পাবনা প্রতিনিধি
পাবনার সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের (টিটিসি) ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা সুজাউদ্দৌলার বিরুদ্ধে এক নারী প্রশিক্ষণার্থী (স্কুল শিক্ষিকা) শ্লীলতাহানির মামলা করেছেন। এ মামলার প্রেক্ষিতে শনিবার (১৩ জুলাই) তাকে পাবনা জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) মধ্যরাতে টিটি কলেজের গেস্ট হাউসে প্রশিক্ষণার্থীর অবস্থানকালে অন্য শিক্ষার্থীরা ঘরে তালা দিয়ে পুলিশে খবর দেয়। এ নিয়ে উত্তেজনার এক পর্যায়ে অধ্যক্ষ এবং ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে আসে পাবনা থানা পুলিশ। এরপর শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ওই নারী প্রশিক্ষণার্থী এবং অধ্যক্ষ নিজেদের নির্দোষ বলে দাবি করেন।
এ সময়ের মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে কেউ কোনো অভিযোগ না দিলে গোলক-ধাঁধায় পড়ে পুলিশ। পরে পুলিশের ব্যাপক জিজ্ঞসাবাদে ঘটনার মোড় পাল্টে যায়। দিনভর নাটকীয়তার পর শুক্রবার বিকালে ওই প্রশিক্ষণার্থী ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির মামলা করেন।
ওই প্রশিক্ষণার্থী অভিযোগ করেন, অধ্যক্ষ তাকে প্রায়ই উত্ত্যক্ত করতেন এবং এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে তিনি তাকে গেস্ট হাউসে অধ্যক্ষের কক্ষে আসতে বললে তার শ্লীলতাহানি করা হয়। পরে ওই নারীর মামলায় পুলিশ অধ্যক্ষকে গ্রেফতার দেখায়। এ সময় নারী প্রশিক্ষণার্থীকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবায়দুল হক বলেন, পাবনা সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের (টিটিসি) ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা সুজাউদ্দৌলাকে এক প্রশিক্ষণার্থীর সঙ্গে রাতে অবস্থান করার সময় সাধারণ শিক্ষার্থীরা ওই কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এ সময় তারা অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত ছিল বলে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে। পরে পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
একাধিক প্রত্যক্ষ্যদর্শী শিক্ষার্থীরা জানান, গত দুই বছর ধরে বিএড উন্মুক্ত কোর্সের এক শিক্ষার্থী সিরাজগঞ্জ থেকে প্রতি বৃহস্পতিবার এসে দুই দিন কলেজের ছাত্রী হোস্টেলে অবস্থান করছেন। মাঝে মধ্যেই ওই শিক্ষার্থী অধ্যক্ষের কক্ষে রাতে অবস্থান করতেন। বিষয়টি নিয়ে আবাসিক শিক্ষার্থীরা চরম বিব্রত ও ক্ষুব্ধ ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে ওই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে শিক্ষার্থীরা তাদের হাতেনাতে ধরে ফেলে বাইরে থেকে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে বিক্ষোভ করে। ঘটনাটি জানাজানি হলে পাশ্ববর্তী পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যায়ের শিক্ষার্থীরাও কলেজ ক্যাম্পাসে জড়ো হয়।
পাবনা থানা পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, অভিযুক্তদের পাবনা সদর থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা দুজন গেস্টরুমে বসে গল্প করছিলেন বলে জানান। এ সময় হঠাৎ কয়েকজন যুবক তাদের ওই কক্ষে তালা মেরে হট্টগোল শুরু করে থানায় খবর দেন। তারা নিজেদের নির্দোষ বলে দাবি করেন।
বিকালে পাবনা থানার ওসি ওবাইদুল হকের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ওই শিক্ষার্থী এবং অধ্যক্ষের মধ্যে অনৈতিক সম্পর্ক আছে বলে পুলিশ জানতে পারে। বিকালে থানায় এসে দুজনকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা এই সম্পর্কের কথা স্বীকার করেন।
এ সময় নারী শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, অধ্যক্ষ প্রায়ই তাকে উত্ত্যক্ত করতেন এবং বৃহস্পতিবার রাতে তাকে গেস্ট রুমে তার কক্ষে আসতে বলেন। এ সময় তিনি তার গায়ে হাত দেন এবং অনৈতিক প্রস্তাব দেন। পরে তিনি অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির মামলা করলে পুলিশ অধ্যক্ষকে রাতে গ্রেফতার দেখান। শুক্রবার রাতে তাকে থানায় আটক রাখা হয়।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবায়দুল হক জানান, শনিবার সকালে অধ্যক্ষকে পাবনা জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে অধ্যক্ষ সুজাউদ্দৌলা সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, তার কিছু ভুল ছিল। তবে তার বিরুদ্ধে মামলার বিষয়টি ষড়যন্ত্র।
ওডি/ এফইউ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড