কবির হোসেন, কাপ্তাই প্রতিনিধি, রাঙ্গামাটি
পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগে লোকবল সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এতে করে বিশাল বনভূমির বনজ সম্পদ হুমকির মুখে রয়েছে। সেই সঙ্গে বিপাকে রয়েছেন মাঠ পর্যায়ের বন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। জনবল সংকটে সঠিকভাবে তদারকির অভাবে কোনো কোনো এলাকায় অবাধে বন ধ্বংস করে জুম চাষ করা হচ্ছে।
বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, কাপ্তাই-কর্ণফুলী বন রেঞ্জসহ ২ লাখ ২ হাজার ৬৬৯ দশমিক ৪৯ একর জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছে পর্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বিশাল বনভূমি। দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে আবহমান কাল ধরে এই বিশাল বনভূমি বিপুল বনজ সম্পদ বুকে ধারণ করে নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আর এ বনভূমি তথা সবুজ- প্রকৃতি দেখার জন্য দেশ-বিদেশ থেকে প্রতিনিয়ত হাজারো পর্যটক ভ্রমণ করতে আসেন রাঙ্গামাটি জেলায়। এর ফলে সরকার এই পার্বত্য অঞ্চল থেকে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় করছে। বর্তমানে সেই ঐতিহ্যবাহী বনজ সম্পদ লোকবল সংকটের কারণে হারাতে বসেছে।
দেশের এই বিশাল বনভূমির সম্পদ রক্ষণা-বেক্ষণ করার জন্য মঞ্জুরিকৃত পদ ২৫৯টি। কিন্তু এতে কর্মরত আছেন মাত্র ১৬৮ জন। পদের অনুকূলে লোক নিয়োগ না দেওয়ার ফলে দীর্ঘদিন ধরে পদগুলো শূন্য পড়ে আছে। দক্ষিণ বন বিভাগের এ বিশাল বনজ সম্পদ রক্ষণা-বেক্ষণের জন্য রয়েছে ছয়টি বন রেঞ্জ ও স্টেশন। পাশাপাশি রয়েছে অসংখ্য বিট।
কয়েক বছর আগেও দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় একটি রেঞ্জ তথা একটি বিটে বনজ সম্পদ পাহারা দিতে ১০ থেকে ১৫ জন কর্মী ছিল। বর্তমানে লোকবল সংকটের ফলে একটি রেঞ্জে অফিসে মাত্র তিন থেকে-পাঁচজন কর্মরত আছেন। ফলে একটি বিটে হাতিয়ারসহ রাতে-দিনে দুই-তিনজনকে পাহারা দিতে দেখা যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে একজন বন প্রহরী কাঁধে একটি বিটের বনজ সম্পদ পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব পড়ে। ফলে বনভূমির সব স্থানে সঠিকভাবে নরজদারি করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। এতে অনেক এলাকায় বনভূমি অবাধে ধ্বংস করে জুম চাষ করা হচ্ছে।
জনবল সংকটে ভুগছে পার্বত্য বন বিভাগের এই বিশাল বনভূমি (ছবি : দৈনিক অধিকার)
মাঠ পর্যায়ের কয়েকজন বনরক্ষী কান্না বিজিড়িত কণ্ঠে বলেন, এ বিশাল বনভূমি পাহারা দিতে গিয়ে আমাদের অনেককে পাহাড়ের উঁচু-নিচুতে টিলা হতে পা পিছলে পড়ে গুরুতর জখম হতে হয়েছে। এছাড়া গভীর রাতে বনদস্যু ও পাহাড়ি বন্য হাতির আক্রমণের শিকার হয়ে আমাদের অনেকে হতাহত হয়েছেন। এছাড়া ২৪ ঘণ্টা পাহারা দিতে গিয়ে কখনো কখনো না খেয়ে থাকতে হয়েছে। দুর্গম পাহাড়ের মধ্যে সুপেয়ও পানি না পাওয়ার দরুণ পাহাড়ি ঝরনা তথা দূষিত পানি পান করে টাইফয়েড, ম্যালেরিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে আমাদের অনেকে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে।
বনরক্ষীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিটে যদি প্রয়োজন মতো লোকবল দেওয়া হতো তাহলে আমরা পালাক্রমে একটু রেস্ট নিয়ে বন পাহারা দিতে পারতাম। তাছাড়া যদিও বা দুই-তিনজন দিয়ে বিটে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে; কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায়, ওই দুই/তিনজনের মধ্যে একজন না একজন রোগে আক্রান্ত হয়ে বিছানায় পড়ে রয়েছেন।
বনপ্রহরী অভিযোগ করে বলেন, দুর্গম বনে পাহারা দিতে গিয়ে স্ত্রী-সন্তান তথা পরিবারের সদস্যদের কোনো ধরনের সমস্যা হলেও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারি না। এ সময় কয়েকজন বনপ্রহরী এ প্রতিবেদককে অনুরোধ করে বলেন, আমাদের কথা কেউ শোনে না ভাই, দয়া করে আমাদের নিয়ে কিছু লেখেন, যদি তাতে কাজ হয়।
এ বিষয়ে পার্বত্য দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) তৌফিকুল ইসলাম জনবল সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, লোকবল সংকট তথা বিভিন্ন সমস্যা জানিয়ে প্রতি মাসে বনমন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে প্রতিবেদন দেওয়া হয়। কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হচ্ছে না। লোকবল সংকটের ফলে বিশাল বনজ সম্পদ পাহারা দিতে গিয়ে আমার মাঠ পর্যায়ের লোকজন বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হচ্ছে। সেই সঙ্গে এত কম লোকবল দিয়ে এই বিশাল বনভূমির বনজ সম্পদ রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের জনবল বাড়ানোর বনমন্ত্রালয়ের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন।
ওডি/ এফইউ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড