• সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৪ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

সুদের খপ্পরে চাকুরি খুইয়ে নিঃস্ব শিক্ষক

  সোহেল রানা, সিরাজগঞ্জ

২৬ জুলাই ২০২৩, ১৭:২৪
সুদের খপ্পরে চাকুরি খুইয়ে নিঃস্ব শিক্ষক

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় মাদরাসার শিক্ষক পদের চাকুরি থেকে জোরপূর্বক ইস্তফা নিয়ে সুদ ব্যবসায়ীকে ওই পদে চাকুরি দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে।

রায়গঞ্জের এম. আর দাখিল মাদরাসার সহকারী শিক্ষক (কৃষি) সামসুজ্জোহা বকুল চাকুরি হারিয়ে গত সাত বছর যাবত মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় পরিবার পরিজন নিয়ে নিঃস্ব অবস্থায় জীবনযাপন করছে। গত সাত বছরে সুদ ব্যবসায়ীদের ভয়ে প্রতিকার চাওয়ার সাহস না হলেও সম্প্রতি ওই সুদ ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় মুখ খুলেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষক পরিবার।

ভুক্তভোগী শিক্ষক সামসুজ্জোহা বকুল বলেছেন, ২০০৩ সালে রায়গঞ্জ উপজেলার এম.আর দাখিল মাদরাসায় সহকারী শিক্ষক (কৃষি) হিসেবে যোগদান করেন। শিক্ষকতার দরুন মাদরাসা সংলগ্ন বিপ্লব নামে এক যুবকের সাথে পরিচয় হয়। টাকার প্রয়োজন হওয়ায় তিনি বিপ্লবকে জানালে সে তার চাচাতো ভাই সুদ ব্যবসায়ী ফেরদৌস আলমের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা সুদে নিয়ে দেন। কিন্তু টাকা পরিশোধ করতে না পারায় বিপ্লব মানসিক নির্যাতন শুরু করে। এর মধ্যেই ২০১৫ সালে বিপ্লব মাদরাসার সভাপতি নির্বাচিত হয়। সভাপতি নির্বাচিত হয়ে সাতদিনের মধ্যে টাকা ফেরত দিতে বলেন।

তিনি আরও বলেন, নচেত চাকুরি থেকে ইস্তফা দিতে বলেন এবং সেই পদে সুদ ব্যবসায়ী ফেরদৌসকে নিয়োগ দিবেন বলে জানান। আমি অনুরোধ করলেও তিনি এবং মাদ্রাসা সুপার শুনেন না। এক পর্যায়ে ইস্তফাপত্র তৈরি করে তার বাসায় ডেকে নিয়ে স্বাক্ষর দিতে বাধ্য করেন। আর এ বিষয়ে কোথাও অভিযোগ করলে প্রাণ নাশের হুমকি দেন। যেহেতু আমার বাসায় পার্শ্ববর্তী উল্লাপাড়া উপজেলায় তাই ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাইনি। পরবর্তীকালে একমাসের মধ্যেই ওই সুদ ব্যবসায়ী ফেরদৌসকে আমার পদে চাকুরী দিয়ে দেন।

সামসুজ্জোহা বকুল বলেছেন, সম্প্রতি ফেরদৌস আলম ৩ লাখ সুদের টাকা দিতে না পারায় সংখ্যালঘু এক যুবকের কাছ থেকে সাড়ে ছয় বিঘা জমি লিখে নেয়ার ঘটনায় বিভিন্ন মিডিয়া প্রকাশ হয়েছে। ঘটনাটি জানতে পারে ভয় কাটিয়ে একটু সাহসের সঞ্চার হওয়ায় আমি মুখ খুলেছি।

ভুক্তভোগী শিক্ষকের স্ত্রী উম্মে হাবিবা বলেন, আমার স্বামী ইস্তফা দিয়েছি জানতে পেরে তখনই সভাপতি বিপ্লবের বাসায় গিয়ে তার সুদের দুই লক্ষ টাকা ফেরত দেয়ার জন্য একমাস সময় চাই এবং জমি বিক্রি করে টাকা ফেরত দিবো বলে জানালে সে সাফ জানিয়ে দেন, আপনাদের সুদের টাকা ফেরত দিতে হবে না এবং চাকুরিও ফেরত পাবেন না। এরপর থেকে আমার স্বামী একমাস বাড়িতে ফেরে নাই। একমাস পর তাকে খুঁজে পাই। সেই থেকে সে ভারসাম্যহীন অবস্থায় রয়েছে। চাকুরি খুইয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটছে। তিনি চাকুরি ফেরতের পাশাপাশি তার চিকিৎসা ব্যবস্থা করার দাবী জানান।

এ বিষয়ে সুদ ব্যবসায়ী ফেরদৌস আলম জানান, মাদরাসার সভাপতি বিপ্লব আমার চাচাতো ভাই। তাকে কোনো টাকা দেয়া হয়নি। নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েই চাকুরি পেয়েছি।

তবে মাদরাসার সভাপতি বিপ্লব ও মাদ্রাসা সুপার আনোয়ার হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, সুদের টাকার জন্য নয় বরং শিক্ষক সামসুজ্জোহা শারীরিক অসুস্থতা দেখিয়ে চাকুরি থেকে ইস্তফাপত্র দিয়েছেন। পরবর্তীকালে নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে ফেরদৌস আলমকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড