• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ফেনীর সীমান্ত হাটে অযৌক্তিক দাবিতে ধর্মঘট ডেকেছে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা

  ফেনী প্রতিনিধি

০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৮:১০
সীমান্ত হাট
ফেনীর সীমান্ত হাট (ছবি : দৈনিক অধিকার)

ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের মোকামিয়া গ্রামে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত হাট ভারতীয় ব্যবসায়ীদের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট কর্মসূচির কারণে বন্ধ রয়েছে। মঙ্গলবার সীমান্তহাটের ভারতীয় ব্যবসায়ীরা তাদের সকল পণ্যের বিক্রি সুবিধা দেওয়াসহ বিভিন্ন দাবিতে দোকান বন্ধ রেখে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট কর্মসূচির ডাক দেয়। সারাদিন হাটের বাইরের গেইটে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে তারা। ফলে সীমান্ত হাটে ভারতের কোনো ক্রেতা প্রবেশ করতে পারেনি।

বাংলাদেশের ক্রেতা-বিক্রেতারা সীমান্ত হাটে গিয়ে হতাশ হয়ে ফেরত আসে। ভারতীয় ব্যবসায়ীরা হাটের বিক্রির জন্য র্নির্ধারিত পণ্যের বাইরেও বহু পণ্য বাজারে নিয়ে আসেন। বাংলাদেশ অংশে কোনো কড়াকড়ি না থাকায় জেলা শহরসহ নানা স্থানের ক্রেতারা বিপুল পরিমাণ ভারতীয় পণ্য পাইকারি ও খুচরা দরে কিনে বাংলাদেশে নিজেদের দোকানে মজুদ করে বিক্রি করে থাকে।

এসব বিষয়গুলো গত বেশ কিছুদিন থেকে বাংলাদেশি স্থানীয় প্রশাসন অবহিত হওয়ার পর সীমান্ত হাটের গেইটে কর্তব্যরতদের সতর্ক করা হলে তালিকা বহির্ভূত এবং অতিরিক্ত পণ্য আনা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ভারতের পণ্য বিক্রি কমে যায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা তাদের সকল পণ্য বিক্রি সুবিধা দেওয়াসহ বিভিন্ন দাবিতে দোকান বন্ধ রেখে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করে।

ছাগলনাইয়া সীমান্ত হাটে গিয়ে সরেজমিনে দেখা যায়, ভারতীয় পণ্য সেখানে বেশি। নির্দিষ্ট পণ্য তালিকার বাইরের অনেক পণ্যসামগ্রীও বেচা-কেনা হচ্ছে। ফেনী, ছাগলনাইয়া ও বারইয়ারহাটসহ বিভিন্ন এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এ বাজার থেকে পণ্য আমদানি করে। দাম কম হওয়ায় বাংলাদেশিরা অনেকটা হুমড়ি খেয়ে নিম্নানের ভারতীয় পণ্য কিনছেন দেদারসে।

ব্যবসায়ী ও ক্রেতা সূত্রে জানা গেছে, ছাগলনাইয়া-শ্রীনগর সীমান্ত হাট অনেকটা ভারতীয় পণ্যের দখলে। দুই দেশের পণ্য বেচা-কেনার দিক থেকেও বহুগুণ পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। রয়েছে বেশ কিছু অনিয়মের অভিযোগ। দুই দেশের সীমান্তবাসীদের মধ্যে সম্প্রীতি বাড়ানো ও বাণিজ্য প্রসারে বাংলাদেশের ছাগলনাইয়া ও ভারতের শ্রীনগর সীমান্তে ২০১৫ সালের ১৩ জানুয়ারি চালু হয় দেশের তৃতীয় সীমান্ত হাট। হাটের শুরুতে দুই দেশের আশপাশের ৫ কিলোমিটারে বসবাসরত গ্রামবাসীদের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য বেচা-কেনা মূল লক্ষ্য থাকলেও মানা হচ্ছে না সেই নীতিমালা। প্রতি মঙ্গলবার বসা এ হাটে দুর-দূরান্ত থেকে ক্রেতারা গাড়ি হাঁকিয়ে হুমড়ি খেয়ে হাটে ঢুকে অবাধে ভারতীয় মাল কিনছেন। অপর দিকে ভারতীয় অংশে কড়াকড়ি থাকায় অনেকটা ক্রেতাশূন্য হাটের বাংলাদেশি পণ্যের অংশ। দুই দেশের বৈধ পণ্যের ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবসা-বাণিজ্য এবং উভয় দেশের জনগণের মধ্যে ভাববিনিময় ও সম্প্রীতির সেতুবন্ধন রচনা ছিল এ হাটের উদ্দেশ্য। কিন্তু বাস্তবে হয়েছে তার উল্টো।

বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, এ বাজারে ভারত-বাংলাদেশিদের জন্য আলাদা আলাদা শেডে ৩০টি করে মোট ৬০টি দোকান রয়েছে। ভারতীয় প্রতিটি দোকানে গড়ে সপ্তাহে প্রতি হাটবারের দিন প্রায় ৪ থেকে ৫ লাখ টাকার মতো বেচা-বিক্রি হয়, আর বাংলাদেশিদের দোকানে সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার মতো বেচা-কেনা হয়।

বাংলাদেশি শেডের ব্যবসায়ীরা জানান, এ বাজারের শতকরা ৯০ শতাংশ ক্রেতাই বাংলাদেশি। আর ১০ শতাংশ ভারতীয়। এখানকার স্থানীয়রা অভিযোগ করে জানান, এ সীমান্ত হাট দিয়ে বৈধ পথে অবৈধ মালামালের কারবার হয়। সীমান্ত হাটে যাওয়ার জন্য টিকিট (প্রবেশ কার্ড) সংগ্রহে কিছুটা সরকারি বাধ্যবাধকতা থাকায় এখানকার এক শ্রেণির কালোবাজারি ও দালাল ২০ টাকার প্রবেশ কার্ড ক্ষেত্র বিশেষে বাংলাদেশি লোকদের থেকে ১শ থেকে ২শ টাকায় পর্যন্ত কিনছে। অনেকেই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বেশি সংখ্যক প্রবেশ কার্ড সংগ্রহ করে বাড়তি আয় শুরু করেছে।

ক্রেতারা জানান, হাটে ভারতীয় অংশে বিক্রি হচ্ছে না কোনো ধরনের খুচরা পণ্য। হরলিকস, গুঁড়োদুধ, প্যাম্পার্সসহ ভারতীয় সব প্রসাধনী সামগ্রী পাইকারি দরে কার্টনে কার্টনে বিক্রি হওয়ায় সাধারণ ক্রেতারা পণ্য কিনতে পারছে না।

ফেনীর জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজজামান বলেন, আমাদের (বাংলাদেশের) অংশে নীতিমালা অনুযায়ী হাট চলছে। তাদের (ভারতীয়দের) নিকট থেকে আমরা কোনো প্রকার অভিযোগ পাইনি। কী জন্য তারা ধর্মঘট শুরু করেছে তাহা আমরা জানি না।

সীমান্ত হাটের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এনামুল করিম সোহেল বলেন, ভারতীয় ব্যবসায়ীরা অযৌক্তিক দাবিতে ধর্মঘট শুরু করেছে। বাজারের নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে তারা ব্যবসা করতে চায়। অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করায় মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) সীমান্ত হাটে কোন প্রকার বেচা-কেনা হয়নি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিজিবির মধুগ্রাম কোম্পানি কমান্ডার আবদুর রহমান বলেন, আমাদের দায়িত্ব হাটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ধর্মঘট বিষয়ে সীমান্ত হাট ব্যবস্থাপনা কমিটি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

খোকন নামে বাংলাদেশি এক বিক্রেতা জানান, বাংলাদেশি বাজারে মাছ, শুঁটকি, মুদি মাল, বেকারি ও প্লাস্টিক পণ্য বিক্রি হলেও ভারত থেকে আসছেন না তেমন কোনো ক্রেতা। হাটে প্রবেশে সেদেশের কড়াকড়ি থাকায় অলস সময় কাটাচ্ছে বাংলাদেশি বিক্রেতারা।

ওডি/এসজেএ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড