শাহারিয়ার রহমান রকি, ঝিনাইদহ
যে কোন উৎসব কিংবা দিবসে ফুল ছাড়া যেন চলেই না। আর সামনে বিজয় দিবস, সে সময় ফুলের চাহিদা বেড়ে যাবে স্বাভাবিক সময়ের তুরনায় কয়েকগুন। তাইতো ঝিনাইদহের চাষিরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছে শেষ মুহূর্তের ফুল পরিচর্যায়। কিন্তু সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ফুলের বাজার দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কা পিছু ছাড়ছে না চাষী ও ব্যবসায়ীদের।
কেউ ব্যস্ত খুটি পুততে, কেউ করছেন আগাছা পরিষ্কার কেউবা ছিটাচ্ছেন ছত্রাক নাশক এমনচিত্র গান্না, কোটচাদপুর, কালীগঞ্জ সহ ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন এলাকার ফুলের ক্ষেতে।
অন্যান্য সময়ের তুলনায় বিজয় দিবসে ফুলের চাহিদা বেড়ে যায় স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কয়েকগুন, দামও মেলে অনেক বেশী। তাইতো চাষীদের প্রধান লক্ষ এই দিনটিকে ঘিরে।
এখন ক্ষেতগুলোতে চাষিরা নিয়মিত ফুলগাছ যেন হেলে না পড়ে এ জন্য খুটি পুতে দিচ্ছেন। আগাছা পরিষ্কার করে মাটি সমান করে সেগুলো গাছের গোড়ায় দিয়ে দেওয়া হচ্ছে পানি সেচ। শীতে ছত্রাক নাশক রোগ প্রতিরোধে ওষুধ স্প্রে করা হচ্ছে।
এসব পরিচর্যার ফলে কয়েকদিন পরে যে ফুল আসবে তার মান হবে অনেক ভাল। বাজারে বেড়ে যাবে অনেক চাহিদা।
ত্রিলোচনপুর গ্রামের জারবেরা ফুল চাষী ওসমান গনি জানান, আমাদের বাগানে ৫ বিঘা জারবেরা ও ২ বিঘা গোলাপ ফুল রয়েছে। জারবেরা ফুল একবার বাগানে রোপনের পর ভালভাবে পরিচর্যা করা গেলে একাধারে চার বছর ফুল সংগ্রহ করা যায় আর গোলাপ গাছ থেকে দশ বছরের বেশী সময় ফুল সংগ্রহ করা যায়।
তিনি বলেন, বর্তমানে প্রতি স্টিক জারবেরা ফুল বিক্রি করছি ৬ থেকে ৮ টাকা আর বিজয় দিবসের আগে প্রতি স্টিক বিক্রি হবে ১৪ থেকে ১৬ টাকা। গোলাপ এখন প্রতি পিচ বিক্রি করছি ৮০ পয়সা থেকে ১ টাকা দরে যেটি বিজয় দিবসের আগে ৮ থেকে ১০ টাকা হবে। এতে আমাদের অনেক বেশীই লাভ থাকে।
অন্যদিকে গাদা ফুল চাষীরা বলেন, গাদা ফুল চাষ অনেক লাভজনক। একবার রোপনের পর একটানা ছয় মাস ফুল সংগ্রহ করা যায়। বিঘা প্রতি গড়ে ৩০ হাজার টাকা খরচের বিপরিতে ফুল ও দাম ভাল হলে ৮০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকার ফুল বিক্রি করা যায়।
আর আমনে যেহেতু বিজয় দিবস তাই আমাদের গাদা ফুলের চাহিদা বেড়ে যাবে কয়েকগুন। এসময় লাভ বেশী হবে। কিন্তু যেহেতু সংসদ নির্বাচন সেই কারনে আমরা কিছুটা চিন্তিত রয়েছি ফুলের বাজার দাম নিয়ে। কৃষি বিভাগ বা সরকারের উচ্চ মহলের কাছে অনুরোধ যেন রাজনৈতিক কোন প্রভাব ফুলের বাজারে না পড়ে।
অন্যদিকে জেলার গাদা ফুলের মান ভাল হওয়ায় ঢাকা, চট্রগ্রাম, কুমিল্লা সহ বিভিন্ন জেলায় ব্যপক চাহিদা রয়েছে। তবে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা হতে পারে আর তার প্রভাব পড়তে পারে ফুলের বাজারে ফলে বাজার ও দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন চাষী ও ব্যবসায়ীরা। ফুল ব্যবসায়ীরা বলেন, ঝিনাইদহের বিভিন্ন বাজারে চাষীদের কাছ থেকে গাদা, জারবেরা, গোলাপ সহ বিভিন্ন ফুল কিনে ঢাকা, চট্রগ্রাম, কুমিল্লা সহ বিভিন্ন বড় বড় জেলায় পাঠানো হয়।
জেলার গান্না বাজার ফুল চাষী ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দাউদ হোসেন বলেন, বিজয় দিবসকে ঘিরে কয়েকদিন আগ থেকে প্রতিদিন অন্তত কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয় জেলা থেকে। এসময় লাভও ভাল হয়। কিন্তু বাইরের বড় বড় ব্যবসায়ীরা সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক অস্থিরতার শঙ্কা সহ নানা কারনে যেমন আমাদের ওর্ডার দিতে ভয় পাচ্ছেন তেমনি আমরাও ফুল লক্ষে পৌছানো বা দাম পাওয়া নিয়ে দু:শ্চিন্তায় আছি। তাই প্রশাসন, কুষি বিভাগ সকলেই যেন ফুলের দিকে একটু নজর দেয় যেন ফুলের বাজারে কোন প্রভাব না পড়ে।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোফাক্খারুল ইসলাম জানান, চাষীরা যাতে ফুলের দাম ভাল পায় আর ফুলের মান যেন ভাল হয় সে ব্যাপারে নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সহ সকল কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে গিয়ে চাষীদেরকে সঠিক পরিচর্যা, কীটনাশক ব্যবহার, পানি সেচ সহ নানা পরামর্শ দিচ্ছি। এছাড়াও বিজয় দিবসের সময় ফুল সরবরাহ বা ফুলের বাজারে রাজনৈতিক কোন প্রভাব না পড়ে সে ব্যাপারে আমরা কাজ করছি। আর ফেরিঘাটে এই সময়টাতে ফুলবাহী গাড়ীগুলো যেন আগে পারাপার হতে পারে সে ব্যাপারেও সচেষ্ট রয়েছি।
চলতি মৌসুমে জেলায় ফুলের আবাদ হয়েছে প্রায় ৪শ’ হেক্টর জমিতে এর মধ্যে গাদা ফুলের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৩শ’ হেক্টর।
সাধানত ক্ষেত থেকে ফুল তুলে সেগুলো মালা গেথে ঝোপা করে বিক্রি করা হয়। প্রতি ঝোপা গাদা ফুল সাধারন সময় ৩০ থেকে ৬০ টাকা বিক্রি হলেও বিভিন্ন উৎসবে দাম বেড়ে বিক্রি হয় ২শ’ টাকা দরে, কখনও কখনও কিছু কম বা বেশী হয়।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড