নাসিম আজাদ, স্টাফ রিপোর্টার (নরসিংদী)
নরসিংদীতে ছাত্রদল নেতা সাদেক ও আশরাফুল আলোচিত হত্যা মামলায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক খায়রুল কবির খোকনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন জেলা ও দায়রা জজ আদালত।
আদালত সূত্রে জানা যায়, নরসিংদীতে ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে কেন্দ্র করে সাদেকুর রহমান ও আশরাফুল নামে ছাত্রদলের দুই নেতা নিহত হওয়ার ঘটনায় বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক খায়রুল কবির খোকন এবং তার সহধর্মিণী শিরিন সুলতানা সহ ৩০ জনের নামে নরসিংদী মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
উক্ত হত্যা মামলায় খায়রুল কবির খোকন গত ৫ জুন হাইকোর্ট থেকে ৬ সপ্তাহের আগাম জামিন নেন। হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী ৬ সপ্তাহের মধ্যে নিম্ন আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন। হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী গত ১৩ জুলাই নরসিংদী জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন প্রার্থনা করেন। পরে আদালত তার জামিন ২৭ জুলাই পর্যন্ত মঞ্জুর করেন।
আজ বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) জেলা ও দায়রা জজ আদালতে অত্র মামলার স্থায়ী জামিনের ধার্য তারিখ ছিল। কিন্তু তিনি আদালতে হাজির না হয়ে তার আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে সময়ের প্রার্থনা করেন। বিজ্ঞ আদালত তার সময়ের আবেদন না মঞ্জুর করেন। পরে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যু করার নির্দেশ দেন।
মামলার বাদী আলতাফ হোসেন বলেন, আজ আমার ভাই সাদেক হত্যা মামলার আসামি বিএনপির নেতা খোকন আদালতে উপস্থিত হওয়ার কথা। কিন্তু সে আদালতে উপস্থিত না হয়ে তার আইনজীবীর মাধ্যমে সময় প্রার্থনা করেন। আদালত সময় না মঞ্জুর করে ওয়ারেন্ট জারি করেন বলে তিনি জানান।
বাদী পক্ষের আইনজীবী মো. শফিকুল ইসলাম জানান, খায়রুল কবির খোকন উচ্চ আদালত থেকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন নিয়েছিলেন। আজ স্থায়ী জামিন শুনানি ছিল। কিন্তু তিনি আদালতে উপস্থিত না হয়ে তার আইনজীবীর মাধ্যমে সময় প্রার্থনা করেন। বিজ্ঞ আদালত তার সময় আবেদন না মঞ্জুর করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার নির্দেশ প্রদান করেন।
অপর দিকে বিএনপি নেতা খায়রুল কবির খোকন আদালতে উপস্থিত হবেন এমন খবরে সকাল থেকেই আদালত চত্বর ও আশপাশ এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। বিশৃঙ্খলা এড়াতে সকাল থেকেই ডিসি রোড নিয়ন্ত্রণে নেন জেলা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
উল্লেখ, চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি জেলা ছাত্রদলের পাঁচ সদস্যের আংশিক কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। ঘোষিত ওই কমিটিতে সিদ্দিকুর রহমানকে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ও মেহেদী হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ওই কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদ-প্রত্যাশী ছিলেন মাইন উদ্দিন ভূঁইয়া। এরই সূত্র ধরে ছাত্রদলের প্রত্যাশিত পদ না পাওয়ায় পদ-বঞ্চিত নেতা মাইন উদ্দিন ভূঁইয়া ও তার অনুসারীরা খায়রুল কবির খোকনের গাড়ী বহরে হামলা, দফায় দফায় দলীয় কার্যালয় ভাংচুরের ঘটনা ঘটায়।
পরে ২৫ মে দুপুরে ছাত্রদল নেতা সাদেকুর রহমান ও মাইনুদ্দিনের নেতৃত্বে পদ-বঞ্চিত ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা পিকআপ ভ্যান ও ১০০ মোটরসাইকেল নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে চিনিশপুর বিএনপির কার্যালয়ের দিকে যাওয়ার সময় খায়রুল কবির খোকনের নির্দেশে সন্ত্রাসীরা মিছিলে ককটেল নিক্ষেপ করেন। তারা লাঠি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা করে অনেক নেতাকর্মীকে আহত করেন। ওই সময় সন্ত্রাসীরা সাদেকুর রহমানকে ঘেরাও করে খুব কাছ থেকে তার মাথায় গুলি করে।
এ ঘটনায় আশরাফুল নামে আরও একজনকে গুলি করা হয়। পরে তাদের উদ্ধার করে প্রথমে জেলা হাসপাতাল ও পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সাদেকুর রহমান মারা যান। এর একদিন পর শুক্রবার সকালে অপর ছাত্রদল নেতা আশরাফুল মারা যান।
মূলত এ ঘটনার প্রতিবাদে ৩১ মে খায়রুল কবির খোকনের চিনিশপুরের বাসভবন পদ-বঞ্চিত নেতারা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ করেন বিএনপির নেতা খায়রুল কবির খোকন।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড