এসআইয়ের নিপীড়নের শিকার গৃহবধূর বাড়িতে বিএনপি

যশোরের শার্শা উপজেলায় এসআইয়ের নিপীড়নের শিকার হওয়া গৃহবধূর পাশে দাঁড়িয়েছে নারী ও শিশু রক্ষায় গঠিত বিএনপির কমিটি ‘নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম’।

শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) সংগঠনের নেতা ও বিএনপির কেন্দ্রীয় ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল হক ও নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট নিপুণ রায়ের নেতৃত্বে একটি টিম নির্যাতিত ওই গৃহবধূর বাড়িতে যান। এ সময় বিএনপি নেতারা নির্যাতিত ওই গৃহবধূকে আর্থিক সহায়তাসহ সকল প্রকার আইনি সহযোগিতার পূর্ণ আশ্বাস দেন।

নারী ও শিশু রক্ষায় গঠিত বিএনপির কমিটি নেতারা বলেন, ‘এ জঘন্য অপকর্মের সঙ্গে জড়িত পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) খায়রুল আলমকে অবিলম্বে আইনের আওতায় আনতে হবে। না হলে নারীর অধিকার রক্ষায় দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধূর পাশে দাঁড়াতে বিএনপির হাইকমান্ড থেকে নির্দেশনা আসায় নারী ও শিশু রক্ষা কমিটির নেতা-কর্মীরা যশোর ছুটে যান এবং নির্যাতিত গৃহবধূকে সর্বাত্মক আইনি সহযোগিতার অঙ্গীকার করেন।

এ ব্যাপারে বিএনপির কেন্দ্রীয় ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল হক জানান, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে তারা সারা দেশের নির্যাতিত নারী ও শিশুদের রক্ষায় কাজ করে চলেছেন। এ কারণেই গঠিত এ কমিটি নির্যাতিতদের পাশে দাঁড়িয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। এরই ধারাবাহিকতায় তারা যশোর এসেছেন। এ সময় নির্যাতিত ওই গৃহবধূ ও তার পরিবারকে সাহস জোগানোর কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, নির্যাতিত গৃহবধূসহ তার পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার দিয়েছে নারী ও শিশুদের রক্ষায় গঠিত এ কমিটি।

তিনি বলেন, ‘একদিকে যেমন আমরা আমাদের গণতন্ত্রের মা খালেদা জিয়া ও গণতন্ত্রকে মুক্তির জন্য আন্দোলন করছি, তেমনিভাবে বর্তমান সরকারের সৃষ্টি করা সামাজিক ব্যাধিকেও নির্মূল করার আন্দোলন শুরু করেছি। জনগণকে সঙ্গে নিয়েই রাজপথের পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলে বর্তমান সরকারের সব অপকর্মের জবাব দেওয়া হবে।’

আরও পড়ুন : এসআইয়ের বিরুদ্ধে আসামির স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ

নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী বলেন, জনগণের ভোটে সরকার নির্বাচিত না হলে কারও নিরাপত্তা থাকে না। প্রশাসন, বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দলীয়করণ করার ফলে বর্তমানে কারও জীবনের মূল্য নেই। তাদের সহযোগিতায় মধ্যরাতের ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ ধরণের অপকর্ম করার সুযোগ পাচ্ছে। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘তারেক রহমানের নির্দেশনায় তারা নারী ও শিশু রক্ষায় দেশজুড়ে কাজ করে যাচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় দেশব্যাপী কমিটি গঠন করা হচ্ছে। যেখানেই নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার হবে সেখানেই এ কমিটি তারা ছুটে যাবে এবং নির্যাতিতদের পাশে দাঁড়াবেন।’

প্রসঙ্গত, গত ২৩ আগস্ট বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় নারী ও শিশুদের অধিকার রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালনে নয়টি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে ‘নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম’ নামে নতুন একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটিতে দলীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে প্রধান উপদেষ্টা, সেলিমা রহমানকে আহ্বায়ক এবং বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট নিপুণ চন্দ্র রায়কে সদস্য সচিব করা হয়।

এ সময় যশোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগমসহ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আমিনুর রহমান, শার্শা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসান জহির, নগর মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শামসুর নাহার পান্নাসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে যশোরের ওই গৃহবধূ এসআই খায়রুল আলম কর্তৃক নিজের ঘরেই ধর্ষণের শিকার হন। ভুক্তভোগী ওই গৃহবধূর অভিযোগ, থানার এসআই খায়রুলসহ চারজন ঘটনার দিন রাতে বাড়িতে এসে স্বামীকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার নাম করে তার কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। এ সময় স্বামীর বিরুদ্ধে দেওয়া ফেনসিডিলের মামলা থেকে অব্যাহতির জন্য দাবিকৃত এ টাকা দেওয়া নিয়ে উভয়ের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে এসআই খায়রুল ক্ষিপ্ত হয়ে ঘরে প্রবেশ করে কামরুল নামে এক সোর্সসহ ওই গৃহবধূকে ধর্ষণ করেন।

এ ঘটনার পরদিন সকালে ওই নারী যশোর জেনারেল হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য গেলে বিষয়টি স্থানীয়দের মাধ্যমে জানাজানি হয়ে পত্র-পত্রিকায় উঠে আসে। পরে বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদনে ধর্ষণের আলামত পাওয়ার কথা জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ সময় ধর্ষণকারী কারা ছিলেন তা ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদনের পর নিশ্চিত হওয়া যাবে বলেও জানান ওই হাসপাতালের কর্মকর্তারা। পরে ডিএনএ নমুনা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ঢাকার পরীক্ষাগারে প্রেরণ করা হয়।

ওডি/আইএইচএন