• রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বছর না যেতেই মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধের দেয়ালে ফাটল

  সম্রাট, কয়রা (খুলনা)

১৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৬:০৭
দেয়ালে ফাটল

অযত্ন আর অবহেলায় খুলনার কয়রা উপজেলার ৪ নম্বর কয়রা গ্রামে গত বছরের ২৫ অক্টোবর ৩৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ। বছর না যেতেই নিম্নমানের কাজের ফলে ভেঙে নিচে খসে পড়ছে মূল প্যানেলের পিছনের টাইলসের কিছু অংশ। গবাদি পশুর অবাধ বিচরণ, পশুপাখির বিষ্ঠা আর মানুষের মলমূত্র ত্যাগের ফলে বাতাসে ভেসে আসা উৎকট দুর্গন্ধ নাকে ঝাপটা মারে। মাঝে মাঝে বসে নেশাখোর ও জুয়াড়িদের আড্ডাও।

বছর না যেতেই এর ভিতর এবং বাইরের অবকাঠামো নষ্ট হতে বসেছে। ফলে বাঙালির আবেগের এই স্থানটির পবিত্রতা রক্ষা এবং পরিচ্ছন্নতা দেখার যেন কেউ নেই। জনপ্রতিনিধি,মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয়দের অভিযোগ, নিম্মমানের কাজ এবং রক্ষণাবেক্ষণের অভাব ও প্রশাসনের চরম অবহেলার ফলে স্মৃতিসৌধটি আজ বছর না যেতেই এমনটি ঘটেছে। এই স্মৃতিসৌধের প্রতি উপজেলা প্রশাসনের কোনো দৃষ্টি নেই। আমরা এর নিন্দা জানাই। জানা গেছে, স্বাধীনতা যুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে নিহত শহীদ নারায়নের স্মরণে স্মৃতিসৌধটি নির্মাণ করা হয়। স্থানটিতে মুক্তিযুদ্ধকালিন সময়ে ৯ নম্বর সেক্টরের অধীন শহীদ নারায়ণ ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করা হয়। স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বছর পর এসে মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্থানসমূহ সংরক্ষন ও মুক্তিযুদ্ধের যাদুঘর প্রকল্পের আওতায় স্থানটি সংরক্ষণে ১০ শতাংশ জমির উপর শহীদ নারায়ান ক্যাস্প মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয় স্থানীয় প্রশাসন।

সম্প্রতি স্মৃতিসৌধে গিয়ে দেখা গেছে, এর মূল বেদিতে গ্রামবাসী ধান শুকাতে দিয়েছেন। নীচের ফাঁকা জায়গায় মাছ ধরার জাল, বারান্দায় সিমেন্টের বস্তা ও মরিচা ধরা রড স্তুপ করে রাখা হয়েছে। ভিতরে বিভিন্ন জায়গায় আগাছায় জন্মেছে। এক পাশের রাখা আছে ধানের বিচুলী। এছাড়া পুরাতন আসবাবপত্রও বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা গেছে সেখানে। অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে টিউবওয়েলটি। মূল ফটকের পাশে দুটি কক্ষের দেয়ালের পলেস্তারা এর মধ্যে খসে পড়তে শুরু করেছে। আবার দেয়ালের কয়েক স্থানে টাইলস খসে পড়েছে। দেখা দিয়েছে কয়েক জায়গায় স্থানীয় বাসিন্দা কৃষ্ণ মন্ডল জানান, নির্মাণ কাজ উদ্বোধনের পর থেকে এটি দেখভালের জন্য কেউ নেই অযত্নে অবহেলা অবস্থায় রয়েছে। নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না করায় গ্রামের ভিতর মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি বিজড়িত সুন্দর স্থাপনা ধ্বংস হতে বসেছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য লুৎফর রহমান বলেন, গত ২০২২ সালে অক্টোবরে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ উদ্বোধন করা হলেও দেখা দৃষ্টিতে এখনও অনেক কাজ বাকি রয়েছে। দেয়ালে ফাটলসহ কয়েক স্থানের পলস্তারা ধসে পড়তে শুরু করেছে। দেখ ভালের কোন লোক না থাকায় স্থাপনাটি দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে স্থানীয় লোকের অবাধ বিচরণে। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।

কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামাল হোসেন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধটি অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে এ বিষয়টি আমাদের মাধ্যে জানতে পারলাম আগে কেউ জানায়নি । খোঁজ খবর নিয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

শহীদ নারায়ণ ক্যাম্পের তৎকালীন কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা কেরামত আলী বলেন, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের দাবীর প্রেক্ষিতে ওই স্থানটি সংরক্ষণের জন্য মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। সেখানে সার্বক্ষনিকভাবে একজন তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ দেওয়ার কথা। কিন্তু নির্মাণের এক বছরেও তা সম্ভব হয়নি। যে কারণে স্মৃতিসৌধটি অযত্ম, অবহেলা ও অব্যবস্থাপনায় নষ্ট হতে বসেছে।

তিনি আরও জানান, মুক্তিযুদ্ধকালিন সময়ে স.ম বাবর আলীর সহযোদ্ধা ছিলেন শহীদ নারায়ণ। তিনি পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। ১৯৭১ সালে ভারতের বশিরহাট থেকে ফিরে সাতক্ষীরার পারলিয়া এলাকায় পাক বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে নারায়ণ নিহত হন। তাঁর স্মরণে মুক্তিযুদ্ধের ৯ নম্বর সেক্টরের অধীন শহীদ নারায়ন ক্যাম্প প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে গঠিত এ ক্যাম্পে পরে ৬০ জনে উন্নীত হয়। এ ক্যাম্প থেকে যোদ্ধারা সুন্দরবন এলাকা, কপোতাক্ষ নদ ও শিবসা নদীর পশ্চিম পাড় এলাকায় নিয়মিত টহল দিয়ে শরণার্থি ও মুক্তিযোদ্ধাদের ভারত গমনাগমনের পথ নিরাপদ রাখতেন।

মুক্তিযুদ্ধে এ ক্যাম্পটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে জানিয়ে তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে এসব ঐতিহাসিক স্থান যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা দরকার।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড