একই আসনে চলছে তিন ভাই-বোনের লড়াই, নির্বাচনী মাঠ সরগরম

ঠাকুরগাঁওয়ের বালীয়াডাঙ্গী, হরিপুর উপজেলা ও রাণীশংকৈল উপজেলার দুটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসন-৪ ও ঠাকুরগাঁও আসন-২। এ আসনে সাতবার সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন দবিরুল ইসলাম। একবার সিপিডি ও ছয় বার আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।

এবার ঠাকুরগাঁও-২ আসনে সাত বারের এমপি দবিরুল ইসলামের আসনে নৌকা প্রতীকে লড়ছেন তার বড় ছেলে, ভাতিজা ও ভাগিনী। তিন ভাই-বোনের প্রতিদ্বন্দিতায় সরগরম হয়ে উঠেছে নির্বাচনী মাঠ। নানা প্রতিশ্রæতি নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন প্রার্থীরা। অপরদিকে যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার হিসাব কষছেন ভোটাররা।

এবার আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উত্তরের ভোটের যাদুকর খ্যাত দবিরুল ইসলামের পরিবর্তে নৌকার মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তার ছেলে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাজহারুল ইসলামকে।

আগের সংসদ নির্বাচনে প্রতিপক্ষ হিসেবে আলাদা দলের প্রতিদ্বদ্বী থাকলেও এবারে ঘটেছে ভিন্ন ঘটনা। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন দবিরুল ইসলামের মেজো ভাইয়ের ছেলে ও সদ্য পদত্যাগ করা উপজেলা চেয়ারম্যান ও যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলী আসলাম জুয়েল ও ছোট বোনের মেয়ে নুরুন নাহার বেগম। আলী আসলাম জুয়েল ট্রাক প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও নুরুন নাহার বেগম জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচনী মাঠে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন।

এছাড়াও এ আসনে বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টির ডাব প্রতীকে রিম্পা আক্তার ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সোফা সেট মার্কায় আব্দুল কাদের প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন।

জানা গেছে, ঠাকুরগাঁওয়ের তিনটি সংসদীয় আসনে ১৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। তার মধ্যে দলীয় প্রতীকে ১০ জন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ৩ জন প্রার্থী লড়ছেন। আসন্ন নির্বাচনে ঠাকুরগাঁও-২ আসনে ১০৪টি ভোট কেন্দ্রে ৩ লাখ ১৮ হাজার ৬২০ জন ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৫৪ হাজার ৪৩৭ জন ভোটার ও পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৬৪ হাজার ১৮৩ জন ভোটার।

ঠাকুরগাঁও-২ আসনের ভোটাররা চাচ্ছেন তাদের যোগ্য প্রার্থী। যে প্রার্থী ইতিপূর্বে যারা জনগনের দ্বারে এসে সেবা পৌঁছে দিয়েছেন ও সুখে-দুঃখে কাছে পেয়েছেন এমন প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার হিসেব কষছেন ভোটাররা। এদিকে প্রার্থীরাও দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি।

ঠাকুরগাঁও-২ আসনের সাতবারের সংসদ সদস্য দবিরুল ইসলাম বলেন, ৩৫ বছরের অধিক সময় ধরে এ এলাকার মানুষের সেবা দিয়ে আসছি। বাধ্যকজনিত কারনে আমার পরিবর্তে এবারে আমার ছেলেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আমার বাকী কাজ গুলো সমাপ্ত করতে নৌকা প্রতীককে পূর্বের ন্যায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন এলাকাবাসী।

এ আসনে নৌকার মনোনীত প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, এলাকায় যা উন্নয়ন হয়েছে সব দবিরুল ইসলাম এমপির হাত ধরে হয়েছে। সে কারনে আগামী নির্বাচনেও নৌকাকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করবেন ভোটাররা।

ট্রাক প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী সদ্য পদত্যাগ করা বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা চেয়ারম্যান ও যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলী আসলাম জুয়েল বলেন, নৌকার নেতা-কর্মীরা নানা ভাবে আমাদের বাধা প্রয়োগ করছেন। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আমি জয়যুক্ত হব।

জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান নুরুন নাহার বেগম বলেন, মানুষ পরিবর্তন চায়। সুষ্টু ভোট হলে আমি জয়ী হব।

নানা প্রতিশ্রুতি নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে আঁচল পেতে বসছেন প্রার্থীরা। অপরদিকে যোগ্য প্রার্থীর হিসাব কষছেন ভোটাররা। ভোটাররা বলছে, উত্তরের ভোটের যাদুকর খ্যাত দবিরুলের আসনে কে হবেন এমপি। ছেলে, ভাতিজা না ভাগিনী সেটাই এবার দেখার পালা।