• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৪ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

যে সড়কের মা-বাপ নেই! 

  ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

০১ জুলাই ২০১৯, ১৮:৪৭
ময়মনসিংহ-গফরগাঁও সড়কের বেহাল দশা
ময়মনসিংহ-গফরগাঁও সড়কের বেহাল দশা

হেলে দুলে চলছে রিকশা, সাইকেল, অটোরিকশা ও সিএনজিসহ বিভিন্ন যানবাহন। সঙ্গে দুলছেন যানবাহনে থাকা যাত্রীরাও। কোনো পাহাড়ি পথের সুন্দর অভিজ্ঞতা নয় বরং সমতলের খানা-খন্দের সড়কেই পাওয়া যায় এমন অভিজ্ঞতা। প্রতিদিন এ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন প্রায় লাখো মানুষ। এই সড়কের নাম ’খান বাহাদুর ইসমাইল রোড’; ময়মনসিংহ-গফরগাঁও সড়ক হিসেবেই অধিক পরিচিত। বিভাগীয় নগরী ময়মনসিংহ থেকে উপজেলা গফরগাঁওয়ে যাওয়া-আসার একমাত্র সরাসরি সড়ক এটি। নামে আভিজাত্য থাকলেও চেহারায় তেমনটি নয়। ব্রিটিশদের তৈরি ব্রহ্মপুত্রের কোল ঘেঁষা এ সড়ক যেন এক মরণফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রয়োজনীয় সংস্কার ও মেরামতের অভাবে প্রায় ৫ বছর ধরে ময়মনসিংহ-গফরগাঁও সড়কে প্রতিদিনের যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ বিগত ৫ বছরের বেশি সময় ধরে এ সড়কটি সংস্কার ও মেরামতের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। ফলে এ সড়ক দিয়ে যান চলাচল এখন বন্ধই বলা চলে। এ সড়কটি নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদে একাধিকবার সংস্কারের দাবি জানালেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। দীর্ঘদিনের যাত্রা অভিজ্ঞতা থেকে যাত্রীদের প্রায়শই মনে হতে পারে এ সড়কের যেন কোনো বাপ-মা নেই।

ময়মনসিং-গফরগাঁও সড়ক

অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে গফরগাঁও থেকে ময়মনসিংহ সদর পর্যন্ত ৬৯ কিলোমিটার সড়কের ৪৩ কিলোমিটার রাস্তায় কত খানা-খন্দ রয়েছে তার হিসাব খোদ সড়ক ও জনপথ বিভাগের কাছেও নেই। বিশেষ করে গফরগাঁও পৌর শহরের অংশে অবস্থা আরও নাজুক। পৌর শহরের প্রধান সড়ক এটি। উপজেলার হাসপাতাল, ফায়ার সার্ভিস, থানা, পোস্ট অফিস ও সরকারি স্কুল-কলেজের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো এ সড়কের পাশেই।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর একবার এই সড়কের সংস্কার হয়েছিল। তাও অনেকটাই লোক দেখানো। গত ১২ বছরেও এ সড়কে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য সংস্কার হয়নি। ফলে এ সড়কের পুরোটাই অকার্যকর হয়ে পড়েছে। সড়কের সিলকোট ও কার্পেটিং উঠে এর কোথাও ইট-সুরকি এবং কোথাও মাটি পর্যন্ত দেখা যায়। সড়কের কোথাও কোথাও ডোবার মতো গর্ত তৈরি হয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই এসব গর্তে হাটু সমান পানি জমে কাদা পানিতে একাকার হয়ে যায়। প্রায়ই এসব ডোবায় উল্টে যায় পণ্যবাহী ট্রাক। আবার শুকনো মৌসুমে ধুলায় ধূসর হয় এই সড়ক। যা মারাত্মক বায়ু দূষণ সৃষ্টি করে।

ময়মনসিং-গফরগাঁও সড়ক

স্থানীয়দের অভিযোগ, ওভারলোডেড ট্রাক যাতায়াতের কারণেই সড়কটির এমন মরণদশা। বর্তমানে এক ঘণ্টার পথ যেতে সময় লাগছে তিন ঘণ্টারও বেশি। সেই সাথে বেড়েছে পরিবহনের ভাড়াও। রাস্তাটির ইট-সুরকি ভেঙে সরে গিয়ে বিভিন্ন স্থানে বড় বড় খাদ ও গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় গাড়ি চলাচলের সময় কাত হয়ে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। গাড়ির ঝাঁকুনি যাত্রীদের দেহের কলকব্জা পর্যন্ত টের পায়। উপজেলার হাসপাতালে যেতে হলে এই সড়কেই যেতে হয়। সুস্থ মানুষই যেখানে এ পথে চলতে ভয় পায় সেখানে রোগীদের অবস্থা আরও করুণ হয়। বিশেষ করে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার প্রসূতি মায়েরা। অথচ এ নিয়ে যেন কারও কোনো মাথা ব্যথা নেই।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ময়মনসিংহ-টোক সড়কের ৪৩ কিলোমিটার রাস্তার গফরগাঁও, গলাকাটা বাজার, ধলা, হাসপাতাল রোড়, কালির বাজারসহ অন্তত ৩১টি স্থানে সড়কটি মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। গত ১৭-১৮ অর্থ বছরে গফরগাঁও- ময়মনসিংহ সড়কের ৪৩ কিলোমিটারের টেন্ডার হলেও অজ্ঞাত কারণেই তা বাতিল হয়ে য়ায়।

ময়মনসিংহ সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র জানায়, গফরগাঁও-ময়মনসিংহ সড়কের কাজ ঈদুল আজহার আগে শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না।

এ দিকে এ সড়কে দুর্ঘটনায় আহত গফরগাঁও উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মচারী গোলাম রব্বানী বলেন, ‘এটি সড়ক নয়, যেন মানুষের মরণ ফাঁদ তৈরি হয়েছে। এই সড়ক দিয়ে চলাচলের চেয়ে নিজে নিজে হাত পা ভেঙে ঘরে বসে থাকা উচিত।’

গফরগাঁও বাজারের ব্যবসায়ী মো. হারেজ মিয়া বলেন, ‘গত ১২ বছরে এই সড়কের উন্নয়নের কোনো ছোঁয়া লাগেনি। কত বছর গেলে আমরা উন্নয়নের মুখ দেখতে পারব! ১৯৯৬ সালে আলতাফ গোলন্দাজ এমপি থাকার সময় এই সড়কের কাজ হয়েছিল। এরপর থেকে আশা শুধুই আশা।’

ময়মনসিং-গফরগাঁও সড়ক

গফরগাঁও উপজেলার শ্রমিক পরিবহন নেতা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘এই সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন অনেকেই গফরগাঁও, নান্দাইল, ঈশ্বরগঞ্জ, ত্রিশাল, হোসেনপুর, পাকুন্দিয়া, ভৈরব, সিলেটও যাতায়াত করছে। কিন্তু এই সড়কটি সংস্কার ও মেরামত না করার কারনে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এ জনপদের নাগরিকদের। আগামী ঈদের আগে সংস্কার বা মেরামত না হলে পরিবহন খাতে ধস নামবে। সাধারণ যাত্রীরা পড়বেন চরম দুর্ভোগে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-সহকারী এক কর্মকর্তা জানান, ‘আমরা আসি কাজ করতে, কিন্তু কাজ করতে পারি না। এলাকার কিছু লোকের চাঁদাবাজির কারণে।’ তবে কারা চাঁদা দাবি করেন তা তিনি বলতে চাননি।

ময়মনসিংহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুদ খান এ ব্যাপারে বলেন, ‘ইতোমধ্যে ১শ ৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে গফরগাঁও-ময়মনসিংহ সড়কের ৪৩ কিলোমিটার কাজ শুরুর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। জুনের মধ্যে কাজ শুরু করতে না পারলেও জুনের পরে এই সড়কটি ঠিক হবে আশা করছি।’

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড