লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
মেয়েকে ভর্তি করানোর জন্য স্কুলে খোঁজ নিতে গিয়েছিলেন তাসলিমা বেগম রেনু (৪০)। কিন্তু তিনি ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন। আগামী জানুয়ারিতে তার আমেরিকায় যাওয়ার কথা ছিল।
আমেরিকা যেতে রেনু সব প্রস্তুতি গুছিয়ে নিয়েছিলেন। মারা যাওয়ার দিন সকালে জাতীয় পরিচয়পত্র ফটোকপি করার জন্য বাসা থেকে বের হন তিনি। ওই দিন ছোট মেয়েকে খালার কাছে রেখে যান।
রেনুর এক ভাই ও ৫ বোন। মাস্টার্স শেষ করা রেনু সবার ছোট। পড়ালেখা শেষে তিনি ঢাকায় আড়ং ও ব্র্যাকে চাকরি করেছিলেন। গত দুই বছর তিনি প্রাইভেট পড়াতেন। পারিবারিক কলহের কারণে প্রায় দুই বছর আগে স্বামীর সঙ্গে রেনুর ডিভোর্স হয়। তাদের সংসারে তাসফিক আল মাহি (১১) ও তাসলিমা তুবা (৪) নামে দুই সন্তান রয়েছে। বিচ্ছেদের পর ছেলে বাবার সঙ্গে থাকে। আর মেয়ে মায়ের কাছে থাকত।
রবিবার (২১ জুলাই) বেলা ২টার দিকে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার উত্তর সোনাপুর গ্রামে এসব কথা বলেন নিহত রেনুর ভাগনি নূরজাহান বেগম মুন্নি। এ সময় পরিকল্পিতভাবে গুজব ছড়িয়ে মানুষ হত্যার বিচারের দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চান তিনি।
শনিবার (২০ জুলাই) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রাজধানীর উত্তর পূর্ব বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে রেনুকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। মেয়েকে ভর্তির জন্য ওই স্কুলে খোঁজ নিতে গিয়ে কথাবার্তায় সন্দেহ হলে মুহূর্তের মধ্যে লোকে জড়ো হয়ে পিটুনি দিলে তার মৃত্যু হয়।
রেনুকে হত্যার জন্য পরিবারের সদস্যরা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহনাজ বেগম ও অফিস সহকারী জান্নাতুল ফেরদাউসকে দায়ী করেছেন।
তারা বলছেন, প্রধান শিক্ষক ইচ্ছা করলে রেনুকে বাঁচাতে পারতেন। যখন ছেলেধরা বলে স্কুলের ভেতরে গুজব ছড়াচ্ছিল, তখন রেনুকে রুমে বসিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা যেত। তাহলে আর নির্মম পিটুনির বলি হয়ে রেনু মারা যেত না। এজন্য প্রধান শিক্ষক ও অফিস সহকারীকে গ্রেফতারের দাবি জানান রেনুর পরিবারের সদস্যরা।
এদিকে মেয়ের মৃত্যুর কথা শুনে বৃদ্ধ মা ছবুরা খাতুন অজ্ঞান হয়ে পড়েছেন। তিনি ঢাকায় ওই মেয়ের বাসায় থাকতেন। দুই বছর আগে স্বামীহারা হয়েছেন তিনি। এখন আদরের ছোট মেয়ে নির্মমভাবে চলে যাওয়ার খবর তাকে নিয়ে এসেছে মৃত্যুর দুয়ারে।
লক্ষ্মীপুর শহর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে নিহত রেনুর গ্রামের বাড়ি। গ্রামে পারিবারিক করবস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।
নিহতের ভগ্নিপতি অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী বদিউজ্জামান বলেন, অভিভাবকরা সন্তান ভর্তি করার জন্য স্কুলে যাবেন, এটাই স্বাভাবিক। তাই বলে গুজব ছড়িয়ে একজন শিক্ষিত-সংগ্রামী নারীকে এভাবে প্রকাশ্যে হত্যা করতে হবে। এ সভ্য সমাজে এটা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের গ্রেফতারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাচ্ছি। যেন আর কোনো নারী এভাবে গুজবের বলি না হয়। রেনুর আমেরিকা যাওয়ার কথা ছিল, সেখানে তার একমাত্র ভাই আলী আজগর ২৩ বছর ধরে বসবাস করছেন।
রায়পুরের সোনাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইউছুফ জালাল কিসমত বলেন, এ ধরনের মর্মান্তিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি চাই না। গুজব এড়াতে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
ওডি/এমআর
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড