নজরুল ইসলাম শুভ, সোনারগাঁও প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ
বর্ষা মৌসুমকে কেন্দ্রকরে সোনারগাঁওয়ে চিংড়ি মাছের ফাঁদ চাঁই তৈরির পেশা ধরে রেখেছে। গ্রামে চলছে বাঁশের শলা দিয়ে মাছ ধরার ফাঁদ হিসেবে পরিচিত চাঁই তৈরির কাজ। এ শিল্পের বেশিরভাগ কারিগরই হলেন নারী। সংসার সামলিয়ে ঘরে বসে এসব কাজের মাধ্যমে তারা বাড়তি আয় করে পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে ভূমিকা পালন করছেন। পৌরসভার সাহাপুর ও বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের সাতভাইয়া পাড়া ও রামগঞ্জ গ্রামের দেড় শতাধিক পরিবার এই কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।
একটি মুলি বাঁশ দিয়ে চিংড়ি মাছ ধরার চারটি চাঁই হয়, আর একটি মোড়ল বাঁশ দিয়ে কুঁচে ধরার চাঁই হয় ২৫টি। পাঁচ ধরনের চাঁই বানান তারা। নদী-নালা, খাল-বিল হাওরের সুবিধা মতো স্থানে রেখে মাছ শিকার করা হয়। পানিতে মাছ চলাচল করতে এক সময় চাঁইয়ের ভেতরে ঢুকলে আর বের হতে পারে না। চাঁই বানানোর প্রধান কাঁচামাল হলো বাঁশ ও সুতা। মাছ কিংবা কুঁচে ধরার জন্য বিভিন্ন মাপে বাঁশের শলা তুলে এগুলো রোদে শুকিয়ে তারপর শুরু হয় চাঁই তৈরির কাজ।
বিভিন্ন ধাপের পর একটি পরিপূর্ণ চাঁই তৈরি হয়। স্থানীয় ও আশপাশের হাটের দিনগুলোতে জেলে এবং মৎস্য ব্যবসায়ীরা নৌযানের মাধ্যমে বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যায় এসব চাঁই। চুলায় ভাত বসিয়ে নারীরা পিঁড়িতে বসেই করে চাঁইয়ের বিভিন্ন অংশ তৈরির কাজ।
প্রবীণ নারীরা পানের কৌটা পাশে রেখে উঠোনে বসে এ কাজ করেন। ছোট সাইজের চাঁই বিক্রি হয় ৯০-১০০ টাকা। মাঝারি সাইজের ২৫০-৩০০ টাকা ও বড় সাইজের বিক্রি হয় ২ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত। আর বর্তমানে এসব কাজে নারীদের অংশগ্রহণের ফলে সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরতে শুরু করেছে। বছরের ৬ মাস পৌরসভার সাহাপুর ও বৈদ্যেরবাজার সাতভাইয়া পাড়া ও রামগঞ্জ গ্রামের প্রতিটি পরিবার চাঁই বানিয়ে থাকে। তবে এ পেশায় আগের মতো লাভ না থাকলেও বাপ-দাদার পেশা আঁকড়ে ধরে আছে ওই পরিবারগুলো। স্কুলপড়ুয়া ছেলে মেয়েরাও বাবা-মাকে এ শিল্পে সহযোগিতা করে।
সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, সোনারগাঁও পৌরসভার সাহাপুর ও বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের সাতভাইয়া পাড়া ও রামগঞ্জ গ্রামের অর্ধশতাধিক পরিবার এখন সরাসরি চাঁই তৈরির পেশায় জড়িত। সারা বছর চাঁই তৈরি করা হলেও বর্ষা মৌসুমে চাঁইয়ের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। ফলে তাদের ওই সময়ে কাজের চাপও বৃদ্ধি পায়। চাঁই শুধু সোনারগাঁয়েই নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হয়ে থাকে বলে জানিয়েছেন চাঁই তৈরির কারিগররা।
চাঁইয়ের কারিগর মরিন্দ্র চন্দ্র দাস বলেন, চাঁই তৈরির কাজে নারীদের অংশগ্রহণ বেশি। ফলে সংসারে সচ্ছলতায় ভূমিকা রাখছেন নারীরা। পুরো বছরই এ গ্রামের বেশিরভাগ পরিবার চাঁই বানিয়ে থাকে।
চাঁই তৈরির কারিগর অদর চন্দ্র দাস ও মরন দাস জানান, অন্যান্য মাছের চাঁইয়ের চেয়ে চিংড়ির চাঁইয়ের চাহিদা বেশি। সোনারগাঁও ছাড়াও পটুয়াখালী, ফরিদপুর, কুমিল্লা, মুন্সীগঞ্জ, বরিশাল, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, চাঁদপুর জেলার মানুষ অর্ডার দিয়ে এখানে চাঁই কিনতে আসেন। নির্দিষ্ট সময়ে চাঁই তৈরির কাজ শেষ হলে পরে তারা এসে নিয়ে যান। সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতা পেলে আরও প্রসার ঘটানো যেতে পারে এ শিল্পের।
দীনা সরকার দৈনিক অধিকারকে বলেন, এ বছর ৫ জন কিস্তির টাকা তুলে কাজ করছি। মূলি বাঁশের দাম আগে ছিল ২০-২৫ টাকা, বর্তমানে তা ১১০-১৩০ টাকা। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় লাভও আগের চেয়ে একটু কম হয়।
সোনারগাঁওর ইউএনও অঞ্জন কুমার সরকার বলেন, চাঁই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে প্রশাসন থেকে যাবতীয় সাহায্য-সহযোগিতা করা হবে।
ওডি/এসজেএ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড