মনিরুজ্জামান, নরসিংদী
মেঘনা, আড়িয়াল খাঁ, শীতলক্ষ্যা ও পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদী বিধৌত প্রাচীন সভ্যতা ও ঐতিহ্যে লালিত নরসিংদী জেলা। যে সকল নদীকে কেন্দ্র করে আমাদের যে সভ্যতা গড়ে উঠেছে তার মধ্যে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র অন্যতম। ঐতিহ্যবাহী পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের বাসিন্দা নরসিংদীবাসী। এ জেলার মাধবদীর বাবুরহাট গড়ে উঠেছে ব্রহ্মপুত্র নদকে কেন্দ্র করে।
জানা গেছে, এক সময় পুরাতন ব্রহ্মপুত্র দিয়ে পণ্য আনা নেওয়া হতো নৌপথে। আর নদী কেন্দ্রিক সভ্যতা তো এভাবেই নির্মিত হয়েছে। মাধবদীতে আজ কোটি কোটি টাকার কাপড়, রং, সুতা বেচা-কেনা হয়। প্রায় অর্ধশত বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখা এখানে, অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে অনেক। তবে এখন মাধবদী আর আগের মতো নেই। শব্দ দূষণ, বায়ু দূষণ, পরিবেশ দূষণ ও পানিদূষণে আক্রান্ত। আর এর মূলে রয়েছে সেই পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ। অথচ এ অঞ্চলের অন্যতম প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র মাধবদীর জন্মই এই নদীর গর্ভে। প্রাচ্যের ম্যানচেস্টার খ্যাত বাবুরহাট এই ব্রক্ষপুত্রের দান।
পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদীর স্বাভাবিক গতিপথ রুদ্ধ হয়েছে কিছু মানুষের কারণে। শিল্প কলকারখানা ও ডাইংয়ে কেমিকেল মিশ্রিত পানি নদীতে পড়ে নদীর পানির পাশাপাশি এলাকার বায়ু ও আজ দূষিত হয়ে গেছে। নদীর পানি আজ আর পানি নেই । এ যেন বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ! দেখলে মনে হয় যেন একরাশ পিচ গলিয়ে নদীগর্ভে কেউ ফেলে রেখেছে।
পানি দূষণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নদী দখলের উৎসব। স্থানীয় প্রশাসন থেকে শুরু করে উঁচু মহল পর্যন্ত সবাই এ ব্যাপারে নীরব দর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ। শুধুমাত্র নরসিংদীর পুরাতন ব্রহ্মপুত্র কিংবা হাঁড়ি ধোয়া, আড়িয়াল খাঁ নদী নয়, বাংলাদেশের সবগুলো নদী আজ দখল ও দূষণের কবলে।
মনে হয় একরাশ পিচ গলিয়ে নদীগর্ভে কেউ ফেলেছে (ছবি : দৈনিক অধিকার)
এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে নদীর সীমানা, দখল-দূষণ ও নদী ভরাট বিষয়ে প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক মামলা ঝুলে আছে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিটি কিংবা জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন আইন-২০১৩ থাকলেও বাস্তবে এর কোনো প্রয়োগ নেই। শিল্প ও নগর সভ্যতার আধুনিক এই ডিজিটাল যুগে এসে আমরা নানাভাবে প্রকৃতির সঙ্গে বৈরি আচরণ করছি।
এ বিষয়ে মাধবদী পৌর মেয়র মোশাররফ হোসেন প্রধান মানিক বলেন, নদী আমাদের প্রাণ। তাই নদীকে দূষণ ও দখলের হাত থেকে রক্ষা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। ইতোমধ্যেই নদীর পানি দূষণের হাত থেকে রক্ষা করতে নরসিংদী ও মাধবদী পৌরসভার যৌথ উদ্যোগে সব কলকারখানা ও ডাইং মালিকদের তাদের বর্জ্য ও কেমিক্যাল মিশ্রিত পানি ইটিপি প্লান্টের মাধ্যমে শোধন করে নদীতে ফেলার জন্য কঠোর হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া ব্রক্ষপুত্রের স্বাভাবিক নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে ইতোমধ্যেই নদী খননের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
তবে আশার কথা হলো, নরসিংদীর তিনটি নদী পুনঃখননের কাজে ৫২৮ কোটি ১৮ লাখ টাকার বাজেট দেওয়া হয়েছে। যার অংশ হিসেবে নরসিংদীর আশেপাশের নদী খনন কাজ শুরু হয়েছে। কোনো কিছুই যেন নদী খনন এবং নদী দূষণরোধ করার ব্যাপারে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়। পুরাতন ব্রহ্মপুত্র পুনঃখননের মাধ্যমে তার স্বাভাবিক নাব্যতা ফিরে পাবে এটাই নরসিংদীবাসীর প্রত্যাশা। এত আশার আলোর মাঝে ও নরসিংদী তথা মাধবদীবাসীর প্রশ্ন ব্রক্ষপুত্র নদী তার হারানো যৌবন ফিরে পাবে তো?
ওডি/ এফইউ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড