• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ঝালকাঠিতে নৌকায় ভাসমান লেবুর হাট

  হাসান আরেফিন, ঝালকাঠি

২২ জুলাই ২০১৯, ১০:৫২
ভাসমান লেবুর হাট
ঝালকাঠি সদর উপজেলা ভীমরুলী এলাকায় ভাসমান লেবুর হাট (ছবি : দৈনিক অধিকার)

গরমে ঠান্ডা পানির সাথে এক গ্লাস লেবুর শরবতের জুড়ি নেই। আর তা যদি হয় কাগজি লেবু তা হলে তো কথাই নেই। ভিটামিন সিযুক্ত রসালো এই লেবুর ঘ্রাণে এখন ভরে গেছে ঝালকাঠির ২২ গ্রাম। লেবু মৌসুমে জমে উঠেছে ঝালকাঠির ভিমরুলীতে নৌকায় ভাসমান লেবুর হাট। প্রতিদিন এখানে লাখ লাখ কাগজি লেবু কেনা-বেচা হচ্ছে। পাইকাররা এখানে ডিঙি নৌকা থেকে লেবু কিনে নিয়ে গাড়িতে করে ঝালকাঠি বরিশাল আড়তে নিয়ে বিক্রি করছে। কেউ বা ট্রলারের মাধ্যমে নিয়ে যায় আবার অনেকে সেখান থেকে সড়ক পথে নিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়।

ঝালকাঠির বাউকাঠি, শতদশকাঠি, ভিমরুলী, কাফুরকাঠি, আটগড়, গাভারামচন্দ্রপুর, পোষন্ডা, ডুমুরিয়া, খেজুরা, কীর্তিপাশা, মিরাকাঠিসহ ২২ গ্রাম এখন লেবুর ঘ্রাণে ভরপুর। প্রতিদিন এসব গ্রামের কৃষকরা গাছ থেকে লেবু সংগ্রহ করে নৌকায় স্থানীয় ভিমরুলী বাজারে নিয়ে আসছে। এখানে অপেক্ষমান পাইকাররা নৌকায় বসেই কৃষকের লেবু কিনে রাখছে নৌকা থেকেই। একদিকে নৌকায় লেবুর হাট অন্যদিকে পানির উপরে সবুজের সমারোহ দেখে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। গত বছরের তুলনায় এবার লেবুর ফলন একটু কম হওয়ায় দাম বেশি। গত বছর ১ পোন (৮০টি) লেবু ছিল ১৫০ টাকা । এবার তা বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। এসব গ্রামের কৃষকরা কাঁদি কেটে লেবুর চাষ করছে যুগ যুগ ধরে। এক একটি কাঁদি ১০০ থেকে ১১০ হাত লম্বা এবং ৭ থেকে ৮ হাত চওড়া হয়। প্রতিটি কাঁদিতে ২২টি গাছ লাগানো যায়। এরকম ১ বিঘার কাঁদিতে লেবু চাষ করতে খরচ হয় ৫০ হাজার টাকা। ফল ধরার পরে প্রতি বছর লেবু বিক্রি করে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা পাওয়া যায়। এ হিসেবে ২২ গ্রামের লেবু বিক্রি করে প্রতি বছরে কৃষকরা আয় করছে দেড় থেকে দুই কোটি টাকা।

লেবুর পাইকার মিলন ব্যাপারী জানান, ভিমরুলী হাট থেকে পোন প্রতি লেবুর সাইজ অনুযায়ী ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় কেনা হয়। পটুয়াখালী থেকে মালবাহী ট্রলার আসলে সেই ট্রলারে পটুয়াখালী মোকামে পাঠানো হয়। ওখানের কাঁচামাল বিক্রেতাদের আগেই চুক্তি করা থাকে। কেনা দামের ওপর লাভ রেখে তা বিক্রি করা হয়।

ভিমরুলী গ্রামের লেবু চাষি মানিক মজুমদার জানান, একবার লেবু গাছ লাগানোর পর তা একাধারে ২০ থেকে ২৫ বছর ফলন দেয়। বছরে ৩ বার ফল আসে। ঝালকাঠির এ কাগজি লেবুর কদর ও সরবরাহ হয় ঢাকা, বরিশাল, ফরিদপুর, মাদারিপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। ফলন ধরার পর দুইভাবে লেবু বিক্রি করে থাকি। স্থানীয় ভিমরুলী বাজারে নৌকায় অপেক্ষমান পাইকারদের জন্য। এছাড়াও গাছে ফল আসার পর পাইকারদের কাছে বাগান বিক্রি করি এককালীন নগদ টাকায়। এছাড়াও আমরা নিজেরাই কলম ও বিচির মাধ্যমে চারা তৈরি করি।

শতদশকাঠির লেবু চাষি সুভাষ, অতুল হালদার জানান, আমরা সহজ শর্তে ঋণ পেলে এবং কৃষি বিভাগের সহযোগিতা পেলে লেবু চাষ আরও সম্প্রসারণ করতে পারি। কিন্তু তা পাচ্ছি না। সরকার কৃষকদের সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করার কথা শুনছি কিন্তু তার সুফল আমাদের ভাগ্যে জোটেনি। তাই চড়া সুদে এনজিওর কাছ থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে।

ঝালকাঠি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. ফজলুর রহমান জানান, ঝালকাঠি সদর উপজেলা উত্তরাঞ্চলের চাষিরা ব্যাপকভাবে কাগজি লেবু চাষ করেন। এ লেবু ছোট হলেও ভিতরে পর্যাপ্ত রস থাকে। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ লেবুর প্রতি সবারই কম-বেশি আকর্ষণ রয়েছে। লেবু চাষিদের কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সার্বিক পরামর্শও দেওয়া হয়।

ওডি/এসজেএ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড