• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

চেয়ারম্যান-মেম্বরদের কারসাজিতে চলছে হরিলুট 

অতিদরিদ্রদের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ না পেয়ে শ্রমিকদের অসন্তোষ

কর্তৃপক্ষ বলছে- তদন্ত করে ব্যবস্থা

  মো. হেলাল হোসেন, মাগুরা

১৩ আগস্ট ২০২৩, ১৭:১৫
অতিদরিদ্রদের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ না পেয়ে শ্রমিকদের অসন্তোষ

২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকারের অতিদরিদ্রদের কাজের জন্য কর্মসূচি (ইজিপিপি) প্রকল্পের আওতায় মাগুরা জেলার সকল ইউনিয়নে মাটির রাস্তা সংস্কারর জন্য প্রায় ২৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে।

কর্মসূচির আওতায় প্রথম পর্যায়ে ৪০ দিন এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ৩৬ দিন কাজ হয়েছে ৩০ জুনের মধ্যে। নিয়ম অনুযায়ী এসব কাজের মজুরী শ্রমিকদের ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বারে নগদ নম্বরে পেয়ে থাকে। এ কাজে প্রতিটি ইউনিয়নের অধীনে ৬টি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ইউপি সদস্যর প্রধান করে কমিটি গঠনের মাধ্যমে কাজ পরিচালনা করা হয়।

জেলার মহম্মদপুর উপজেলার পলাশবাড়িয়া ইউনিয়নের অধীনে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩৬৯ জন শ্রমিক কাজ করে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে। কিন্তু সম্প্রতি শেষ হওয়া কাজের দুইবারই বিল না পাওয়ায় শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। টাকার আশায় চেয়ারম্যান মেম্বারসহ উপজেলা প্রকল্প অফিসে ঘোরাঘুরি করেও কোনো লাভ হয়নি তাদের।

মন্ত্রণালয়ে পাঠানো বিলশিট, প্রতিদিনের হাজিরা খাতা এবং উপজেলার তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায় একই ব্যক্তির মোবাইল নাম্বার ভিন্ন ভিন্ন। যার কারণে অনেকে টাকা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

লেবার সরদারেরা যে নামের তালিকা সহ মোবাইল নাম্বার দেন তা চেয়ারম্যান পরিবর্তন করে অন্য মোবাইল নম্বর সেখানে বসিয়ে দেন। তালিকা চাইলে সেটি দেখাতে চান না চেয়ারম্যান।

মাগুরা থেকে হেলাল হোসেন এর পাঠানো তথ্য ও চিত্র নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন ভুক্তভোগী নিহারন বেগম, পলাশবাড়িয়া ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের জোকা গ্রামের নিহারন বেগমের বয়স জাতীয় পরিচয় পত্র অনুযায়ী আশি উদ্ধ হলেও প্রকৃত বয়স ষাটউদ্ধ। স্বামী নেই, সন্তানরা কেউ বৃদ্ধ মাকে দেখেন না। নিহারন বেগম অতিদরিদ্র কর্মসূচীর আওতায় বিগত ১৫ বছর ধরে কাজ করে সংসার চালান। কিন্তু ২০২২-২৩ অর্থ বছরে প্রথম পর্যায়ে ৪০ দিন কাজ শেষে টাকা না পেলে চেয়ারম্যান, মেম্বার সহ সংশ্লিষ্ট অফিসে ঘোরাঘুরি করে লাভ হয়নি। পরবর্তীকালে টাকা পাবেন এমন আশ্বাসের পরিপেক্ষিতে দ্বিতীয় পর্যায়ে ৩৬ দিনের কাজ শেষ করেন। কিন্তু এবারও টাকা না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন। এর সুষ্ঠু বিচার চান তিনি।

একই গ্রামের হাঁফানির রোগী মাফুজার বিশ্বাস ১২ বছর ধরে এই ধরনের কর্মসূচির কাজ করেন থাকেন। তিনিও এ অর্থবছরে প্রথম ৪০ দিন এবং পরবর্তী ৩৬ দিনের কোনো টাকা পাননি। টাকার অভাবে চিকিৎসা নিতে পারছেন না। টাকার জন্য বিভিন্ন স্থানে দৌড়াদৌড়ি করেও আশ্বাস ছাড়া আর কিছুই কপালে জোটেনি তার।

একই গ্রামের ফাতেমা খাতুন, বলরামপুর গ্রামের পান্নু মোল্যা, পলাশবাড়িয়া গ্রামে মাসুদ হেসেন, জোকা গ্রামের সাখাওয়াত বিশ্বাস জোকা গ্রামের বাবু মোল্যার মত অনেকে এ কর্মসূচির কাজ করেও কোনো টাকা পাননি। এখন তারা সবাই দিশেহারা হয়ে প্রহর গুনছেন তাদের টাকাটা আদ্যও পাবেন নাকি।

এসব প্রকল্পের শ্রমিক নেতা থেকে শুরু করে, প্রকল্পে কাজের সাথে শ্রমিকদের সব কাগজপত্র ঠিক থাকলেও চূড়ান্ত বিল তৈরি করার সময় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সাহেব ইচ্ছামত মোবাইল নাম্বার বসিয়ে এসব টাকা আত্মসাৎ করেন। যে কারণে শ্রমিকরা ঠিক মত টাকা পাচ্ছে না। আবার প্রকল্পের নেতারা এসব বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে কোন প্রকার কথা বলতে চান না।

প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের বিষয়ে পলাশবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সেকেন্দার আলীর কাছে জানতে চাওয়া হলে, তিনি সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পরে এসব বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

এ ঘটনার বিষয়ে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামান বলেন, আমরা যাচাই করে দেখতে পারছি যে কিছু কিছু যায়গা বা উপজেলা ইউনিয়নে শ্রমিকেরা বিল পেয়েছে। শ্রমিকের বিলগুলি আমরা সরাসরি ঢাকা হেড অফিসে তাদের করা তালিকা অনুযায়ী পাঠিয়ে দিই। ওখান থেকে বিল পাশ করে আবার উপজেলাতে যার যার একাউন্টে সিম কার্ডে টাকাটা সরাসরি চলে আসে। আমরা কোনো বিল যাচাই করি না। যখন কোনো অভিযোগ পাই তখন আমরা ঢাকতে যোগাযোগ করি। এখানে যদি কারো গাফলতি থাকে তাহলে বিষয়টি আমরা উপর মহলে জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

প্রকল্পের অনিয়মের বিষয়ে মাগুরা জেলা প্রশাসক আবু নাসের বেগের সাথে কথা হলে তিনি বলেছেন, আমি জানতে পেরেছি এই ঘটনাটি অনেক অংশেই সত্য। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পে-অফ, একজন শ্রমিক দিনে ৪০০ টাকা হিসেবে প্রথম ৪০ দিনে ১৬ হাজার টাকা এবং পরবর্তী ৩৬ দিনে ১৪৪০০ টাকা পাবে। মাগুরা জেলার ৪টি উপজেলায় মোট ৩৬টি ইউনিয়ন রয়েছে।

এক থেকে পাঠানো বিল শিট পরীক্ষা করে দখো যায়, অতিদরিদ্রদের কাজের জন্য সরকার প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও জেলার সকল ইউনিয়ন পর্যায়ে মাটির রাস্তা সংস্কারর জন্য স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে এ কর্মসূচী বাস্তবায়ন করে। কর্মসূচির আওতায় প্রথম পর্যায়ে ৪০ দিন এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ৩৬ দিন কাজ হয়েছে। প্রকল্পে আওতায় প্রতিটি ইউনিয়নের অধীনে ৬টি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ইউপি সদস্যকে প্রধান করে কমিটি গঠনের মাধ্যমে কাজ পরিচালনা করা হয়।

মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলার পলাশবাড়িয়া ইউনিয়নের অধীনে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩৬৯ জন শ্রমিক কাজ করে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে এ কাজ করেন।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড