• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বন্ধ হচ্ছে না ঝালকাঠিতে ইলিশ শিকার

‘আমরা পাহারা দিচ্ছি জেলেদের, তারা পাহারা দিচ্ছে আমাদের’ 

  হাসান আরেফিন, ঝালকাঠি

২৩ অক্টোবর ২০১৯, ১৬:৫৯
সরকারি সহায়তা অপ্রতুল হওয়ায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ ধরছেন জেলারা
সরকারি সহায়তা অপ্রতুল হওয়ায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ ধরছেন জেলারা (ছবি : দৈনিক অধিকার)

ঝালকাঠিতে নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন ৫ হাজার ২৬৫ জন, এর মধ্যে সরকারি সহায়তা পান মাত্র ১ হাজার ৪৬০ জন। যা জেলেদের মোট সংখ্যার চার ভাগের এক ভাগ। তাও আবার শুধু ২০ কেজি করে চাল। এ অবস্থায় কিছু জেলা বাধ্য হয়ে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে ইলিশ শিকার করছে। মৎস কর্মকর্তাদের ভাষ্য, আমরা পাহারা দিচ্ছি জেলেদের আর ওইসব জেলেরা পাহারা দিচ্ছে আমাদের।

জেলা মৎস্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ঝালকাঠি জেলার চার উপজেলায় জেলে রয়েছেন ৫ হাজার ২৬৫ জন। এদের মধ্যে ভিজিডির চাল ২০ কেজি করে ২২ দিনের জন্য দেওয়া হচ্ছে ১ হাজার ৪৬০ জনকে। যা প্রতিদিন গড়ে ১ কেজিরও কম চাল ভাগে পড়ে।

এ অবস্থায় ক্ষোভ প্রকাশ করে জেলারা বলেন, আমাদের একমাত্র উপার্জনের মাধ্যম হলো নদীতে জাল ফেলে ইলিশ ধরা। ঝালকাঠি জেলায় প্রকৃত পেশাদার জেলেদের সংখ্যার চেয়ে সহায়তার জন্য বরাদ্দ চার ভাগের এক ভাগ। মা ইলিশ নিধন নিষেধাজ্ঞার সময় ৯ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত। এ ২২ দিনে সরকারি প্রণোদনা হিসেবে দিচ্ছে ২০ কেজি করে শুধু ভিজিডি এর চাল। তাহলে অন্যান্য তেল, মসলা ও তরকারি পাব কোথায়? শুধু চালে কি পেট ভরে?

ক্ষুব্ধ জেলেরা অভিযোগ করে বলেন, সরকার ভিজিডি চালের সহায়তার পরিমাণ ও সংখ্যা বাড়িয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যও যদি সহায়তা দিতো তাহলে তাদের আর দুঃখ থাকতো না।

জানা গেছে, ইলিশ সামুদ্রিক মাছ হলেও প্রজনন মৌসুমে ডিম ছাড়ার জন্য মিঠাপানিতে আশ্রয় নেয়। ঝালকাঠির সুগন্ধা, বিষখালী ও হলতা নদীতে এ সময় ঝাকে ঝাকে ইলিশ ধরা পড়ে। ইলিশ সম্পদ রক্ষায় প্রজনন মৌসুম ৯ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ আহরণ, মজুদ, পরিবহন ও ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ করেছে সরকার।

এসময় সরকারি ভিজিডি চাল সহায়তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। এ কারণে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) থেকে ঋণ নিয়ে সংসার চালাতে বাধ্য হচ্ছে তারা। ঋণ পরিশোধের তাড়নায় সুযোগ পেলেই নৌকা ও জাল নিয়ে নদীতে নামছে জেলেরা। তবে নিষিদ্ধ সময়ে নদীতে জাল ফেলে ইলিশ আহরণকারী জেলেদের মধ্যে প্রকৃত জেলের চেয়ে মৌসুমি জেলেদের প্রভাব অনেক বেশি।

মা ইলিশ রক্ষায় ইলিশ নিধন বিরোধী অভিযানে তৎপর রয়েছেন জেলা প্রশাসন, মৎস্য অধিদপ্তর ও পুলিশ বিভাগ। রাত-দিন অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে- যাতে মা ইলিশ নিধন করতে না পারে। কিন্তু ঝালকাঠির সুগন্ধা-বিষখালি নদীর জেলেরা প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ শিকারের নিষেধাজ্ঞা মানছেন না। জনবল, দ্রুতগামী বোট এবং পরিবহন সংকটের পরেও ডিমওয়ালা মা ইলিশ রক্ষায় যথাসাধ্য অভিযান পরিচালনা করছে কর্তৃপক্ষ।

গভীর রাতে ও দিনের বেলা অভিযান চালালেও প্রশাসনের অভিযান অনুসরণ করে অসাধু জেলেরা দেদারছে ডিমওয়ালা মা ইলিশ শিকার করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ নদী তীরবর্তী বাসিন্দাদের। একদিকে অভিযান চলছে অথবা অভিযান পরিচালনা শেষে লুকিয়ে থাকা নৌকায় করে আবারও মৎস্য শিকারে নামছেন মৌসুমি জেলেরা। বিভিন্ন অভিযানে দণ্ডপ্রাপ্ত ও আটক হওয়া জাল হচ্ছে মৌসুমি জেলেদের। পেশাদার জেলেদের চেয়ে মৌসুমি জেলেরা মৎস শিকারে অগ্রগামী। আশ্বিনের পূর্ণিমার আগের চার দিন ও পরের ১৮দিনসহ মোট ২২দিন অর্থাৎ ৯ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত সুগন্ধা ও বিষখালি নদীতে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সরেজমিনে নদী তীর ঘুরে জানা গেছে, প্রতিদিন সুগন্ধা ও বিষখালী নদীর বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৩০টিরও বেশি নৌকায় কারেন্ট জাল দিয়ে মা ইলিশ শিকার করছে। ইলিশ নিধন বিরোধী অভিযান টিম দেখলেই তারা পাশবর্তী ছোট খালে প্রবেশ করে আত্মগোপন করে। অভিযানিক দল চলে গেলে আবার বের হয়ে ইলিশ নিধন শুরু করে। অভিযান শুরু থেকেই প্রশাসন, মৎস্য অধিদপ্তর ও পুলিশ বিভাগ দিনে এবং রাতে সমানতালে অভিযান পরিচালনা করে। কিন্তু অভিযান শুরু করে স্পিড বোট অথবা ট্রলার সেখান থেকে কিছুদূর চলে গেলেই অভিযানের ট্রলার পাহারা দিয়ে জেলেরা নদীতে নৌকা নিয়ে নেমে কারেন্ট জাল ফেলে মাছ শিকার শুরু করে।

নৌকা দেখে পুনরায় গেলে অভিযানের ট্রলারে দেখামাত্র পালিয়ে নদীর পাশের নালায় নৌকা ডুবিয়ে জেলেরা পালিয়ে যায়। পরে আবার প্রশাসনের লোকজন চলে গেলে পুনরায় মাছ শিকার শুরু করে।

ঝালকাঠি জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বাবুল কৃষ্ণ ওঝা জানান, প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ নিধনরোধে জেলা প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ ও মৎস্য অধিদপ্তর কঠোর অবস্থানে রয়েছে এবং ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছে। ইলিশ রক্ষায় নদীতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তারপরেও কিছু অসাধু জেলে এবং সেই সঙ্গে কিছু মৌসুমি জেলে রয়েছে তারা আইন অমান্য করে ইলিশ নিধন করছে। আমরা পাহারা দিচ্ছি জেলেদের আর ওইসব জেলেরা পাহারা দিচ্ছে আমাদের।

মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, নিষিদ্ধ সময়ের আগেই নিবন্ধিত জেলেদের জন্য চালের পরিমাণ বাড়াতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। অধিদপ্তর থেকে বরাদ্দ বাড়িয়ে দিলে আমরা আরও বেশি জেলেদের চাল দিতে পারতাম। ঝালকাঠির চার উপজেলা কোন গেজেটেড মৎস্য কর্মকর্তা নেই। সহকারি মৎস্য কর্মকর্তাদের দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। একদিকে জনবল সংকট অপরদিকে দ্রুতগামী পরিবহন সংকটের কারণে অভিযানে দারুন বেগ পেতে হচ্ছে। তারপরেও অভিযান সফল করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। জনবল বাড়ানো ও দ্রুতগামী পরিবহন বরাদ্দ দিলে অভিযানকে সফল করতে আরও সহজ হতো বলে মনে করেন তিনি।

প্রসঙ্গত, ৯ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সকল ধরনের আহরণ, মজুদ, পরিবহন ও ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এ সময় জেলেদের জন প্রতি ২০ সহায়তা প্রদান করা হয়।

ওডি/ এফইউ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড