• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩১ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ফেনীতে ধর্ষণ কেলেঙ্কারির অভিযোগে পুলিশের এএসআই ক্লোজড

  ফেনী প্রতিনিধি

২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৪:৫৪
পুলিশ
এএসআই সুজন চন্দ্র দাস (ছবি : দৈনিক অধিকার)

ফেনীর সোনাগাজীতে গৃহবধূ গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সুজন চন্দ্র দাস নামে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে ফেনীর পুলিশ লাইন্সে ক্লোজড (প্রত্যাহার) করা হয়েছে। তিনি ওই মডেল থানার এএসআই (সহকারী উপপরিদর্শক) হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) ফেনীর সহকারী পুলিশ সুপার সাইফুল আহমেদ ভূঁইয়া জানান, বিষয়টি চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি অফিসের অপরাধ বিভাগের পুলিশ সুপার হাসান মাহমুদ তদন্ত করছেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ওই গৃহবধূ ২২ ধারায় ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তানিয়া হোসেনের আদালতে ওই পুলিশ কর্মকর্তা কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে জবানবন্দি দিয়েছেন।

জবানবন্দিতে তিনি জানান, গত ১০ সেপ্টেম্বর তাকেসহ তার পালক পিতা-মাতাকে চাচা ও চাচাতো ভাই মিলে মারধর করে আহত করে।

ওই ঘটনায় ওই দিন নিজে বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় চাচা, চাচি ও চাচাতো ভাইয়ের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তা এএসআই সুজন চন্দ্র দাস যাতায়াত খরচ চাইলে দিতে পারেননি অসহায় ওই নারী।

এরপর নিরাশ হয়ে থানা থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় থানার মাঠে দেখা মিলে সুন্দরী নামের প্রতারক এক নারীর সাথে। সে নিজেকে পুলিশ পরিচয় দিয়ে ওই নারীকে তার বাসায় নিয়ে যান। সেখানে তাকে 'বোন' ডেকে নিজের বাসায় রেখে দেন ওই নারী।

গত ১৫ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে এএসআই সুজনকে দিয়ে ওই নারীকে ধর্ষণ করায় সুন্দরী। একই রাত ১২টার দিকে সঞ্জু শিকদার, আফলাছসহ পাঁচজন যুবককে পুলিশের লোক বলে তার ওপর লেলিয়ে দেয়া হয়।

তারা ওই অসহায় নারীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। ধর্ষকদের সাথে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে ওই নারী অজ্ঞান হয়ে পড়লে তার সঙ্গে থাকা আট আনা ওজনের একটি স্বর্ণের রিং, আট আনা ওজনের এক জোড়া কানের দুল ও একটি মোবাইল ফোন নিয়ে যায় ওই চক্রটি।

সকালে জ্ঞান ফিরলে সুন্দরী নামের ওই প্রতারক নারীর কাছে গৃহবধূ তার ওপর এই নির্যাতনের কারণ জানতে চাইলে সে সঞ্জু শিকদার ও আফলাছ নামের দুই যুবককে ফের ডেকে এনে দ্বিতীয়বার ধর্ষণ করায় তাকে।পরে তারা ওই গৃহবধূকে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার হুমকি দেয়।

এর পর ঘটনাটি জানাতে ওই নারী থানায় গেলে কর্তব্যরত এএসআই সুজন চন্দ্র দাস সুন্দরী নামের ওই নারীকে মোবাইলে জানিয়ে দেন যে তার বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। খবর পেয়ে সুন্দরী তাৎক্ষণিক থানায় এসে ওই নারীর সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হয়। তখন সেই পুলিশ কর্মকর্তা তাকে ধমক দিয়ে ঘটনাটি সামাজিকভাবে সমাধান করার কথা বলে তাড়িয়ে দেন।

পরবর্তীতে ওই গৃহবধূ বাদী হয়ে সঞ্জু শিকদার, সুন্দরী ও আফলাছ হোসেনসহ তিনজনের নাম উল্লেখ করে ও আরও তিনজনকে অজ্ঞাত আসামি করে মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাতে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন।

তবে ভয়ে প্রথমে ওই পুলিশ কর্মকর্তার নাম মামলায় উল্লেখ করেনি বলে তার জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন। পুলিশ মঙ্গলবার রাতে সঞ্জু শিকদার (৩৫) ও নারী প্রতারক সুন্দরীকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে প্রেরণ করেছে।

পুলিশ, এলাকাবাসী ও নির্যাতিত গৃহবধূ জানান, আমিরাবাদ ইউনিয়নের উত্তর সোনাপুর গ্রামের সাহাব উদ্দিন ওই নারীকে দত্তক নিয়ে লালন-পালন করে একই উপজেলার বগাদানা ইউনিয়নের মান্দারী গ্রামের জনৈক রিপন নামে এক যুবলীগ কর্মীর কাছে ১৪ বছর পূর্বে বিয়ে দেন।

গত ৩ বছর পূর্বে আধিপত্যের জের ধরে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা রিপনকে গুলি করে হত্যা করে।স্বামীর মৃত্যুর পর ১৩ ও ৭ বছর বয়সী দুই সন্তান নিয়ে পালক পিতার বাড়িতে আশ্রয় নেয় সে। নিঃসন্তান পালক পিতা তার নামে বসতবাড়িতে জমি দান করার প্রস্তাব করেন। এ খবর জানাজানি হলে সাহাব উদ্দিনের ভাই ও ভাতিজারা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন।

ওই নারী বিষয়টি সমাজের লোকদের জানালে কেউ দায়িত্ব না নেওয়ায় একপর্যায়ে সমাজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি-সম্পাদক মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে সোনাগাজী মডেল থানার ওসির কাছে নিয়ে যান তাকে। বিষয়টি অবগত হয়ে ওসি বাদিনীর ভাষ্যমতে তাৎক্ষণিক মামলাটি রুজু করেন। রাতেই অভিযান চালিয়ে শিকদার ও সুন্দরীকে আটক করে পুলিশ। সঞ্জু শিকদার এর বিরুদ্ধে ডাকাতি ও ছিনতাইসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

এ দিকে, অভিযুক্ত সুন্দরী নামের ওই প্রতারক নারী চরদরবেশ ইউনিয়নের চরসাহাভিকারী গ্রামের নূরুজ্জামানের কন্যা ও এক কন্যা সন্তানের জননী। সেও একজন স্বামী পরিত্যক্তা নারী। সে গত তিন বছর ধরে সোনাগাজী মডেল থানায় কর্মরত একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার বাসায় বুয়ার কাজ করত।এছাড়া কলেজ রোডস্থ মাঝিবাড়ির খোকার ভাড়া বাসায় বসবাস করত।

সেখানে বখাটে সন্ত্রাসীদের নিয়ে বিভিন্ন প্রবাসী ও ব্যবসায়ী যুবকদের ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আদায়েরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। একাধিক পুলিশ সদস্যের সাথে তার সখ্যতা থাকায় কেউ ভয়ে মুখ খুলত না। সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মঈন উদ্দিন আহমেদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।

প্রসঙ্গত, সোনাগাজী পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের চরগণেশ গ্রামের কলেজ রোডের মাঝি বাড়ির খোকন মিয়ার রহিমা আক্তার ওরফে সুন্দরীর ভাড়া বাসায় ১৫ সেপ্টেম্বর রবিবার দিবাগত গভীর রাতে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ সময় দুর্বৃত্তরা তার সাথে থাকা এক ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও একটি মোবাইল ফোন লুটে নেয়।

ওডি/এএসএল

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড