• বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৫ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

কোটি টাকা নিয়ে পালালো সমবায় সমিতি

  মো: শাহরিয়ার রুবেল, আমতলী, বরগুনা

০৮ অক্টোবর ২০২৩, ১৫:২৮
সমবায়

বরগুনার আমতলী উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে শত শত সদস্যদের আমানতের কোটি টাকা নিয়ে প্রজাপতি সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লি. নামে একটি ভুয়া এনজিও বৃহস্পতিবার রাতে উধাও হয়ে গেছে। খবর পেয়ে শত শত সদস্যরা তাদের টাকা ফিরে পেতে বিক্ষোভ করে।

ভূক্তভোগী সদস্য ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত জুন মাসে প্রজাপতি সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লি. নামে একটি বেসরকারী সংস্থা আমতলী পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের সেলিম রেজা টিটুর বাড়িতে অফিস ভাড়া নিয়ে তার কার্যক্রম শুরু করেন।ওই সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মো. আবু ছালেহ তালুকদার বরগুনার তালতলী উপজেলার কড়ইবাড়িয়া ইউনিয়নের গেন্ডামারা গ্রামের আবু বক্কর তালুকদারের ছেলে।

সংস্থাটি তাদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ৩ জন মাঠ কর্মী নিয়োগ দিয়ে উপজেলার হলদিয়া, চাওড়া, আমতলী সদর, পৌরসভা ও কুকুয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে কয়েক শত সদস্য সংগ্রহ করে তাদেরকে অধিক পরিমাণে ঋণ প্রদানের প্রতিশ্রæতি দিয়ে প্রায় কোটি টাকা সঞ্চয় সংগ্রহ করেন।

৫ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) দুপুরের পর ঋণ নেওয়ার জন্য সদস্যদেরকে অফিসে আসতে বলেন। বিভিন্ন এলাকার সদস্যরা ঋণ নেওয়ার জন্য অফিসে এসে অপেক্ষা করতে থাকেন। এক পর্যায়ে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হলেও অফিসের নির্বাহী পরিচালকসহ কর্মীদের কোন খোঁজ না পাওয়ায় সদস্যরা নির্বাহী পরিচালক আবু ছালেহ তালুকদার ও কর্মীদের ব্যবহৃত মুঠোফোন কল দিলে তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এতে সদস্যদের সন্দেহ ও খবর ছড়িয়ে পড়লেওই রাতেই বিভিন্ন এলাকার শত শত সদস্য অফিসের সামনে এসে জড়ো হতে থাকেন।

এক পর্যায়ে যখন সদস্যরা বুঝতে পারেন ওই প্রজাপতি সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লি. নামক এনজিওটি ভূয়া তখন শত শত সদস্যরা তাদের সঞ্চয় হারিয়ে কান্নাকাটি শুরু করেন এবং বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এক পর্যায়ে তারা ওই রাতে তাদের টাকা ফেরৎ পাওয়ার দাবীতে বিক্ষোভ করেন।

পরে বাড়িওয়ালা সেলিম রেজা টিটু ও স্থানীয়দের সহায়তায় মাহফুজা বেগম নামে এক মাঠকর্মীকে তার আমতলী সদর ইউনিয়নের ছোটনীলগঞ্জ গ্রামের বাড়ী থেকে এবং নির্বাহী পরিচালক আবু ছালেহ তালুকদারের বাবা আবু বক্কর তালুকদারকে তালতলীর গেন্ডামারা গ্রামের বাড়ী থেকে ধরে এনে আটকে রাখে। পরে তাদের দু’জনকে প্রজাপতি নামক এনজিও নির্বাহী পরিচালক আবু ছালহেকে ধরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রæতিতে মুচলেকা রেখে ছেড়ে দেওয়া হয়।

মাঠকর্মী মাহফুজা বেগম বলেন, আমি এক মাস আগে চাকুরি পেয়েছি টাকা আত্মসাতের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। অন্য কর্মীরা নির্বাহী পরিচালকের আত্মীয় এবং তারা পলাতক রয়েছে।

প্রজাপতি সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লি. এর নির্বাহী পরিচালক আবু ছালের পিতা আবু বক্কর তালুকদার বলেন, ছেলের সাথে ১৫ বছর ধরে আমার কোন সম্পর্ক নেই। ওই বিষয়ে আমি কিছু জানি না।

ঋণের আশায় টাকা জমা দেওয়া সদস্য কুকুয়া ইউনিয়নের মহিষকাটা গ্রামের শাহ আলম মাস্টার বলেন, আমার শুকতারা পুরুষ সমিতে ১০ লক্ষ টাকা ঋণ দেওয়ার কথা বলে ৯৫ হাজার টাকা সঞ্চয় এনেছে। কান্না জড়িত কন্ঠে তিনি বলেন, এখন মোগো কি উপায় হবে।

আমতলী সদর ইউনিয়নের মহিষডাঙ্গা গ্রামের লায়লা বেগম বলেন, আমার কামিনী মহিলা সমিতে ৮ লক্ষ টাকা ঋণ দেওয়ার কথা বলে ৮০ হাজার টাকা সঞ্চয় নিয়েছে। তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমরা গরীব মানুষ এখন আমাদের পথে বসা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।

এভাবে পৌরসভার কাঠাল চাপা মহিলা সমিতি, নাচনাপাড়া গ্রামের নয়নতারা মহিলা সমিতি, ছোট নাচনাপাড়া গ্রামের গন্ধরাজ মহিলা সমিতি, দক্ষিণ আমতলীর পদ্মফুল মহিলা সমিতিসহ চাওড়া ইউনিয়নের বৈঠাকাটা, ঘটখালী, পাতাকাটা, চালিতাবুনিয়া, কুকুয়া ইউনিয়নের মহিষকাটা, রায়বালা, আমতলী সদর ইউনিয়নের ছুরিকাটা, নাচনাপাড়া, ছোট নাচনাপাড়া, মহিষডাঙ্গা, পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড, হলদিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম চিলা, চিলাসহ বিভিন্ন গ্রামে প্রায় ২ শতাধিক সমিতি গঠন করে ৪-৫ শতাধিক সদস্য সংগ্রহ করে তাদের নিকট থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রজাপতি সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লি. নামের এই এনজিওটি।

প্রজাপতি ঋণদান সমবায় সমিতির লি. এর নিকট ভাড়া দেওয়া বাড়ির মালিক মো. সেলিম রেজা বলেন, অফিস ভাড়া নেওয়ার পর দেখতাম সবাই নিয়মিত অফিস করতেন এবং প্রতিদিন লোকজন আসা যাওয়া করতো। বৃহস্পতিবার ঋণ দেওয়ার কথা বলে বিকেলে তারা পালিয়েছে।

অভিযুক্ত প্রজাতি সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লি. এর নির্বাহী পরিচালক মো. আবু ছালেহ তালুকদারের ব্যবহৃত মুঠোফোনে (০১৭০৯৯৪৬৬৫২) একাধিকবার কল দিলেও ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু বলেন, ওই বিষয়টি শুনেছি তবে এখনো কোন অভিযোগ পাইনি। লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, ওই বিষয়ে আমতলী থানাকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছি।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড