• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বন্দুকযুদ্ধে নিহত : পুলিশ বলছে মাদক কারবারি, পরিবারের দাবি দিনমজুর

  কক্সবাজার প্রতিনিধি

২২ জুলাই ২০১৯, ১৯:২৯
কক্সবাজার
বন্দুকযুদ্ধে নিহত মোহাম্মদ হোসেন (ছবি : দৈনিক অধিকার)

কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশের সাথে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মোহাম্মদ হোসেন (৩৯) নামে এক মাদক কারবারি নিহত হয়েছে। এই ঘটনায় আহত হয়েছে অন্তত তিন পুলিশ সদস্য। উদ্ধার করা হয়েছে অস্ত্র, গুলি ও ইয়াবা।

রবিবার (২১ জুলাই) রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের পশ্চিম সাতঘরিয়া পাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত যুবক উক্ত এলাকার প্রয়াত আনু মিয়ার ছেলে। তিনি চিহ্নিত মাদক কারবারি বলে দাবি করেছে পুলিশ।

টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ জানান, রাতে মাদক পাচারের গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশের একটি টহল টিম উপজেলার হোয়াইক্যং পশ্চিম সাত ঘরিয়া পাড়া এলাকায় অভিযানে যায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক কারবারিরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। এ সময় এএসআই ওয়াহিদ উল্লাহ, কনস্টেবল সজিব সরকার ও মনির হোসেন আহত হয়।

জবাবে পুলিশও গুলি ছুঁড়লে মাদক কারবারিরা পিছু হঠে। এ সময় মোহাম্মদ হোসেন গুলিবিদ্ধ হয়। গুলিবিদ্ধ মোহাম্মদকে উদ্ধার করে টেকনাফ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঘটনাস্থল থেকে দেশীয় তৈরি দুইটি অস্ত্র, ১১ রাউন্ড তাজা কার্তুজ ও পাঁচ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।

তিনি আরও জানান, ভোরে মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে নেওয়া হয়েছে। উক্ত ঘটনার পৃথকভাবে মামলা প্রক্রিয়া চলছে।

জমি সংক্রান্তের বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের মিথ্যা মামলা:

বন্দুকযুদ্ধে নিহত মোহাম্মদ হোসেনের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মোহাম্মদ হোসেন শুধুই একজন দিনমজুর। নুন আনতে পান্তা ফুরায় এমন অবস্থা। দিনমজুরি করে যা আয় হতো সেটা দিয়ে কোনোরকম পরিবার চলত।

নিজের শেষ সম্বল একখণ্ড জমির ওপর নজর পরে স্থানীয় বাবুল নামের এক ইয়াবা গডফাদার পরিবারের। এক পর্যায়ে ইয়াবা গডফাদার বাবুল তার পালিত বাহিনী নিয়ে জোরপূর্বক জমি দখলে আসলে বাধা দেন মোহাম্মদ হোসেন। এই জমির বিরোধ নিয়ে মারামারির ঘটনায় প্রথমে একটি মামলাও হয়।

পরবর্তীতে ইয়াবা কারবারি বাবুল ও মামলাবাজ একজন আইনজীবী মিলে মোহাম্মদ হোসেন ও তার পরিবারকে জমি থেকে উচ্ছেদ এবং এলাকা ত্যাগ করার জন্য বিভিন্ন সময় ষড়যন্ত্র এবং মামলা হামলার হুমকি ধমকি দিয়ে আসছিল। মামলা ভোগান্তিতে এভাবেই ইয়াবা মামলার পলাতক আসামি ও অস্ত্র উদ্ধার মামলায় আসামি হয় মোহাম্মদ হোসেন। সে থেকে পলাতক থাকতেন নিহত মোহাম্মদ হোসেন। এভাবেই পুরো পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে একের পর এক গায়েবি, মিথ্যা ও অজ্ঞাত পরিচয় মামলা হয়। এরপর থেকে পরিবারটিতে নেমে আসে অন্ধকার এক অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ।

টাকার অভাবে মর্গ থেকে লাশ নিতে পরিবারের হিমশিম:

এ দিকে নিহত মোহাম্মদ হোসনের পরিবারের দাবি, শনিবার (২০ জুলাই) বেলা ১২টার দিকে হোয়াইক্যং সাতঘরিয়াপাড়া এলাকা থেকে হোয়াইক্যং ফাঁড়ির পুলিশ তাকে আটক করেন। পরে বন্দুকযুদ্ধে নিহত মোহাম্মদ হোসেনের মরদেহ রোববার (২১ জুলাই) সকালে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে সনাক্ত করে তার পরিবারের সদস্যরা।

কিন্তু ময়না তদন্তের খরচ, দাফন খরচ ও মরদেহ এলাকায় নিয়ে যেতে পরিবহন খরচ জোগাতে হিমশিম খেতে হয় পরিবারটিকে। নিহত মোহাম্মদ হোসনের আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে কিছু টাকা জোগাড় করে প্রাথমিক অবস্থায় ময়না তদন্তের খরচ জোগাড় করতেই দুপুর গড়িয়ে যায়।

কিন্তু এই মরদেহটি গাড়ি যোগে টেকনাফ হোয়াইক্যং নিয়ে যেতে পরিবহন খরচ জোগাতে আরও একবার হিমশিম খেতে হয় নিহত মোহাম্মদ হোসনের পরিবারের। অবশেষে, আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে গাড়ি ভাড়ার আরও কিছু টাকা চাঁদা তুলে সেই টাকা দিয়েই অনেক বিলম্বে বিকালে এলাকার উদ্দেশে মরদেহ নিয়ে রওয়ানা দেন।

এই ধরনের করুণ দৃশ্য অবলোকন করেন কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগী ও তাদের আত্মীয়স্বজন এবং উপস্থিত উৎসুক জনতা। তাদের আত্মচিৎকার আর আহাজারিতে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল এলাকার আকাশ ভারী হয়ে ওঠে।

উল্লেখ্য, এলাকাবাসী ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বন্দুকযুদ্ধে নিহত মোহাম্মদ হোসেনের আরেক ভাই মোহাম্মদ কাশেম (৩২) বুধবার (১০ এপ্রিল) রাতে একইভাবে টেকনাফে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।

ওডি/এমবি

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড