নওগাঁয় অপহরণ, ধর্মান্তরিত ও হত্যা মামলায় গ্রেফতার ১

নওগাঁর মহাদেবপুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের মেয়ে রিমা রাণী দাসকে (১৯) অপহরণের পর ধর্মান্তরিত ও হত্যার অভিযোগে মোমিনুল হোসেন মোহনকে (৩০) গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (২৯ অগাস্ট) বিকালে রিমার নিজ ঘর থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।

নিহত রিমা রাণী উপজেলার রাইগাঁ ইউনিয়নের আতুড়া গ্রামের ঋষি পাড়ার উত্তম দাসের মেয়ে রাইগাঁ ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী ছিল।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় রাইগাঁ বাজারের বাসিন্দা তোজাম্মেল হোসেনের বখাটে ছেলে মোমিনুল হোসেন মোহন ও তার বন্ধু রহাট্টা গ্রামের হাবিব হোসেন হিন্দু সম্প্রদায়ের দরিদ্র উত্তম দাসের বাড়িতে ঢুকে ঘটনার দিন বিকালে প্রথম দফায় রিমা রাণী দাসকে জোর পূর্বক তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।

নিহতের পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, গত এপ্রিল মাসে মহাদেবপুর সেন্টারে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে রিমাকে মোমিনুল জোর পূর্বক মাইক্রোবাসে তুলে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। এরপর তাকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্মান্তরিত করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে বিয়ে করে আটকে রাখে। এ ঘটনার প্রায় এক মাস পর রিমা ওই অজ্ঞাত স্থান থেকে কৌশলে পালিয়ে তার বাবা-মার বাড়িতে চলে আসে।

নিহত রিমা দাসের মা রিনা দাস অভিযোগ করে বলেন, এ বিষয়ে আদালতে তাদের বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়েছে এবং ডিভোর্স দিয়েছে রিমা। এরপর বিভিন্ন সময় মোমিনুল হুমকি দিয়ে আসছিল। এমতাবস্তায় বৃহস্পতিবার বিকালে রিমাকে তুলে নিতে আসে মোমিনুল ও তার বন্ধু হাবিব। সে সময় প্রতিবেশীরা এগিয়ে এলে তারা দ্রুত পালিয়ে যায়।

এরপর পরিস্থিতি শান্ত হলে রাইগাঁ বাজারে রীনা দাস ও তার স্বামী তাদের হাতের তৈরি ডালা, কুলা, চালন বিক্রির জন্যে চলে যায়। এ সময় বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে তারা আবারও দলবদ্ধ হয়ে রিমাকে জোর পূর্বক তুলে নিয়ে যাওয়া চেষ্টা করে। লোকমুখে এই সংবাদ পেয়ে দ্রুত বাড়ি ফিরে এসে ওড়না দিয়ে ঘরের আড়ার ফাঁশ লাগানো অবস্থায় অবস্থায় দেখতে পান।

নিহতের পরিবার ও প্রতিবেশী বলেন, দ্বিতীয় দফায় বখাটে যুবকরা রিমাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যেতে ব্যর্থ হয়ে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করে ঝুলিয়ে রেখে পালিয়ে গেছে। খবর পেয়ে পুলিশ সন্ধ্যায় রিমার লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।

রিমার মা ও বাবা এ ঘটনায় ওই দুই বখাটের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করতে গেলেও মহাদেবপুর থানার ওসি সাজ্জাদ হোসেন মামলা না নিয়ে ইউডি (সাধারণ ডায়েরি) মামলা দায়েরের জন্যে তাদের বলেন।

থানায় হত্যা মামলা দায়ের করতে ব্যর্থ হয়ে রাত ১১ টার দিকে কোনো মামলা না করেই থানা থেকে বাড়ি চলে যান।

রাতে ঘটনাটি বিভিন্ন ভাবে পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন জানতে রাত ১২ টার পর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল হককে বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখতে নির্দেশ প্রদান করেন।

এরপর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল হক ঘটনাস্থল আতুড়া ঋষি পাড়ায় যান। সেখানে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে ঘটনার বিবরণ শোনার পর বখাটে যুবক মোমিনুলকে ও হবিবকে দ্রুত গ্রেফতারের নির্দেশ দেন থানা পুলিশকে।

থানা পুলিশ ওই রাতেই মোমিনুল হোসেন মোহনকে গ্রেফতার করে। তবে তার বন্ধু হাবিবকে গ্রেফতার করতে পারেনি। রিমার মা রিনা রানী দাস বাদী হয়ে মহাদেবপুর থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।

নিহতের বাবা উত্তম দাস বলেন, প্রথমে থানা পুলিশ মামলা নিতে না চাইলেও পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে থানা পুলিশ মামলা গ্রহণ করে। সে অন্য আসামিকে দ্রুত গ্রেফতার করে ন্যায় বিচারের দাবি করেন।

মহাদেবপুর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক আক্তারুজ্জামান আলাল জানান, নিহতের প্রাথমিক ময়না তদন্ত শেষে গলায় ওড়না পেঁচানো দাগ পাওয়া গেছে। তবে এটি হত্যা না আত্মহত্যা তিনি নিশ্চিত নন।

নওগাঁ সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মনির আলী আকন্দ জানান, বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক আরিফিন কবিরকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট বোর্ড গঠন করার পর ময়না তদন্ত সম্পন্ন করা হয়েছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে সঠিক কারণ জানা যাবে।

মহাদেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাজ্জাদ হোসেন, হত্যার মামলা গ্রহণ করতে না চাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন।

পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন বিপিএম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, রিমা তার বাবা-মায়ের কাছ থেকে না যাওয়ায় দুই দফায় মোমিনুল রিমাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তবে তাকে হত্যা করা হয়েছে কিনা ময়না তদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে সঠিক কারণ জানা যাবে।

তিনি আরও জানান, মূল আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দ্রুত অপর আসামিকে গ্রেফতার করা হবে।

ওডি/এমবি