নিজস্ব প্রতিবেদক
মালয়েশিয়ার একটি ও থাইল্যান্ডের দুইটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামীমা নুর পাপিয়া ওরফে পিউ ও তার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমনের প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা জমা রয়েছে। রাজধানীর পাঁচতারকা হোটেলগুলোতে সুন্দরী তরুণী মেয়েদের দিয়ে অনৈতিক কাজ করানোর পাশাপাশি তাদের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন তিনি। রিমান্ডে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে এই তথ্য দিয়েছেন পাপিয়া।
সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইমের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, অনুসন্ধানে বিষয়টির প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে।
জিজ্ঞাসাবাদে একের পর এক অপকর্মের চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়ে চলেছেন পাপিয়া। সেই তথ্যের সূত্র ধরে যেসব সুন্দরী নারী পাপিয়ার মাধ্যমে বিদেশ থেকে দেশে আসতেন ও দেশ থেকে বিদেশ যেতেন, তাদের নামের একটি তালিকা করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অর্গানাইজড ক্রাইমের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, পাপিয়ার বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থপাচারের বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। বিভিন্ন সংস্থা থেকে আরও কিছু তথ্য আসবে। পাপিয়ার অপকর্মের সঙ্গে জড়িতদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।
তিনি বলেন, পাপিয়ার সঙ্গে আরও অনেক রাঘববোয়াল জড়িত আছে। যারাই তার সঙ্গে জড়িত থাকুক, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
জিজ্ঞাসাবাদে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের কাছে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারের কথা স্বীকার করেছেন পাপিয়া-সুমন দম্পতি।
আরও পড়ুন : ডিবির কাছে নতুন তথ্য দিল পাপিয়া
এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংক শামীমা নুর পাপিয়ার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তলব করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকে এ সংক্রান্ত চিঠি তফসিলি ব্যাংকগুলোতে পাঠানো হয়।
রিমান্ডে থাকা পাপিয়া শুধু দেশেই পাপের আস্তানা গড়ে তোলেননি। মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডেও পাপের আস্তানা গড়ে তুলেছেন তিনি। বাংলাদেশের বাইরে এই আস্তানাগুলোতে প্রভাবশালীদের নিয়মিত যাতায়াত ছিল। এর মধ্যে থাইল্যান্ডে পাপিয়ার নিজের নামে থাকা বাড়িতেই অতিথিদের আনন্দ-ফুর্তির নানা আয়োজন থাকত। ওই বাড়িটির নিচতলায় পাপিয়ার স্বামী মফিজুর রহমানের একটি মদের বার রয়েছে। আর অতিথি হয়ে থাইল্যান্ডে যাওয়া প্রভাবশালীদের মাধ্যমেই অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা পাচার করেছেন এই দম্পতি।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গ্রেপ্তারের পর পাপিয়া-সুমন দম্পতির বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে একটি মানি লন্ডারিংয়ের ধারায়। এ মামলাটি তদন্ত করছে সিআইডি। তথ্য-প্রমাণ পেলে পাপিয়া-সুমনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিগগিরই তাদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করার জন্য আদালতে আবেদন করা হবে।
বহিষ্কৃত যুব লীগ নেত্রী পাপিয়ার ব্যাংক হিসাব তলব ও অর্থ পাচারের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে যদিও কেউ কোনো ধরনের মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে দেশত্যাগের সময় পাপিয়াসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। গ্রেপ্তারের পর শেরে বাংলা নগর থানায় দুটি এবং বিমানবন্দর থানায় একটি মামলা করা হয়।
পৃথক তিন মামলায় পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান ১৫ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন। রিমান্ডে পাপিয়া তার বিভিন্ন অপকর্মের বিষয়ে অবাক করার মতো নতুন নতুন তথ্য দিচ্ছেন। এছাড়াও তাদের সহযোগী সাব্বির খন্দকার ও শেখ তায়্যিবাকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। ৫ দিনের রিমান্ড শেষে এ দুইজনকে ফের ৫ দিনের রিমান্ড দেন আদালত।
ওডি/টিএএফ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড