• মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৫ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

সোনালী আঁশের বাম্পার ফলনে পাট চাষিদের মুখে হাসি

  সোহেল রানা, সিরাজগঞ্জ

২৫ জুলাই ২০২৩, ১৫:১৫
সোনালী আঁশের বাম্পার ফলনে পাট চাষিদের মুখে হাসি

পাট এক সময় সোনালি আঁশ নামেই সর্বাধিক পরিচিত ছিল। এখন আর পাটের সেই সুদিন নেই। তারপরেও চলতি বছরে সিরাজগঞ্জে ১৭ হাজার দুইশ ৯৮ হেক্টর জমিতে তোষা, মেস্তা ও কেনাফ জাতের পাটের আবাদ হয়েছে। ফলে বিভিন্ন উপজেলায় পাট কাটা ও জাগ দেওয়া নিয়ে কৃষকেরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। বর্তমানে এ জেলায় পাটের ফলন ও দাম ভালো হওয়ায় লাভবান হওয়ার আশা করছেন কৃষকেরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে পাঁচ হাজার ছয়শ ৪৫ হেক্টর, সদর উপজেলায় তিন হাজার তিনশ ৫০ হেক্টর, উল্লাপাড়ায় এক হাজার ছয়শ ২০ হেক্টর, বেলকুচিতে এক হাজার নয়শ ৬০ হেক্টর, শাহজাদপুরে চারশ ৩৫ হেক্টর, তাড়াশে সাতশ ৪৫ হেক্টর, রায়গঞ্জে আটশ ৯২ হেক্টর, চৌহালীতে নয়শ ২০ হেক্টর, কামারখন্দে এক হাজার সাতশ ৩১ হেক্টর জমিতে পাট চাষাবাদ হয়েছে। জেলায় মোট ১৭ হাজার দুইশ ৯৮ হেক্টর জমি থেকে পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৬ হাজার দুইশ নয় মেট্রিক টন।

জেলার হাট-বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিভিন্ন স্থানের কৃষকেরা পাট ধুয়ে বাজারে ভাল দামে বিক্রি শুরু করেছে। বর্তমানে হাটে তোষা পাট তিন হাজার একশ টাকা, মেছতা পাট তিন হাজার তিনশ থেকে তিন হাজার পাঁচশ টাকা মন দরে বিক্রি হচ্ছে। দাম ভালো পাওয়ায় স্থানীয় কৃষকেরা খুশি।

উল্লাপাড়া উপজেলার চড়িয়া উজির এলাকার কৃষক চাঁদ আলী জানান, এবার তিন বিঘা জমিতে কেনাফ জাতের পাট চাষাবাদ করেছেন। জমিতে পাটের ভাল ফলন হয়েছে। ইতোমধ্যে পাট কাটা শুরু হয়েছে। এই পাট চাষাবাদ থেকে কাটা পর্যন্ত তিন বিঘা জমিতে তার প্রায় ২৫ হাজার টাকার খরচ হবে। আর তিনি এই জমি থেকে পাট এবং রুপালী কাঠি বিক্রি করবেন প্রায় লাখ টাকা। এতে তিনি অনেক টাকা লাভবান হবেন।

তাড়াশ উপজেলার বারুহাস গ্রামের কৃষক আব্দুল মান্নান বলেন, পাট চাষাবাদে জমির অনেক উপকার হয়। একদিকে বিঘা প্রতি প্রায় ১০ মন হারে পাট এবং ১২শ হাতা পাটখড়ি পাওয়ায় যায়। যা বিক্রি করে অনেক টাকা লাভ হয়। একই সাথে পাটের পাতা জমিতে পড়ে পচে যাওয়ার কারণে কম্পোষ্ট সার তৈরি হয়। এতে জমির মাটির গুণাগুণ বৃদ্ধি সহ রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমে আসে। সবদিক থেকে এ চাষাবাদ লাভজনক।

রায়গঞ্জ ও উল্লাপাড়া উপজেলার কৃষক আবেদ আলী, শুকুর মাহমুদ, সাত্তার শেখ, আমিনুল হোসেন জানান, এক দিকে প্রচণ্ড রোদ আর বৃষ্টির অভাবে পাটগাছ বড় হওয়ার পরে অনেক স্থানে গাছের পাতা শুকিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে বৃষ্টি না হওয়ায় খাল-বিল ও পুকুরে পানি জমেনি এবং এখনো বন্যার পানি আসেনি। এতে পাট জাগ দেওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে কৃষকরা। কিন্তু অনেক কৃষক পাট কেটে বাড়তি শ্রমিক ও অর্থ ব্যয় করে দূরবর্তী স্থানে নিয়ে পাট জাগ দিচ্ছেন। এতে তাদের বাড়তি সময় এবং অর্থ দুটোই ব্যয় হচ্ছে।

উল্লাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সুর্বনা ইয়াসমিন সুমি জানান, পাট চাষাবাদে কম খরচ ও পরিশ্রমে বেশি লাভবান হওয়া যায়। তাই চাষিদের এ চাষাবাদে বিনামূল্যে বীজসহ মাঠ পর্যায়ে নানা ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে উঁচু, নিচু, পতিত জমিতে কৃষকদের পাট চাষাবাদে উৎসাহিত ও পরামর্শ দিয়েছি। কৃষকরা পরামর্শ মতে পাট চাষাবাদ করেছেন। আশা করছি এবার ভাল ফলন এবং দামে কৃষকরা লাভবান হতে পারবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মো. শামীমুর ইসলাম বলেন, পাট চাষাবাদ অনেক লাভজনক। আমরা কৃষি বিভাগ থেকে এ চাষাবাদের কৃষকদের পাট বীজসহ নানা প্রণোদনা দিয়ে চাষাবাদে উৎসাহিত করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে। বাজারে ন্যায্য মূল্য পেলে কৃষকদের মুখে হাসি ফুটবে। আগামী দিনে কৃষকরা পাট চাষে আরও আগ্রহী হবেন বলে আশা করছি।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড