• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৫ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বাহুবলে বিলুপ্তির পথে বাড়ইহাটির সুস্বাদু বাংলা পান

  হবিগঞ্জ (বাহুবল) প্রতিনিধি

০১ আগস্ট ২০১৯, ১৩:৫৩
বাহুবল
বিলুপ্তির পথে বাড়ইহাটির সুস্বাদু বাংলা পান (ছবি: দৈনিক অধিকার)

হবিগঞ্জ জেলার বাহুবলের বাড়ইহাটির সুস্বাদু বাংলা পান বিলুপ্তির পথে। রোগ-বালাই, পুঁজির অভাব এবং বাজারজাত সমস্যাসহ নানান প্রতিকূলতাকে উৎরে উঠতে পারছেন না স্থানীয় কৃষকরা। ফলে এ পান উৎপাদনের সাথে জড়িত বাড়ই সম্প্রদায় অন্যান্য পেশায় মনোনিবেশ করছেন।

পান বাংলাদেশের একটি অন্যতম অর্থকরী ফসল। বিভিন্ন ধরণের ধর্মীয় উৎসব সহ বিয়ে-শাদীতে পান-সুপারির কদর আদিকাল থেকে। পানের জাতের মধ্যে বাংলা পান অন্যতম। বাংলা পান চাষে উপজেলার লামাতাশী ইউনিয়নের দুই শতাধিক পরিবার বহুকাল ধরে জড়িত রয়েছে। এ পান স্থানীয়দের কাছে খুবই প্রিয়। এর চাহিদাও প্রচুর। এ অ লে বাংলা পানের পরিকল্পিত চাষাবাদ ঘুরিয়ে দিতে পারে স্থানীয় বাড়ই সম্প্রদায়ের ভাগ্যের চাকা। জাতীয় অর্থনীতিতেও রাখতে পারে ভূমিকা।

এ প্রসঙ্গে মুদাহারদ গ্রামের পান চাষী কৃপেশ চন্দ্র দেবের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, পান চাষে লাভ অনেক। ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচসহ সংসারের যাবতীয় খরচ চলে পান চাষের আয় দিয়ে। তিনি বলেন, অতীতে এ এলাকায় ব্যাপকভাবে পান চাষ হতো। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বাহিরেও এ পান রপ্তানি করা যেত। কিন্তু নানাবিধ সমস্যায় পানের চাষ দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্বাধীনতার আগ থেকে বাড়িগ্রামের বাড়ই সম্প্রদায়ের কিছু চাষী স্থানীয়ভাবে পান চাষ করে ব্যাপক সাফল্য লাভ করে। পরে বাড়িগ্রাম, সেলিমনগর, লামাতাশি, মুদাহরাবাদ, ফরিদপুর, বড়িকান্দি, চকিগ্রামসহ আশপাশের ১০/১৫টি গ্রামের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের মাঝে পান চাষে আগ্রহ সৃষ্টি হয়। পর্যায়ক্রমে ওই এলাকার চাষীরা পান চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েন এবং সফলতার মুখও দেখেন।

বর্তমানে চাষীরা পান চাষের উপর আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। আগের মতো কেন পান চাষ হয় না? -এমন প্রশ্নের জবাবে বাড়িগ্রামের পান চাষী কৃপাময় দেব বলেন, পান চাষের প্রয়োজনীয় উপকরণ যেমন - সার, খৈল, বরজ তৈরির বাঁশ ও কীটনাশকের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং শ্রমিকদের মজুরির হার বাড়ছে। সেই তুলনায় পানের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে না। পান সংরক্ষণ ও বাজারজাত করণেরও সুব্যবস্থা নেই। এতে করে পান চাষীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

রোগবালাই পান উৎপাদনের একটি প্রধান অন্তরায়। পানে গোড়া পঁচা, ঢলে পড়া, পাতা পঁচা, অ্যানথ্রাকনোজ ও সাদা গুঁড়া ইত্যাদি রোগ দেখা যায়। এর মধ্যে পঁচন রোগ পানের জন্য একটি মারাত্মক রোগ। গাছের যে কোনো বয়সে এ রোগ হতে পারে। পানের বরজে সাধারণত কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাসে এ রোগের প্রকোপ মহামারী আকারে দেখা দেয়। এ রোগের লক্ষণ হচ্ছে- গাছের গোড়া আক্রান্ত হয়। গোড়ায় লক্ষ্য করলে দেখা যাবে- মাটির কাছের একটি বা দুটি পর্ব মধ্য কালো বর্ণ ধারণ করেছে। উপরে লতা-পাতা হলুদ হয়ে যায় ও ঝড়ে পড়ে। মাটি সংলগ্ন লতার ওপর সাদা সুতার মতো ছত্রাক মাইসেলিয়া দেখা যায়। পরে হালকা বাদামি থেকে বাদামি সরিষার মতো এক প্রকার অসংখ্য দানার মতো স্কে-রোসিয়া দেখা যায়। মাটি সংলগ্ন ডাঁটা পঁচে যায় এবং গাছ ঢলে পড়ে এবং মরে যায়। পানের রোগগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে ফলন অনেকাংশে বৃদ্ধি পেত।

পানের রোগ নিয়ে মুদাহরবাদ গ্রামের অনুরঞ্জন দেবের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পঁচন রোগটা সবচেয়ে ক্ষতিকারক রোগ। এ রোগ ছোঁয়াচে, যার জন্য রোগাক্রান্ত গাছ মাটিতে গর্ত করে পুঁতে রেখে স্থানটিকে বেড়া দেয়া হয়। এক বছর পর্যন্ত ওই স্থানে চলাফেরা করা নিষেধ।

ওডি/এএন

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড