• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩১ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র বাঁশখালী সমুদ্র সৈকত

  শিব্বির আহমদ রানা, বাঁশখালী, চট্টগ্রাম

২৩ আগস্ট ২০১৯, ১৫:৪৬
বাঁশখালী সমুদ্র সৈকত
বাঁশখালী সমুদ্র সৈকত ( ছবি : দৈনিক অধিকার)

দক্ষিণ চট্টগ্রামের অন্যতম পর্যটন সম্ভাবনাময় জনপদ বাঁশখালী উপজেলা। সাগর-পাহাড় মিতালী চিরসবুজের বিশাল বিচরণ ক্ষেত্র। এ উপজেলার সঙ্গে রয়েছে বহুমুখী যোগাযোগের ব্যবস্থা। প্রাকৃতিক, ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক, ঐতিহ্যিক সব সম্পদেই সমৃদ্ধ এই উপজেলা। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলেই বাঁশখালী উপজেলা হয়ে উঠবে দেশের সম্ভাবনাময় একটি পর্যটন কেন্দ্র।

চট্টগ্রাম মহানগর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত অপরিমেয় সৌন্দর্যের লীলাভূমি বাঁশখালী উপজেলা। যার আয়তন ৩৯২ বর্গকিলোমিটার। এ উপজেলার উত্তরে সাঙ্গু নদী ও আনোয়ারা উপজেলা, পূর্বে সাতকানিয়া উপজেলা ও লোহাগাড়া উপজেলা, দক্ষিণে কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলা ও পেকুয়া উপজেলা এবং পশ্চিমে কুতুবদিয়া চ্যানেল, কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া উপজেলা ও বঙ্গোপসাগর অবস্থিত।

উপজেলার পূর্ব দিকে চাঁদপুরে বৈলগাঁওয়ে চির সবুজের চা বাগান, শিলকুপ-জলদীর সীমানায় সুউচ্চ পাহাড়ের সঙ্গে সবুজের চাদরে ঢাকা বাঁশখালী ইকোপার্কের মনোরম দৃশ্য। দেশের দীর্ঘতম ঝুলন্ত সেতু, উপকূলীয় জোন বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে দীর্ঘ ৩৭ কিলোমিটার জুড়ে আকর্ষণীয় সমুদ্র সৈকত বাঁশখালীকে পর্যটন সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে।

এ ছাড়াও উপজেলা জুড়ে রয়েছে ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থানসমূহ। বিশেষ করে ইসলাম প্রচারে ভূমিকা রাখা বাহারছড়ায় অবস্থিত সাড়ে ৪শ বছরের পুরোনো স্থাপনা বখশী হামিদ (রহ.) জামে মসজিদ, নিম কালীবাড়ী (১৭১০), বাণীগ্রামের শিখ মন্দির, ছনুয়া মনু মিয়াজি বাড়ি জামে মসজিদ, জমিদার মনু মিয়াজি বাড়ির মসজিদের মিনার, সরলে অবস্থিত মলকা বানুর দীঘি এবং মসজিদ।

এখানে প্রাগৈতিহাসিক চট্টগ্রামের লোককাহিনী মনু মিয়া-মালকা বানুর নায়িকা চরিত্র মালকা বানু চৌধুরীর জন্মস্থান। পর্যটকে মুখরিত বাহারছড়া সমুদ্র সৈকত, খানখানাবাদ সমুদ্র সৈকত, প্রেমাশিয়া সমুদ্র সৈকত, কাথরিয়া পয়েন্টসহ দীর্ঘ ৩৭ কিলোমিটার জুড়ে সাগরের লোভনীয় ঢেউ, সূর্যাস্তের অপূর্ব দৃশ্য, জলকদর খাল, পশ্চিম উপকূলের লবণের মাঠ, ছনুয়ার ঐতিহাসিক কাতেবী জামে মসজিদ, সরল্যার মসজিদ, সরল্যার দীঘি, বৈলছড়ি খান বাহাদুর বাড়ি, বিশ্বখ্যাত ঐতিহাসিক কুম্ভমেলার তীর্থস্থান গুনাগরি ঋষিধাম।

বাঁশখালী উপকূলীয় সমুদ্র সৈকতে প্রতিদিন প্রিয়জনের হাতটি ধরে প্রিয় মুহূর্তগুলো মৃদু ছন্দ বাতাসের গতিতে জীবনের গতিপথে নতুন ছন্দের মাত্রা যোগাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পর্যটকের আনাগোনা লক্ষ্যণীয়। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পর্যটকদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠে সৈকত এলাকা। চোখ জুড়ানো ঝাউ বাগানের সারি, বিশাল বালুচর, সাগরের ঢেউ, কাঁকরার লুকোচুরি, সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের অপূর্ব দৃশ্য মনকে আন্দোলিত করে।

সম্ভাবনাময় বাঁশখালী উপকূলীয় সমুদ্র সৈকত ( ছবি: দৈনিক অধিকার)

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব সমন্বয় থাকলেও কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের মতো এখানে গড়ে ওঠেনি বিনোদন স্থাপনা। এখানে ঢেলে সাজানোর মতো বিশাল ক্ষেত্র রয়েছে। সরকারি পৃষ্টপোষকতা পেলেই বাঁশখালী সমুদ্র সৈকত হয়ে উঠবে দেশের অন্যতম প্রধান পর্যটন স্পট।

কক্সবাজার বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের নক্ষত্র। বাঁশখালী উপজেলা কক্সবাজার জেলার সঙ্গে সংযুক্ত চট্টগ্রামের একটি উপজেলা। বর্তমানে বাঁশখালী আঞ্চলিক সড়ক হয়ে কক্সবাজারের পথে যানবাহন অস্থায়ীভাবে চলছে। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম-বাঁশখালী-কক্সবাজার মহাসড়কের নির্মিতব্য প্রস্তাবনা রয়েছে। বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন নজর দিলে বাঁশখালীকে পর্যটন সিটি হিসেবে রূপান্তর করা মোটেও অসম্ভব নয়।

বাঁশখালী ইকোপার্কের সুউচ্চ পাহাড় থেকে চা বাগান ও সমুদ্র বালুচরে ক্যাবল কার সংযোজনে পর্যটনের আকর্ষণের মাত্রা বাড়ালে পর্যটন শিল্পে এক নতুন দিগন্ত সৃষ্টি হবে। মিনি কক্সবাজার হিসেবে গড়ে উঠবে বাঁশখালী উপজেলা। এখানে বিশাল সমুদ্র সৈকত, সুদর্শন ইকোপার্ক, চিরসবুজের দৃষ্টিনন্দন চা বাগান, ইকোট্যুরিজম স্পট (তারেক পার্ক) যা অদ্বিতীয় উপজেলা হওয়ার স্বাক্ষর রাখে। বহুমুখী সৌন্দর্যের অপরূপ মায়ায় প্রাকৃতিক সৃষ্টি, হৃদয় নিংড়ানো অনন্য অনুভূতি, দুর্লভ মুহূর্তে প্রকৃতির নানাবিধ সৌন্দর্য্যে পর্যটকরা নিঃসন্দেহে বিমোহিত হবেন।

এ ছাড়া শিল্প-সংস্কৃতি ও শিক্ষা ক্ষেত্রে এলাকার মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হবে নতুন জাগরণ। বাঁশখালী ইকোপার্ককে ঘিরে এখন পর্যটকদের আগ্রহের শেষ নেই। নায়ক-নায়িকারাও শুটিং করার জন্য বেছে নিচ্ছেন এ স্থানটিকে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা ইকোপার্ককে গবেষণা কাজেও ব্যবহার করছেন। বাঁশখালী ইকোপার্কে রয়েছে বহুমুখী কৃত্রিম সৌন্দর্যের স্থাপনা আর বাংলাদেশের দীর্ঘতম ঝুলন্ত সেতু।

বিভিন্ন প্রজাতির পশুপাখি, জলজ উদ্ভিদ, লেকের বিশাল জলরাশি ও বন্য প্রাণীর সুরেলা কোলাহলে এক অন্যন্য মায়ার অনুভূতি সৃষ্টি হয় বছর জুড়ে। পূর্বে পাহাড় চূড়ায় নানা প্রজাতির বৃক্ষের সমাহার দাঁড়িয়ে পর্যটকদের অভিবাদন জানাচ্ছে। সুউচ্চ পাহাড়ের শীর্ষদেশে উঠে অনায়াসে দূরবীন ছাড়া খালি চোখেই দেখা যায় অদূরে বঙ্গোপসাগরের অথৈ জলরাশি।

বাঁশখালীর পশ্চিমাঞ্চল বিশেষ করে প্রেমাশিয়া, খানখানাবাদ, বাহারছড়া, কাথরিয়া পয়েন্টসহ পুরো সমুদ্র বালুচর অযত্ন অবহেলায় পড়ে রয়েছে। স্থায়ী টেকসই বেড়িবাঁধ হলেই পুরো উপকূলের সৌন্দর্য্য উপভোগ করা যাবে। ধীরে ধীরে চলচিত্রের নায়ক-নায়িকাদের পদাচরণা বাড়বে, দেশীয় পর্যটকদের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটকদের আগমন হবে। এই উপজেলার ওপর সরকারের সুনজর পড়লেই পর্যটন শিল্প হিসেবে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখবে।

উপজলার এ পর্যটন শিল্পকে পরিচিত ও আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য সরকারি ও বেসরকারি উভয়ের সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন। রাস্তাঘাটের উন্নয়নের প্রতি সরকারের সুনজর এবং পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, পর্যটকদের আগমন ও স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করার জন্য স্থিতিশীলতা বজায় রাখলেই বাঁশখালী হবে পর্যটনপ্রেমীর আকর্ষণীয় বিনোদন স্পট। এরপর সরকার এখান থেকে কাঙ্খিত রাজস্ব পাবে।

যোগাযোগ চট্টগ্রাম শহর থেকে বাঁশখালী উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগের পথ হচ্ছে- আনোয়ারা-বাঁশখালী আঞ্চলিক সড়কটি। যে কোনো যানবাহনে যাতায়ত করা যায় এ উপজেলার সঙ্গে। বাঁশখালী ইকো পার্ক চট্টগ্রাম শহর থেকে সড়কপথে ৪৭ কিলোমিটার দক্ষিণে শীলকূপ পৌঁছে চার কিলোমিটার পূর্বে যে কোনো যানবাহনে যাওয়া যায়। বৈলগাঁও চা বাগান চট্টগ্রাম শহর থেকে সড়কপথে ২৩ কিলোমিটার দক্ষিণে পুকুরিয়া চানপুর বাজার পৌঁছে পাঁচ কিলোমিটার পূর্বে যেকোনো যানবাহনে যাওয়া যায়। বাহারছড়া সমুদ্র সৈকত চট্টগ্রাম শহর থেকে সড়কপথে ৩২ কিলোমিটার দক্ষিণে কালীপুর পৌঁছে ছয় কিলোমিটার পশ্চিমে যেকোনো যানবাহনে যাওয়া যায়।

ওডি/ এফইউ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড