হুমায়ুন কবির সূর্য, কুড়িগ্রাম:
কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীতে বন্ধুদের কাছে ধার দেয়া টাকা ফেরৎ পেতে এক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হালখাতার আয়োজন করে চমক সৃষ্টি করেছেন। তার এই অভিনব কায়দায় টাকা আদায়ের ব্যবস্থা দেখে নানান জন নানান কথা বললেও এই পদ্ধতিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অনেকেই।
ভুক্তভোগী শিক্ষক আব্দুল আউয়াল উপজেলার আন্ধারীরঝাড় ইউনিয়নের এম.এ.এম উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের প্রায় ৩ লাখ টাকা ধার দিয়েছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও সেই টাকা ফেরৎ দিতে গড়িমশি করায় তিনি হালখাতার আয়োজন করেন। আগামি ১২ জানুয়ারি তার হালখাতা অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলা বছরের শুরুতে বিভিন্ন আর্থিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের কাছে বকেয়া টাকা আদায়ের জন্য হালখাতার আয়োজন করেন। কিন্তু শিক্ষক আব্দুল আউয়াল ইংরেজি বছরের শুরুতে এই হালখাতার আয়োজন করে মুখরোচক ঘটনার জন্ম দিয়েছেন। তিনি তার ব্যক্তিগত ধারের টাকা বা হাওলাত দেয়ার টাকা উত্তোলনের জন্য একটি চিঠি তৈরী করেছেন। সেখানে তিনি দেনাদারদের নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এবং লিখেছেন ‘আপনাদের টাকা হাওলাত দিয়ে আমি আনন্দিত। আগামী ১২ জানুয়ারি হালখাতার আয়োজন করা হয়েছে। উক্ত হালখাতায় আপনি উপস্থিত হয়ে ঋণ পরিশোধ করে ঋণ মুক্ত থাকুন।’
এই চিঠি তিনি তার ৩৫জন দেনাদারদের কাছে পাঠিয়েছেন। চিঠি পাওয়ার পর হতবাক এক অর্থ গ্রহিতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘এভাবে পত্র দিয়ে আমাদেরকে ছোট করা হয়েছে। মানুষের বিপদ আপদ থাকবেই। আমরা সময়মতো টাকাটা ফেরৎ দিতাম।’
আরেক দেনাদার জানান, ‘আমি হালখাতার চিঠি পেয়ে হতভম্ব হয়ে গেছি। প্রথমে খুব রাগ হয়েছিল। পরে ভেবে দেখলাম টাকাটা ফেরৎ প্রদানে দেরি করে ফেলেছি। আমি হালখাতার দিন তার টাকা ফেরৎ দিয়ে দিবো।’
আন্ধারীরঝাড় বাজারের ব্যবসায়ী আমজাদ জানান, ‘আমরা টাকা ধার না নিলেও সেদিন হালখাতায় খেতে যাবো। দেখি মাস্টার কি ব্যবস্থা করে।’
তবে ওই বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘অনেকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা সমালোচনা করছেন। অনেক বিপদে পরে আউয়াল ভাই এই পদ্ধতি বের করেছেন। এতে খারাপ কি, যারা টাকা নিয়েছেন তারা হালখাতা করে টাকা ফেরৎ দিবেন। খাওয়া-দাওয়া হবে তাদের সাথে আড্ডাও হবে।’
শিক্ষক আব্দুল আউয়াল জানান, ‘তিন বছর যাবত বন্ধু বান্ধব ও নিকটজনদের কাছে বিভিন্ন সময়ে আমার কাছ থেকে প্রায় ৩ লাখ টাকা হাওলাত নিয়েছেন। যাদের সাথে প্রতিদিন একসাথে উঠাবসা রয়েছে। লজ্জায় তাদের কাছে টাকা ফেরতও চাইতে পারি না তারাও দেয়ার নাম করে না। পরে তাদের কাছ থেকে টাকা ফেরত পেতে হালখাতার ধারণা মাথায় আসে। এতে তাদের সাথে সম্পর্কও খারাপ হবে না, আবার টাকাও ফেরৎ পাওয়া যাবে।’
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড