• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

দূষণ ও দখলের কবলে বালু নদী

  রূপগঞ্জ প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ

১৬ জুন ২০১৯, ১২:১১
বালু নদী
বালু নদী পরিদর্শন করছেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন (ছবি : দৈনিক অধিকার)

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র এলাকা থেকে শুরু হওয়া বালু নদী এখন দূষণ ও দখলের কবলে পড়েছে। এক শ্রেণির প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নদী দখল করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করায় নদীর প্রসস্থতা কমে গেছে। বিষাক্ত বর্জ্য ফেলে নদী দূষণ করছেন তারা। ওই প্রভাবশালীরা এখনো দখল ও দূষণ অব্যাহত রেখেছেন। শুধু তাই নয়, এ নদীর শাখা প্রশাখাগুলোর উৎসে পানির সঙ্কট, দখল, দূষণ ও নাব্যতা সঙ্কটে ভুগছে। দূষণের কারণে নদীর পানির পঁচা গন্ধে পরিবেশ আজ হুমকির মুখে। দূষণের ফলে জলজ পরিবেশের ওপর প্রভাব পড়ছে। এতে করে মৎস্য সম্পদও বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

রবিবার (১৬ জুন) সকালে বালু নদী পরিদর্শন করেছেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনসহ একটি প্রতিনিধি দল। নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান হাওলাদানের নেতৃত্বে পরিদর্শনে উপস্থিত ছিলেন- ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের উপসচিব শাহাদাত হোসেন, ঢাকা জেলার এডিসি (রেভিনিউ) আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম, পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সাইফুল আশ্রাফ, পানি উন্নয়নবোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল মতিন, রাজউকের অথরাইজড অফিসার মাকিদ এহসান, বিআইডব্লিউটিয়ের ট্রেসার আব্দুল হাই, কালীগঞ্জ উপজেলার ইউএনও শিবলি সাদিক, রূপগঞ্জের এসিল্যান্ড তরিকুল ইসলাম, তেজগাঁও সার্কেলের এসিল্যান্ড এবিএম কুদরত ই খুদাসহ রূপগঞ্জ প্রেসক্লাবের একটি প্রতিনিধিদলসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা।

পরিদর্শনকালে দেখা গেছে, ৫৪ স্থানে দখল ও ২৩ স্থানে দূষণ করছে প্রভাবশালীরা।

নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, যে কোনো মূল্যে নদী বাঁচাতে হবে। নদী বাঁচলে দেশ বাঁচবে। নদী না বাঁচলে দেশ বাঁচবেনা। যারা নদী দখল ও দূষণ করেছেন, তারা যে ব্যক্তি, যে গোষ্ঠি, যে রাজনৈতিক দল বা যত প্রভাবশালীই হোক না কেন ছাড় দেয়া হবেনা। আমরা সিএস রেকর্ড দেখে সীমানা নির্ধারণ করে নদী দখলমুক্ত কার্যক্রম শুরু করব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে শীঘ্রই দখল ও দূষণ মুক্ত করে নদীকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হবে। তাই সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন তিনি।

নদী রক্ষা কমিশন সুত্রে জানা যায়, বালু নদীর উৎসবমুখ শ্রীপুর উপজেলার মার্টা ইউনিয়নের প্রহলাদপুর মৌজায় যেখানে সৃতী ও পারুলী নদী মিলিত হয়েছে। এই মিলিত ধারা বালু নাম নিয়ে গাজীপুর ও ঢাকার মধ্যে দিয়ে রূপগঞ্জ হয়ে ডেমড়ার শীতলক্ষ্যা নদীতে মিলিত হয়েছে। পুবাইলে অপর গুরুত্বপূর্ণ উপনদী চেলাই ও টঙ্গীতে টঙ্গীরখালে মিলিত হয়েছে। বালু নদীর দৈর্ঘ্য ৬০ কিলোমিটার ও প্রশস্ত ১০০ মিটার। এর শুষ্ক মৌসুমের প্রবাহ ৬০ ঘনমিটার ও বর্ষা মৌসুমে ৭৪৪ ঘনমিটার। এর গভীরতা রূপগঞ্জ ও ডেমড়া পয়েন্টে ৫.৮৫ মিটার থেকে ৯.৬৩ মিটার। এর অববাহিকা প্রায় ৭২২ বর্গকিলোমিটারের চেয়েও অধিক। এই নদীর গতিপথে দুইটি পানির লেভেল পরিমাপক ষ্টেশন একটি পুবাইল ও অন্যটি ডেমরায় এবং একটি প্রবাহ পরিমাপক স্টেশন আছে ডেমরায়। ৫৪ স্থানে দখল, ২৩ স্থানে দূষণ, ৩ স্থানে ডুবোচর, ৩স্থানে প্রায় ২৫০০ মিটার ভাঙন ও ৩০টি ব্রিজ আছে। প্রায় ৪০টি খাল ও ছোট-বড় মিলিয়ে ৭টি বিলের নদীর সরাসরি সংযোগ রয়েছে।

সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, পুবাইল মৌজার সরকারি মেডিকেল এ্যাসিসটেন্ট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নদীর জমিতে ভবন নির্মাণ ও বালু নদী কঠিক বর্জ্য সরাসরি নির্গত করছে। এছাড়া ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম একাডেমির বহুতল ভবন নির্মান করা হয়েছে নদীর জমি দখল করে। মান্নান ব্রিকফিল্ড দখলে রেখেছে নদীর জমি।

এএনডি ট্রাউজার ফ্যাক্টরির বর্জ্য আবর্জনার স্তুপ ও ময়লার পাইপ সরাসরি নদীতে ফেলছে। টঙ্গী সার্কেলে বাবু গার্মেন্টস, আজমেরি গার্মেন্টস, নীলা ক্যামিকেল ফ্যাক্টরি, এল ই ডি ষ্টার ফ্যাক্টরির বর্জ্যও সরাসরি বালু নদীতে ফেলা হচ্ছে। কোনো প্রকার ইটিভি প্লান ছাড়াই এসব প্রতিষ্ঠান এসব দূষণ করছে। রূপগঞ্জ ইউনিয়নের পর্শি এলাকায় ক্রাউন সিমেন্ট ফ্যাক্টরি বর্জ্য ও ময়লার স্তুপ বালু নদীতে ফেলা হচ্ছে। বালু নদীর দুই পারে বসবাসরত স্থানীয় জনগণও বর্জ্য ও ময়লার স্তুপ সরাসরি নদীতে ফেলসে।

লেখক, কলামিস্ট, গবেষক লায়ন মীর আব্দুল আলীম বলেন, এক সময় মানুষ নদীর পানি সংগ্রহ করে রান্নার কাজের ব্যবহার করত। এমনকি নদীর পানি পান করতেন। আজ সেই নদীর পানি পঁচা দুর্গন্ধে বিষ হয়ে উঠেছে। বর্তমানে নদীগুলো দখল ও দূষণের কবলে পড়ছে। নদী রক্ষায় আগে আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে।

ঢাকা জেলার এডিসি (রেভিনিউ) আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা নির্দেশনা পেলে বালু নদীতে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করবো। বিশেষ করে ঢাকা জেলার পাশাপাশি গাজীপুর জেলা ও নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনও প্রস্তুত রয়েছে। বালু নদী রক্ষা করা সবার দায়িত্ব। আগে থেকেই দখলদারদের নদী দখল মুক্ত করার জন্য বলা হলো। তা না হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর যারা নদী দূষণ করছেন, তারাও নদী দূষণ থেকে বিরত থাকুন, তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ওডি/এসজেএ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড