মনিরুজ্জামান, নরসিংদী
মুসলমানদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মধ্যে ঈদুল আজহা অন্যতম। এ ঈদ উপলক্ষে মুসলিম রীতি অনুযায়ী পশু কুরবানি করা হয়ে থাকে। ফলে ধর্মীয় এ অনুষ্ঠান আসলেই প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসানো হয় অস্থায়ী কুরবানির পশুর হাট। তবে এসব পশুর হাট বসানোর কিছু নিয়ম থাকলেও নরসিংদীতে অনেকেই মানছেন না এই নিয়ম। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠসহ খেলার মাঠ ও পাকা সড়কের পাশে পশুর হাট বসানোয় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মানছেন না সংশ্লিষ্টরা।
আর বিষয়টি দেখেও যেন না দেখার মতো রয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রশাসনে কর্মরতরা। ফলে স্কুলমাঠ ও খেলার মাঠে হাট বসানোয় একদিকে যেমন মাঠগুলোতে ছোট-বড় গর্ত তৈরি হচ্ছে, অন্যদিকে যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে ময়লা আবর্জনা। এছাড়া রাস্তাগুলোতে পশুর হাট বসালে যানবাহন চলাচলে বিঘ্নতার সৃষ্টি হয়ে দুর্ভোগে পরতে হয় ঈদে ঘরমুখো মানুষদের।
জানা যায়, ঈদকে কেন্দ্র করে এ বছর নরসিংদীর ৬টি উপজেলায় মোট ৭৩টি অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর অনুমতি দিয়েছে নরসিংদী জেলা প্রশাসন। এগুলোর মধ্যে নরসিংদী সদর উপজেলায় ১১টি, পলাশ উপজেলায় ৮টি, শিবপুর উপজেলায় ১৪টি, মনোহরদীতে ৯টি, বেলাবতে ৬টি ও রায়পুরা উপজেলায় ৬টি অস্থায়ী পশুর হাট বসেছে।
নরসিংদীর উল্লেখযোগ্য বাজারের মধ্যে একটি মনোহরদী বাসস্ট্যান্ড বাজার। শুক্রবার (৯ আগস্ট) সরেজমিনে এ বাজার ঘুরে দেখা যায়, নামেমাত্র বাজার হলেও বাজারে নেই পর্যাপ্ত পরিমাণে পশুর হাট বসানোর মতো স্থান। ফলে পাকা রাস্তার দুই পাশেই পশু দাঁড় করিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে হাট। আর ক্রেতারাও রাস্তার উপর দাঁড়িয়েই পশু পছন্দ করে ক্রয় করছেন। এতে ঢাকা-নরসিংদী রুটের বাস, মাইক্রোবাস ও ট্রাক যাতায়াত করতে না পেরে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়ে দুর্ভোগে পড়েছে গন্তব্যে ছুটে চলা মানুষ।
এ দিকে নরসিংদী সদর উপজেলার করিমপুর বাজারের নাম দিয়ে করিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে বসানো হয়েছে পশুর হাট। একইভাবে পঞ্চবটি বাজারের নাম দিয়ে রসুলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে বসানো হয়েছে এবারের কুরবানির পশুর হাট। ফলে শিক্ষার্থীদের মাত্র দুই-একটি ক্লাস করিয়েই ছুটি দিয়ে দিচ্ছেন শিক্ষকেরা। এছাড়া নজরপুর ইউনিয়নের চম্পকনগরে নওয়াব আলী গাজী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে কোনো প্রকার অনুমতি ছাড়াই বসানো হয়েছে অস্থায়ী পশুর হাট। এখানে স্কুল ছুটি দিয়ে স্কুলের বারান্দার খুঁটিতে পশু বেঁধে রেখে চলছে কুরবানির পশু ক্রয়-বিক্রয়।
রাস্তায় পশুর হাট বসানোর বিষয়ে জানতে চাইলে হাট কর্তৃপক্ষ জানায়, দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই চলে আসছে। এখন নতুন করে কোথাও হাট বসছেনা। আর প্রতি বছরের কয়েকটা দিন একটু কষ্ট তো হতেই পারে। এ সময় বাজারের নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে সড়কের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলেও জানান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এ দিকে শিবপুর উপজেলার শহীদ আসাদ কলেজ মাঠে কয়েক বছর ধরে বসানো হচ্ছে কুরবানির পশুর হাট। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে কঠোর হুঁশিয়ারি থাকলেও মাঠ প্রশাসন মানছেন না এই প্রজ্ঞাপন।
এ ব্যাপারে নরসিংদী জেলা প্রশাসন জানায়, কুরবানির বাজারের নামের প্রস্তাব ইউএনওদের মাধ্যমে আসে। আর তা দেখেই আমরা অনুমোদন দিয়ে থাকি। তবে অনুমোদনের সময় কোনো খেলার মাঠ বা রাস্তার পাশে বাজারের কথা উল্লেখ থাকলে অনুমোদন দেওয়া হয় না।
প্রশাসনের একটি সূত্রে জানায়, উপজেলা প্রশাসনের কর্মচারীদের যারা কাগজপত্র তৈরি করেন তারাই কিছু অর্থের বিনিময়ে স্কুল মাঠ ও রাস্তার পাশের বাজারের বিষয়গুলো গোপন রাখেন। ফলে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতিটি বাজার সম্পর্কে জানা সম্ভব হয় না। তাই এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
ওডি/আইএইচএন
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড