• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ঈদ উপলক্ষে জামদানি পল্লীতে বেড়েছে ব্যস্ততা

  নজরুল ইসলাম শুভ, সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি

১৩ মে ২০১৯, ১১:২১
জামদানি
ঈদ উপলক্ষে ব্যস্ত সময় পার করছেন জামদানি কারিগরেরা (ছবি : দৈনিক অধিকার)

ঈদকে সামনে রেখে সোনারগাঁয়ে বিভিন্ন এলাকার জামদানি কারিগর ও শিল্পীরা শাড়ি তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। কেউ কাপড়ে সুতা তুলছেন, কেউ সুতা রঙ করছেন, কেউ শাড়ি বুনছেন, আবার কেউ শাড়িতে নকশার কাজ করছেন। সোনারগাঁয়ে কারিগরদের ঘরে ঘরে এখন নানা ডিজাইনের জামদানি শাড়ি তৈরি হচ্ছে।

সোনারগাঁও উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে চার সহস্রাধিক জামদানি তাঁত রয়েছে। এর মধ্যে আলমদীচরভুলা, মালিপাড়া, সাদিপুর, ব্রাহ্মণবাওগাঁ, খেজুরতলা, কাজিপাড়া, চৌরাপাড়া, মুছারচর, শেকেরহাট, বাসাবো, তিলাব, বস্তল, কলতাপাড়া, কাহেনা, গনকবাড়ি, ওটমা, রাউৎগাঁও, নয়াপুর, উত্তর কাজিপাড়া, চেঙ্গাইন, খালপাড় চেঙ্গাইন, ভারগাঁও, কান্ধাপাড়া, ফিরিপাড়া, বাইশটেকি, আদমপুর, বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন এলাকায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক তাঁত রয়েছে।

ঈদ সামনে রেখে এসব গ্রামের তাঁতি পরিবারগুলো এখন জামদানি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে। একটু ফিরে তাকানোর সময় নেই তাঁতিদের। এখানকার তাঁতিদের অধিকাংশই শিশু থেকে মধ্য বয়স্ক। তবে কম বয়সী তাঁতিরাই জামদানি শিল্পের সঙ্গে বেশি জড়িত।

জামদানি

ঈদ উপলক্ষে ব্যস্ত সময় পার করছেন জামদানি কারিগরেরা (ছবি: দৈনিক অধিকার)

এদিকে সোনারগাঁয়ে জামদানি শিল্পের সোনালি দিন এখন আর নেই। জামদানি উৎপাদনকারী শিল্পীরা হতাশাগ্রস্ত। তারা সঠিক দাম পাচ্ছেন না। অধিকাংশ তাঁতিই মহাজনদের কাছে দেনার দায়ে বাঁধা। তারা মহাজনদের দাদন গুণছেন, পাচ্ছেন শুধু মজুরি। সরাসরি তারা শাড়ি বাজারজাত করতে পারছেন না। তাঁতিরা মহাজনদের কাছ থেকে সুতা নিয়ে যান। পরে তাদের দেওয়া নকশা অনুযায়ী শাড়ি তৈরি করেন। সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে হাড়ভাঙা খাটুনির পর তারা মজুরি পান।

অথচ জামদানিই হচ্ছে বাংলার হারিয়ে যাওয়া মসলিনের বিকল্প প্রতিরূপ। অতীতের মসলিনের মতোই, আজকের জামদানি শাড়ির শিল্প-সৌন্দর্যের খ্যাতি বিশ্বজোড়া। কেবল দেশের বাজারেই নয়, বিশ্ববাজারেও জামদানির ব্যাপক চাহিদা গড়ে উঠেছে।

জামদানি

ঈদ উপলক্ষে ব্যস্ত সময় পার করছেন জামদানি কারিগরেরা (ছবি: দৈনিক অধিকার)

সরেজমিন সোনারগাঁয়ের বিভিন্ন এলাকায় জামদানিশিল্পী ও কারিগরদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, এখন সবাই ব্যস্ত । ঈদ সামনে রেখে কারিগরদের আয় বেড়েছে। কারিগরদের রাত-দিন কাজ করতে হচ্ছে। এসব শাড়ি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অভিজাত দোকানে এবং বিভিন্ন দেশে সরবরাহ করা হচ্ছে।

জামদানি কারখানার মালিকরা জানান, আগে জামদানিশিল্পীরা শুধু শাড়ি তৈরিতেই সীমাবদ্ধ ছিলেন। তবে বর্তমানে জামদানিশিল্পে এসেছে নতুনত্ব। শাড়ি তৈরির পাশাপাশি থ্রি পিস, ওড়না, পাঞ্জাবি, পর্দার কাপড়ও তৈরি হচ্ছে এখানে। ঈদকে সামনে রেখে জামদানি শাড়ির চাহিদা বেড়ে গেছে আগের তুলনায় অনেক বেশি। এ ছাড়া ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী এবার আরও উন্নত এবং নতুন নতুন ডিজাইনের শাড়ি তৈরি করছেন কারিগররা।

সনমান্দী ইউনিয়নের আলমদীচরভুলা এলাকার জামদানি কারিগর সবুজ মিয়া, মো. মতিন ও আবুল কাসেম বলেন, প্রতিকূলতার মাঝেও আমরা জামদানি উৎপাদন করছি। এখানে ১০০০ টাকার নিচে কোনো জামদানি শাড়ি তৈরি হয় না। সর্বোচ্চ ২২ হাজার টাকা দামের শাড়িও এখানে তৈরি হয়। তবে এখন এই দামে অর্ডার পাওয়া যায় না। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে জামদানি শিল্প দেশের রপ্তানি খাতে বিশেষ অবদান রাখতে পারত।

জামদানি শাড়ি বিক্রেতা আওলাদ হোসেন জানান, পুরো কাপড়ে নকশা করে উন্নত মানের একটি ভালো শাড়ি তৈরিতে অনেক সময় দেড় দুই মাস র্পযন্ত সময় লেগে যায়। সময় আর কাজের ওপর দাম নির্ভর করে। এ বস্ত্রের জমিন একাধিক রঙের হয়ে থাকে। জামদানি তাঁতিদের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। কেবল রয়েছে বংশানুক্রমিক হাতে-কলমে অর্জিত দক্ষতা। কেবল নারায়ণগঞ্জ জেলার নির্দিষ্ট কয়েকটি গ্রামেই এ শাড়ি তৈরি হয়।

জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, সৌদি আরব, ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে জামদানি শাড়ি রপ্তানি হচ্ছে। এ রপ্তানির সঙ্গে জড়িত জামদানি শাড়ির ব্যবসায়ীরা। তাঁতিদের কাছ থেকে তারা শাড়ি কিনে এনে রপ্তানি করেন। ফলে বৈদেশিক মুদ্রা তাঁতিদের ঘরে ওঠে না। চলে যাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ীদের হাতে। প্রতি বছর সোনারগাঁও এবং রূপগঞ্জ এলাকা থেকে প্রায় ৪০-৫০ কোটি টাকার জামদানি শাড়ি রপ্তানি করা হয়।

সোনারগাঁও জামদানি তাঁতি প্রাথমিক সমিতির সভাপতি মজিবুর রহমান বলেন, বর্তমানে জামদানি শিল্পীদের দুর্দিন যাচ্ছে। মধ্যস্বত্বভোগীরাই লাভ খাচ্ছে। সহজ-সরল নারী, অসচ্ছল ও নিরীহ জামদানি তাঁতিরা এক শ্রেণির দাদন ব্যবসায়ী মহাজনদের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছেন। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে জামদানি শিল্প দেশের রপ্তানি খাতে বিশেষ অবদান রাখতে সক্ষম হবে।

ওডি/এএন

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড