মাজেদুল ইসলাম হৃদয়, ঠাকুরগাঁও:
প্রতি বছর আমন ধান কর্তন ও সংগ্রহের পর পরই আলু চাষের জন্য জমি প্রস্তুত ও রোপন কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন চাষিরা। এবাও তার কোন ব্যত্যয় ঘটেনি। মাঠে ঘাটে পুরো দমে আলু রোপন ও পরিচর্যায় চরম ব্যস্ত সময় পার করছেন ঠাকুরগাঁও জেলার কৃষাণ-কৃষাণীরা।
আলুর দাম বেশি পাওয়ায় এবার ঠাকুরগাঁও জেলার চাষিরা আলু চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। কিন্তু আলুর বীজসহ আলু চাষের যাবতীয় অনুসাঙ্গিক খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় হিমশিম খাচ্ছেন তারা।
তবে এদিকে কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও এবার ২-৩ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে আলু চাষ হবে ও চাষের সকল উপকরণ পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুদ আছে। তাই আলু আবাদে কৃষকদের তেমন কোন সমস্যা হবে না।
জানা গেছে, জেলায় চলতি মৌসুমে এবার আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ২৫ হাজার ৬৮৪ হেক্টর জমি ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ লাখ ৫০ হাজর মেট্রিক টন আলু। ইতিমধ্যে আলু রোপন সম্পূন্ন হয়েছে ২৫ হাজার ৬৪৪ হেক্টর জমিতে। গত মৌসুমে আলুর দাম বেশি পাওয়ায় এবার আবাদের লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ২-৩ হাজার হেক্টর জমিতে আলু আবাদ বেশি হবে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি অধিদপ্তর।
এদিকে কৃষকরা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এবছর আলু’র বীজ, সার, কীটনাশক, সেচের জন্য জ্বালানী তেলসহ মজুরির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আলু রোপনে বিঘা প্রতি প্রায় ৩০ হাজার টাকা বাড়িত খরচ গুণতে হচ্ছে। গত বছর ১ একরে জমিতে ৩৮-৪০ হাজার টাকার বীজ লেগেছিল এবার দাম বৃদ্ধি পেয়ে তা দাঁড়িয়ে ৫৫-৬০ হাজার টাকা। এছাড়াতো আরও অন্যান্য খরচ আছেই। তাই হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।
জমি লিজ নিয়ে ১০০ বিঘা জমিতে আলু রোপন করেছেন সদর উপজেলার সালন্দর এলাকার কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, আলু বীজের দাম এবার অনেক বেশি। প্রতি কেজি বীজের আলু এবার ৫০-৬০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। অন্যদিকে সার, বিষ ও মজুরির দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে দেখা যায় এবার বিঘা প্রতি আলু আবাদ করতে প্রায় ৩০ হাজার টাকা বেশি খরচ হচ্ছে।
আলু চাষি হাফিজ উদ্দিন বলেন, এবার সব কিছুর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যান্য বার আলু বীজ প্রতি কেজি কিনতাম সেই বীজি এবার কিনতে হচ্ছে ৬০ টাকায়। এবার ৫০ শতকের ১ বিঘা জমিতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ টাকা খরচ হয়ে যাবে। যদি আলু ভালো হয়, তাহলে হয়তো আলুতে লাভবান হতে পারবো নয় তো সেটা এখন বলা যাচ্ছে না।
আলু চাষি ইউসুফ আলী বলেন, গত বছর ১ একর জমিতে আলু বীজ লেগেছিল আমরা ৩৫ হাজার টাকা এবার একই পরিমাণ জমিতে বীজ লেগেছে ৫৫ হাজার টাকার। এবার প্রতি বস্তা সার ৩০০-৪০০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। শীতের বিষ ও কীটনাশকও বেশি দামে ক্রয় করতে হচ্ছে। এভাবে আর্থিক সংকট হচ্ছে। এতে এবার আলু করতে চরম হিমশিম খাচ্ছি। খরচের তুলনায় পরে আবার আলুর দাম হবে কিনা তার তো কোন নিশ্চিয়তা নেই।
এদিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, বাণিজ্যিক ভিত্তিতে যারা আলু চাষ করবেন তারা পুরো ডিসেম্বর মাস ধরে আলু রোপন করবেন। আমরা আশা করি এবার যেহেতু আলুর দাম বেশি ছিল। সেক্ষেত্রে অনেক কৃষক আগ্রহী হয়ে আলু আরও বেশি চাষ করবেন। এবছরে আবাদের লক্ষ্যমাত্রার থেকেউ এবার প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ করার সম্ভবনা আছে। আমরা কৃষকদের কারিগরি সহযোগিতাসহ সকল প্রকার পরামর্শ প্রদান করছি এবং আলু চাষের সকল উপকরণ মজুদ আছে ও কৃষকরা তা সহজে কিনতে পারছেন। তাই আলু আবাদে কোন রকম সমস্যা হবে না।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড