নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার তারাব পৌরসভার বরাব বাজার এলাকার একটা চায়ের দোকানে বসে চা পান করছিলাম। হঠাৎ এক বৃদ্ধা পেছন থেকে পিঠে হাত দিয়ে বলল, বাবা যদি পারেন আমাকে একটু সাহায্য করেন। মনে হলো সাহায্য চাইতে তার গলার স্বরটা যেন থরথর করে কাঁপছিল। পেছনে তাকিয়ে দেখলাম। বয়স ৭৫ থেকে ৮০ হবে হয়তো। পরে আমার এ ধারণাটা অবশ্য ভুল প্রমাণ হয়েছিল।
বৃদ্ধাকে বললাম, কিছু মনে করবেন না। আমার পাশে বসেন। তিনি বসার আগে মাথার কাপড়টা ভালো করে ঘোমটার মতো দিলেন। এরপর বসলেন। কিন্তু ঘোমটার আড়ালে বৃদ্ধার চোখে পানি দেখলাম। অঝোরে তার চোখের পানি ঝরছে তবুও কান্নার শব্দটাও পেলাম না। আমার পাশে যারা বসে চা পান করছিলেন তারাও বুঝে উঠতে পারেনি যে ওই বৃদ্ধা কান্না করছেন। পরে সান্ত্বনা দিয়ে তার নাম-ঠিকানা জানতে চাইলাম।
তিনি বললেন, আমার নাম মোসা. কুলসুম বিবি। স্বামীর নামটা বলতে চাইলেন না। শুধু বললেন, স্বামীর নাম মুখে নিতে নেই। এতে স্বামীর কষ্ট বাড়ে। মেয়েদের বাবা ১০ বছর আগে মারা গেছে। পরে অবশ্য আমার পিড়াপিড়িতে বৃদ্ধা বললেন, তার স্বামী মৃত আবু বক্কর সিদ্দিক। বরাব বাজার এলাকায় কবরস্থান রোডে লতিফ হাজীর বাড়িতে ভাড়া থাকেন তিনি। দুই মেয়ে ছিল, তাদের বিয়ে দিয়েছেন। কোনো ছেলে নেই। মানুষের কাছে হাত পেতে যা পান তা দিয়ে মাসে দুই হাজার ৫শ টাকা ঘর ভাড়া দেন। ঠিকমতো খেতে পারেন না। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আর কয়দিন বাঁচব? কষ্ট সইতে পারছি না। খাওয়ার যন্ত্রণা অনেক।
কুলসুম বিবি বলছিলেন, আজ যদি আমার একটা পুত (ছেলে) থাকত তবে আমাকে খাইতে দিত। ওষুধ কিন্না (ক্রয় করে) দিত। কাপড় দিত। মেয়ের বাবা মারা গেছে আমারে ভাড়া বাড়িতে রাইখা। কাম করার মতো গতরে (শরীরে) শক্তি নাই। যদি গতরে শক্তি থাকত তবে কাম কইরা খাইতাম। ভিক্ষা করতাম না। মানুষের কাছে হাত পাততাম না।
কুলসুম বিবির বয়স সম্পর্কে আমার যে ধারণা ছিল তা ভুল হলো। বললেন, তার বয়স ৬৫ বছর। অবশ্য তাকে দেখে বয়স বুঝতে পারাটা মুশকিল। স্বামী হারা এমন বৃদ্ধা কুলসুম আমাদের কাছে আর কতদিন হাত পেতে চলবেন? এমন প্রশ্নই ছিল ওই চা দোকানে থাকা দুই-তিনজন ভদ্রলোকের।
তাদের ভাষ্য অনুযায়ী সরকার ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ইচ্ছা করলেই পারেন কুলসুম বিবির মতো অসহায়দের একটা ব্যবস্থা করতে। ভদ্রলোকদের চাওয়া ছিল যদি সাংবাদিকেরা কুলসুম বিবির কথা পত্র-পত্রিকায় তুলে ধরেন তাহলে নিশ্চিত বয়স্ক ভাতার ব্যবস্থাসহ বৃদ্ধার মাথা গোঁজার ঠাঁই হবে।
কুলসুম বিবি জানালেন, আমি এই এলাকার পৌরসভায় গেছি। কমিশনারের অফিস গেছি। এলাকার নেতাদের কাছেও গেছি। সবাই বলে আমাকে বয়স্ক ভাতার কার্ড দিব। কইতে কইতে বছর পার হয়া (হয়ে) গেল। আমার তো কোনো ব্যবস্থা হইল না।
এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগমের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, ‘কুলসুম বিবিকে আমার অফিসে পাঠিয়ে দেন। আমি কুলসুম বিবির জন্য কিছু করার চেষ্টা করব। এ সময় বয়স্কদের জন্য সরকারের ভাতা থেকে কুলসুম বিবিকে সুবিধা দেওয়া হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ওডি/আইএইচএন
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড