রাজীব রাহুল, চট্টগ্রাম
এক কমিটি দিয়েই নয় বছর ধরে চলছে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগ। জেলার আওতাধীন উপজেলা-পৌরসভা কমিটির পরিবর্তন হলেও পরিবর্তন হয় না জেলা কমিটি। জেলা (দক্ষিণ) জুড়ে যারাই কমিটির অনুমোদন দেয় তারাই মেয়াদত্তীর্ণ। দীর্ঘ দিন সম্মেলন না হওয়ায় নতুন নেতৃত্ব বা সাবেক ছাত্রনেতারা আছেন অনেকটা পদহীন। তৃণমূল পর্যায়ে কার্যক্রমহীন কমিটি আগামী সেপ্টেম্বরে বিলুপ্তির ঘোষণা আসার সংবাদে মাঠ পর্যায়ে অনেক নীরব থাকা নতুন কমিটিতে স্থান পেতে ইতোমধ্যে মাঠে নেমেছেন শীর্ষ পদ প্রত্যশী অনেক নেতা।
জানা যায়, ২০১০ সালে পটিয়ার আ ম ম টিপু সুলতানকে সভাপতি ও সাতকানিয়ার পার্থ সারথি চৌধুরীকে সম্পাদক ঘোষণা করে কমিটি করা হয়। এর দু’বছরের মাথায় এসে ঘোষণা করা হয় তিন বছর মেয়াদী পূর্ণাঙ্গ কমিটি। এরপর নানা মুখি গ্রুপিংয়ে থামাতে কয়েক বার নতুন কমিটি গঠনের গুঞ্জন শোনা গেলেও কমিটি করা হয়নি। যার কারণে দলীয় কার্যলয়ের বাইরে তেমন বড় পরিসরে কোনো সমাবেশের আয়োজন করতে পারেনি বর্তমান কমিটি। সরকারের উন্নয়নের প্রচার প্রসারে ভুমিকাহীন ঝিমিয়ে পরা কমিটি বছরের পর বছর গুটিকয়েক নেতার রাজনৈতিক ডাল হওয়ায় নতুন কমিটির বিষয়েও মাথা ব্যাথা নেই আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের।
ছাত্রলীগে নির্দিষ্ট বয়স থাকলেও কত বছর বয়স পর্যন্ত যুবলীগ করতে পারবে তা নির্দিষ্ট করা হয়নি। যার কারণে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও বর্তমান কমিটিতে থাকা নতুন পদ প্রত্যশীরা হতাশ। কিন্তু মাস দুয়েক পরে কমিটি বিলুপ্তির খবর পেয়ে নতুন কমিটির জন্য দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন অনেকে।
দলের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, বর্তমান জেলা যুবলীগের সভাপতি আ.ম.ম টিপু সুলতান চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক পার্থ সারথীর নতুন কমিটি করার কোনো আগ্রহ নেই। বরং সভাপতি পদে আসার জন্য সাধারণ সম্পাদক পার্থ সারথী ভেতরে ভেতরে কাজ করে যাচ্ছেন। নিজের মাঠ গোছানোর পরে কমিটি গঠনের দিকে নজর দিবেন তিনি। এছাড়াও বর্তমান জেলা যুবলীগের সভাপতি টিপু সুলতান স্বপদে বহাল থাকতে আগ্রহী বলে জানা গেছে।
এদিকে নতুন কমিটিতে শীর্ষ পদে আসতে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতাসহ বর্তমান কমিটির কয়েকজন নেতা। তার মধ্যে সভাপতি পদে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক পটিয়া উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ রহিম, দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি দিদারুল ইসলাম চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা যুবলীগের এক নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বোরহান উদ্দিন চৌধুরী মুরাদ, কর্ণফুলীর বড়উঠান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দিদারুল আলম দিদার, দক্ষিণ জেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সোলাইমান।
সাধারণ সম্পাদক পদে দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সফিউল আলম শেফু, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য আবু সাদাত মো. সায়েম, বোয়ালখালী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহবায়ক সাইফুল ইসলাম, সংগঠক ও সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা এম নুরুল হুদাসহ কয়েকজন।
নতুন কমিটির সভাপতি পদ প্রার্থী কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক এম.এ রহিম বলেন, আমি দীর্ঘদিন ছাত্র রাজনীতি করেছি। বর্তমানে জেলা কমিটির সদস্য ও পটিয়া উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সভাপতি পদের জন্য নিজেকে তৈরি করেছি। যদি বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী না হয় এ পদে তাহলে আমি সভাপতি পদে নির্বাচন করব। আরেক সভাপতি প্রার্থী আনোয়ারা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি বোরহান উদ্দীন চৌধুরী মুরাদ বলেন, আমার নেতার কাছ থেকেই শিখেছি কিভাবে রাজনীতি করতে হয়। কোন সময়ে কোন পরিস্থিতিতে কিভাবে করতে হয়। আমি সভাপতি পদের জন্য একজন যোগ্য হিসাবে প্রার্থী হয়েছি।
সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী আবু সাদাত মো. সায়েম বলেন, আমি তৃণমূল থেকে রাজনীতি করে এসেছি। কখনো পদ পদবীর লোভ করিনি। দলের একজন কর্মী হিসাবে দলের হাল ধরতে চাই। যদি দায়িত্ব পাই তাহলে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগকে দেশের অনান্য জেলার চেয়ে মডেল ও শক্তিশালী হিসাবে গড়ে তুলবো।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সভাপতি আ.ম.ম টিপু সুলতান চৌধুরীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তার নম্বর বন্ধ থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।
সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক পার্থ সারথী বলেন, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, ও ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসলেম উদ্দীন আহমদের নির্দেশনা মোতাবেক যুবলীগ সকল কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছি। কমিটি গঠন একটি চলমান বিষয়, কেন্দ্রীয় কমিটি বিভিন্ন জেলায় যুবলীগের কমিটি সমম্মেলনের মাধ্যমে দিচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় আমাদের যখন সম্মেলনের জন্য নির্দেশনা দিবে তখন আমরা সম্মেলন করব। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মেয়াদ শেষ হলেও তো আমরা কার্যক্রম চালাচ্ছি সিনিয়র নেতাদের সাথে সমন্বয় করে। যেহেতু এখনো কেন্দ্রীয় যুবলীগ আমাদের সম্মেলনের কোনো নির্দেশ দেয়নি। যখন নির্দেশ দিবে তখন সম্মেলন হবে, সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি হবে।
কমিটি হচ্ছে না কেন এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, আমরা বিভিন্ন জেলায় সম্মোলন করে কমিটি দিচ্ছি। চট্টগ্রাম উত্তর, দক্ষিণ ও নগরের কমিটির জন্য কাউন্সিলরদের তালিকা পাঠানোর জন্য নির্দেশ দিয়েছি। কিন্তু এখনো তারা কেউ কাউন্সিলরদের তালিকা দিতে পারেনি। তারা যদি তালিকা দিতে ব্যার্থ হয়, তাহলে কমিটি ভেঙে দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, সেপ্টেম্বরের মধ্যে কমিটি গঠন করতে হবে আমাদের। এরই মধ্যে যারা তালিকা দিবে তাদের সম্মেলন হবে। না দিলে কমিটি ভেঙে দেওয়া হবে। তারপরও সিদ্ধান্ত নিয়ে কমিটি করা হবে।
ওডি/এসএ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড