• রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ভ্যানচালক পিতার ঘর আলো করে সুমাইয়ার জিপিএ-৫ প্রাপ্তি 

  এস. এম. রাসেল, মাদারীপুর

০১ আগস্ট ২০২৩, ১৫:৫৫
ভ্যানচালক পিতার ঘর আলো করে সুমাইয়ার জিপিএ-৫ প্রাপ্তি 

এসএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জনকারীরা যখন আনন্দ-উল্লাসে মেতে উঠছেন। ঠিক তখনই উল্টো চিত্র দেখা দিয়েছে মানবিকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ প্রাপ্ত সুমাইয়া আক্তারের বাড়িতে। সুমাইয়ার বাবা ভালো ফলাফলের খবর পেয়ে মেয়েকে স্কুলে পৌঁছে দিয়েই ফিরে যান নিজ পেশা ভ্যান চালাতে।

মাদারীপুরের শিবচরের পাচ্চর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অতি দরিদ্র ভ্যানচালকের মেয়ে অদম্য মেধাবী এই শিক্ষার্থী ভাল কলেজে ভর্তির প্রস্তুতির পরিবর্তে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার চিন্তায় উদ্বিগ্ন।

সরেজমিন জানা যায়, শিবচরে মাদবরচর ইউনিয়নের লপ্তিকান্দি গ্রামের দরিদ্র ভ্যানচালক মো. হবি মোল্লা ও তাসলিমা বেগমের চার সন্তানের তৃতীয় মেয়ে সুমাইয়া আক্তার। পদ্মা নদীর ব্যাপক ভাঙ্গনের শিকার হয়ে চরজানাজাত থেকে এই এলাকায় এসে বছরে পাঁচ হাজার টাকা খাজনায় এক টুকরো জমি ভাড়া নিয়ে দোচালা ঘর তুলে বসত গড়ে হবি মোল্লার পরিবার। এরপর বড় মেয়ের বাচ্চা হওয়ার পর স্বামী তাড়িয়ে দেয়ায় সেও আশ্রয় নিয়েছে এ বাড়িতে।

সবমিলিয়ে সংসার চালানো নিয়েই হিমশিম পরিস্থিতি। দিন এনে দিন খাওয়া পরিবারটির কাছে লেখাপড়া স্বপ্নের মতো হলেও সুমাইয়ার ছিল অদম্য ইচ্ছা শক্তি। প্রতিদিন আধা ঘণ্টার মতো পায়ে হেটে স্কুলে যেত আবার ফিরত একইভাবে।

নবম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় মা-বাবা বিয়ে ঠিক করলে সুমাইয়া প্রধান শিক্ষকের কাছে আশ্রয় নিলে তার আশ্বাসে ও সহায়তায় চলতি বছর এসএসসিতে অংশ নেয়। ফরম ফিলাপের টাকাও দেন প্রধান শিক্ষক।

সব বই না থাকায় বন্ধুদের কাছ থেকে বই চেয়ে নিয়ে পড়তো অদম্য সুমাইয়া। পরীক্ষাকালীন সময়ে সুমাইয়াকে বিশেষ কোনো খাবারও দিতে পারেনি পরিবারটি। হাতেগোনা দুটো ড্রেস পড়ার মতো রয়েছে তার।

পরীক্ষার পর মিষ্টিও নেয়নি বাড়িতে বাবা। মেয়ে কোথায় পড়তে চায় জিজ্ঞাসা করলে মা বাক্রুদ্ধ হয়ে উঠেন। পাশে বসে মেয়ে ওড়না দিয়ে চোখ মুছেন। সুযোগ পেলে ঢাকায় ভিকারুন্নেছা কলেজে পড়তে চায় সুমাইয়া। কিন্তু অর্থাভাবে কলেজে ভর্তি ও যাতায়াত ব্যয় নিয়েও শঙ্কিত পরিবারটি।

সুমাইয়ার মা তাসলিমা বেগম বলেন, আমরা কোনোদিন সুমাইয়াকে পারিনি ভাল কোনো খাওয়ার খাওয়াতে। অনেক দূরের স্কুলে যেতো পায়ে হেঁটে। কখনো ওর বাবা পৌঁছে দিত। আমার মেয়ের স্বপ্ন অনেক বড়। কিন্তু ওর স্বপ্ন পূরণ করার সাধ্য আমাদের নেই। তাইতো একবার বিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু স্কুলের হেডস্যার দিতে দেয়নি। ওর লেখাপড়া চালানোর জন্য অনেক সহযোগিতা করেছে স্যারেরা। এখন ওর ভবিষ্যৎ লেখাপড়া কিভাবে চালাবো সেটাই বুঝতে পারছি না। সকলে সহযোগিতা করলে হয়ত আমার মেয়ের স্বপ্ন পূরণ হবে।

সুমাইয়ার বাবা মো. হবি মোল্লা কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, অন্যের ক্ষেতে কামলা দিয়ে সংসার চালাইতে হিমশিম খাচ্ছিলাম। তখন কিছু টাকা ঋণ করে একটা ভ্যান কিনছি। ভ্যান চাইয়া কোনো রকমে সাতজনের সংসার চালাই। পারিনাই মেয়েটারে কোনোদিন ভাল একটা ড্রেস কিনে দিতে। স্কুলের স্যারেরা সাহায্য না করলে ওর লেখাপড়াই হইতো না। এখন কিভাবে ভাল কলেজে ভর্তি করবো তাইতো বুঝতে পারছি না। ওর স্বপ্ন অনেক বড় কলেজে পড়ার। আমি সকলের সহযোগিতা চাই।

অদম্য মেধাবী সুমাইয়া আক্তার বলেন, স্কুলের হেডস্যারসহ অন্যান্য স্যারদের সহযোগিতা না পেলে ভাল ফলাফল দুরের কথা আমারতো লেখাপড়া করাই হতো না। আমার বাবা ভ্যান চালিয়ে অনেক কষ্ট করে আমাদের সংসার চালান। আমি যখন দশম শ্রেণিতে পড়ি তখন ফরম ফিলাপসহ অন্যান্য খরচের চিন্তায় আমার লেখাপড়া বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পরিবার। তখন হেডস্যারকে বললে সে আমার ফরম ফিলাপের দায়িত্ব নেন।

তিনি আরও বলেন, খাতা, কলম, বই দিয়েছেন। আমার ইচ্ছা ঢাকায় ভিকারুন্নেছা স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার। কিন্তু আমার বাবা মায়ের পক্ষে এত বড় খরচ চালানো সম্ভব না। তাই কিভাবে লেখাপড়া চালিয়ে নেবো কিছুই বুঝতে পারছি না।

পাচ্চর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ সামসুল হক বলেন, সুমাইয়া আক্তার খুবই মেধাবী একজন শিক্ষার্থী। তবে অতি দরিদ্র পরিবারের সন্তান হওয়ায় ওর লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া খুবই কষ্টকর ছিল। সুমাইয়া বিষয়টি আমাকে জানানোর পর আমি বিভিন্ন সময়ে ওকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি।

তিনি আরও বলেন, টাকা ছাড়াই ওর এসএসসি পরীক্ষার ফরম ফিলাপ করিয়ে দিয়েছি। ও আজ ভালো একটি ফলাফল অর্জন করেছে এতে আমরা সবাই খুবই আনন্দিত। তবে সুমাইয়ার ভবিষ্যৎ লেখাপড়ার খরচ বহন করা ওর পরিবারের পক্ষে সম্ভব না। তাই সমাজের সকল বিত্তবান মানুষ যদি সহযোগিতার হাত বাড়ায় তবে মেধাবী সুমাইয়া ভবিষ্যতে অনেক বড় স্থানে জায়গা করে নেবে বলে আমার বিশ্বাস।

উল্লেখ্য, সুমাইয়াকে সহযোগিতা করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য তার পরিবারের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড