ক ফর উইমেন (এমএমডব্লিউডব্লিউ) প্রকল্প বর্তমান বাজার ব্যবস্থায় নারী উদ্যোক্তারা যাতে তাদের ব্যবসা ভালোভাবে এবং বাধাহীনভাবে পরিচালনা করতে পারেন তার জন্য কাজ করে আসছে। প্রকল্পের চার বছরের শেষ পর্যায়ে এসে নারী উদ্যোক্তাদের সক্ষমতার বৃদ্ধির লক্ষ্যে মার্কেট লিটারেসি, ব্যবসা ও হিসাব ব্যবস্থাপনা এবং বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রদান করা সম্পন্ন হয়েছে।

ফারাহ্ কবির বলেন, পুষ্টি এবং যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার বিষয়ে নারী উদ্যোক্তাদের তথা কমিউনিটি পর্যায়ে সচেতন করা হয়েছে। একইসাথে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি ও সরকারি সেবাসমূহের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করিয়ে দেওয়া হয়েছে যাতে করে প্রয়োজনে সেবা প্রাপ্তির বিষয়গুলো নিশ্চিত হয়। জাতীয় কলোকিয়ামটি একই ধরনের কাজ করা সংগঠনগুলোর সাথে বাজার ব্যবস্থায় অংশগ্রহণকারী অ্যাক্টরদের সাথে সমন্বয় সাধন এবং শিখন বিনিময়ের মাধ্যমে সমঝোতার লক্ষ্যে আয়োজন করে।

ওডি/এমআই

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড