• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

রাণীনগরের পিআইওর বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ

  কাজী কামাল হোসেন,নওগাঁ

১৩ জুন ২০১৯, ১২:৩১
মেহেদি হাসান
রাণীনগর পিআইও মো. মেহেদি হাসান ( ছবি : দৈনিক অধিকার )

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. মেহেদি হাসান দীর্ঘ প্রায় সাত বছর ধরে নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় কর্মরত রয়েছেন। একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে এত বছর একই উপজেলায় কর্মরত থাকার কারণে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পে নানা ধরনের অনিয়ম দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে।

এছাড়া বিভিন্ন সময় প্রকল্পে অনিয়ম ও লুটপাটের বিষয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এত অভিযোগের পরও রহস্যজনক কারণে এই উপজেলায় স্ব-পদে বহাল আছেন।

এ কর্মকর্তার কারণে সরকারের উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কাজে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। তাই বর্তমান সরকারের উন্নয়নের অদম্য গতি স্বাভাবিক রাখতে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মেহেদি হাসানকে অন্যত্র বদলীর জন্য রাণীনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন হেলালসহ চারজন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা একযোগে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর একটি লিখিত আবেদন করেছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ সাত বছরে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি প্রকল্পে এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রয়েছে অনিয়ম দুর্নীতির বিশাল আমলনামা। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে জমি আছে, ঘর নাই আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় রাণীনগর উপজেলায় ৩৮৫টি আধাপাকা ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ লাখ টাকা। তার পছন্দের মিস্ত্রি ও লোকজন নিয়ে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে পিলার তৈরি করায় ঘর নির্মাণ শেষ না হতেই পিলার ভেঙে যাওয়া, দরজা-জানালার কাঠে ফাটল, ঘরের টিনের ছাউনিতে রুয়ার পরিবর্তে বাটাম (পাতলা কাঠ) ব্যবহার করা হয়। ঘর নিমার্ণের আগে যাদের জমি আছে, ঘর নাই, তাদের কাছ থেকে ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ নিয়ে ঘর বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগে উঠে।

এছাড়াও ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা) প্রকল্পে ১৭টি কাজ এবং গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) প্রকল্পে ৩৩টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এসব বরাদ্দকৃত অর্থ মসজিদ, মাদ্রাসা, ঈদগাহ, কবরস্থান, শ্মশান সংস্কার, রাস্তা সংস্কার, ইউনিয়ন পরিষদ সংস্কার, স্ট্রিট লাইট ও সোলার প্যানেল বসানোর কাজে স্ব-স্ব এলাকার প্রকল্প সভাপতির মাধ্যমে প্রদান করা হয়। কিন্তু এসব উন্নয়ন বরাদ্দের নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করা তো দূরের কথা প্রকল্প সভাপতিরা পিআইও মেহেদি হাসানের সঙ্গে যোগসাজশ করে লোক দেখানো দায়সারা কাজ করে বরাদ্দে টাকা হরিলুট করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

বদলি সংক্রান্ত লিখিত আবেদনে রাণীনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন হেলাল উল্লেখ করেছেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মেহেদি হাসান গত ২০১২ সাল ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে অদ্যাবধি নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় কর্মরত রয়েছেন। একজন সরকারি কর্মকর্তা দীর্ঘ প্রায় সাত বছর যাবত কীভাবে একই উপজেলায় থাকতে পারেন এ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। রাণীনগর উপজেলায় কর্মরত অবস্থায় একাধিকবার তার বদলির অর্ডার হলেও কর্মস্থল ত্যাগ তো দূরের কথা বার বার বদলি অর্ডার রহস্যজনক কারণে স্থগিত হয়ে অদ্যবদি স্ব-পদে বহাল রয়েছেন তিনি। সর্বশেষ সম্প্রতি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশাসন-১) ড. মো. হাবিব উল্লাহ বাহার স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মেহেদি হাসানকে জনস্বার্থে এবং প্রশাসনিক কারণে কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলায় যোগদানের আদেশ দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি তার নতুন কর্মস্থলে যোগদান না করে এখনও রাণীনগরে নিয়মিত অফিস করছেন।

এ অবস্থায়- কি মধু আছে রাণীনগরে? এমন প্রশ্ন নিয়েই আলোচনা সমালোচনা চলছে সচেতন মহলে এবং উপজেলা প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তাদের মাঝেও চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তাই প্রশাসনিক কার্য সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করার স্বার্থে পিআইও মেহেদি হাসানকে অন্যত্র বদলির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর সম্প্রতি একটি লিখিত আবেদন করেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন হেলাল।

পিআইওর বদলীয় ওই আবেদনে সর্মথন দিয়ে সিলমোহরসহ স্বাক্ষর করেছেন, রাণীনগর সদর ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান পিন্টু, বড়গাছা ইউপি চেয়ারম্যান সফিউল আলম, কালিগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বাবলু, পারইল ইউপি চেয়ারম্যান মজিবর রহমান।

এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মেহেদি হাসান বলেন, তার বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ে রাণীনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লিখিত আবেদন করেছেন তা তিনি জানেন। তিনি বলেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ ইউপি চেয়ারম্যানদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য তারা শক্রতামূলক এ অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের কোনো সত্যতা নাই। আর কুড়িগ্রামের রাজিবপুরে যোগদানের যে আদেশ হয়েছিল তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষই স্থগিত করেছেন।

এ ব্যাপারে রাণীনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন হেলাল জানান, সরকারি কর্মকর্তা একটানা প্রায় সাত বছর ধরে একই উপজেলায় কীভাবে চাকরি করেন। সরকারি কর্মকর্তারা একই জায়গায় বেশি দিন চাকরি করলে তারা দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েন। পিআইও মেহেদি হাসানের বেশ কয়েকবার বদলির আদেশ আসলেও রহস্যজনক কারণে তা তিনি স্থগিত করিয়ে নেন। তার অনিয়ম, দুর্নীতির কারণে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে মর্মে আমরা তাকে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে অন্যত্র বদলির আবেদন করেছি। আশা করছি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

ওডি/এসএএফইউ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড