• সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

রূপগঞ্জের শিল্পাঞ্চলে অবাধে মাদক-অস্ত্রের মজুদ

বাড়ছে অপরাধের প্রবণতা

  সাইদুর রহমান, স্টাফ রিপোর্টার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)

২৭ জুলাই ২০২৩, ১৪:৩৫
রূপগঞ্জের শিল্পাঞ্চলে অবাধে মাদক-অস্ত্রের মজুদ

রাজধানী ঢাকার উপকণ্ঠে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার অবস্থান। এ উপজেলা ছোট বড় মিলিয়ে দুই হাজারের অধিক শিল্প কারখানা ও বিভিন্ন আবাসন প্রকল্প গড়ে উঠায় এখানে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে। সেই সাথে বেড়েছে মাদক ও অস্ত্রের মজুদও।

গত এক যুগের ব্যবধানে পাল্টে গেছে রূপগঞ্জ উপজেলা। এ উপজেলায় নির্মাণ হয়েছে ফ্লাইওভার, পূর্বাচল উপ-শহর, রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন উন্নয়ন। উন্নয়নের পাশাপাশি বেড়েছে জমিজমার মূল্য। আর এর সাথে পাল্লা দিয়ে উপজেলায় বেড়েছে সন্ত্রাসী কার্যক্রম। আর এ সন্ত্রাসী কার্যক্রম বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা এবং অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আধিপত্য বিস্তার।

এ কারণে প্রতিনিয়ত উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়, হত্যা, ছিনতাই, ডাকাতি, গুলাগুলি, সংঘর্ষ ও হামলা ভাংচুরসহ বিভিন্ন ঘটনা ঘটে চলছে। আর এসব কিছুর মূলে রয়েছে রাজনৈতিক আশ্রয় আশ্রয় রয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। রাজনৈতিক শেল্টার ও অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার ও মজুদ থাকার কারণে প্রাণের ভয়ে কেউ টু শব্দটিও করতে সাহস পায় না।

জানা গেছে, শিল্পাঞ্চল রূপগঞ্জ উপজেলায় প্রতিনিয়ত একের পর এক অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে। এছাড়া সামনে জাতীয় নির্বাচন। আর এ নির্বাচনকে সামনে রেখে উপজেলায় বাড়ছে আগ্নেয়াস্ত্রসহ ও ধারালো অস্ত্রের মজুদ। এছাড়া অস্ত্রের মজুদের পাশাপাশি উপজেলায় বেড়েছে মাদকের বিস্তারও।

এ উপজেলার ভুলতা, গোলাকান্দাইল, মুড়াপাড়া, তারাবো, চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র, রূপগঞ্জ, দাউদপুর, ভোলাসহ বিভিন্ন এলাকায় মাদক বিক্রি যেন ওপেন সিক্রেট। আর এ সকল অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও মাদক উদ্ধারে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা তেমন দৃশ্যমান নেই বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। কোন এলাকায় এমনি তুচ্ছ ঘটনা ঘটলেও সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার করছে। এতে উপজেলার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে।

এ দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিয়ো ভাইরাল হয় অস্ত্র ঘষা মাজার। ওই ভিডিয়োতে দেখা যায়, উপজেলার মাহমুদাবাদ এলাকার নাসির মোল্লার ছেলে সোহরাব মোল্লা (৩০) একটি অত্যাধুনিক পিস্তল হাতে নিয়ে ঘষা মাজা করছে। ম্যাগজিন পিস্তলে ভরছে আবার বের করছে। সোহরাব মোল্লার সহযোগী হিসেবে রয়েছে, মাছিমপুর দেওয়ান বাড়ি এলাকায় মৃত সফিউদ্দিন সফুর ছেলে বাবু (২৮), মর্তৃজাবাদ দক্ষিণ পাড়া এলাকার মৃত জাহাঙ্গীরের ছেলে ফেরদৌস (২৮) সহ আরও অনেকে।

গোলাকান্দাইল ৫নং ক্যানেল এলাকার রাজন বাহিনীর প্রধান রাজনসহ তার সহযোগীর পিস্তল দিয়ে ফাকা গুলি বর্ষণ করার ভিডিয়ো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। এছাড়া কিশোর ও যুবক বয়সী ছেলে পিস্তল নিয়ে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোষ্ট করে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে।

এসব মাদক-অস্ত্র ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। চনপাড়ায় প্রকাশ্য দিবালোকে পিস্তল দিয়ে গুলিবর্ষণ করছে রাব্বি নামে এক সন্ত্রাসী। আর গুলিবর্ষণ এর ছবি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ছাপা হয়।

আর এর মূলে রয়েছে মাদক ও অস্ত্র ব্যবসা। আর এ মাদক ও অস্ত্র ব্যবসার শেল্টারদাতা হিসেবে কাজ করে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা। আর এ সকল রাজনৈতিক নেতাদের শেল্টার বেপরোয়া হয়ে পড়েছে মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২৩ জুলাই আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র এলাকায় জয়নাল গ্রুপ ও শমসের গ্রুপের মাঝে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় চারজন গুলিবিদ্ধসহ ১৫ জন আহত হয়। ৩ জুলাই রাতে এলাকায় জয়নাল গ্রুপ ও সশস্ত্র গ্রুপের মাঝে সংঘর্ষে একজন গুলিবিদ্ধসহ ১৪ জন আহত হয়।

গেল ২৩ জুন একই দুই গ্রুপের সংঘর্ষে দুইজন গুলিবিদ্ধসহ ২০ জন আহত হয়। গত ৭ জুন বলাইখা এলাকায় টাকা দাবি করাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়। গত ৫ জুন আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র রাসেল শিকদার নামে এক হোটেল ব্যবসায়ীকে গুলি করে প্রতিপক্ষ।

গত ৩০ মে যুবলীগের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষে বিল্লাল হাওলাদার নামে এক রেস্তোরা বাবুর্চি গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়। ১১ মে রাতে গোলাকান্দাইল এলাকায় চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে রাজন গ্রুপ ও মাসুম বিল্লাহ গ্রুপের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় মাসুম বিল্লাহ নামের এক জন গুলিবিদ্ধ হন। এছাড়া রাজন মোটরসাইকেল নিয়ে এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে গুলি ছোড়েন। যেটির ভিডিয়ো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।

গত ১০ মে চনপাড়ায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষের সৈয়দ নামে একজন গুলিবিদ্ধসহ ২০ জন আহত হয়। এছাড়া গত ১১ এপ্রিল জয়নাল গ্রুপ ও শমসের গ্রুপের মাঝে রাতভর সংঘর্ষেও ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় তিনজন গুলিবিদ্ধসহ ২০ জন আহত হয়েছে। পরে গত ৩০ এপ্রিল পুলিশ চনপাড়ায় অভিযান পরিচালনা করে ১৩ জন দেশীয় অস্ত্রসহ মাদক উদ্ধার করে। পরে আবারও গত ১১ মে মাদকের কারবার নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে জয়নাল গ্রুপের সাথে শমসের গ্রুপের মাঝে সংঘর্ষেও ঘটনা ঘটেছে।

এ ঘটনায় সৈয়দ নামে একজন গুলিবিদ্ধসহ তিন পক্ষের ২৪ জন আহত হয়। এদিকে, ২৩ জুলাই চনপাড়ার অন্যতম ত্রাস জয়নাল গ্রুপের প্রধান জয়নাল ও তার সহযোগীদের পিস্তল ও ধারালো অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভুলতা ও গাউছিয়া এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কয়েক দিন পর পর অস্ত্রের মহড়া দিতে দেখা যায়। এ ধরনের ঘটনার অভিযোগের শেষ নেই।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, অস্ত্রের ঝনঝনানিতে পুরো রূপগঞ্জটা অশান্ত হয়ে আছে। রূপগঞ্জ উপজেলা বর্তমানে মানুষের কাছে রক্তাক্ত রূপগঞ্জ হিসেবেও পরিচিত। ছোটখাটো ঘটনাতেও কিশোর যুবক বয়সী ছেলেরা পিস্তল ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে ঘর থেকে বের হয়। এছাড়া প্রতিনিয়ত এলাকা গুলোতে চুরি, ছিনতাইসহ নানা ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ড বেড়েই চলছে। আর এসকল কর্মকাণ্ড পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক শেল্টার। এ কারণে সন্ত্রাসীরাও বেপরোয়া হয়ে পড়ছে। আর প্রশাসনও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছে না। প্রশাসনের তৎপরতার অভাবেই এ ধরনের অপরাধ বাড়ছে।

রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি এএফএম সায়েদ বলেন, অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারে থানা পুলিশ তৎপর রয়েছে। এ পর্যন্ত বিপুল পরিমাণ মাদক, ধারালো অস্ত্র ও বেশ কয়েকটি পিস্তল ও গুলি উদ্ধার করা হয়। চনপাড়ার শীর্ষ সন্ত্রাসী জয়নালসহ তার সহযোগীদের গ্রেফতার করা হয়। অপরাধ প্রবণতা নিয়ন্ত্রণে এবং অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার পুলিশ কাজ করছে।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড