জে রাসেল, ফরিদপুর
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর মৌজায় পানি উন্নয়ন বোর্ড পাউবোর বেড়িবাঁধের জন্য সংরক্ষিত জমি কৃষিকাজের জন্য লিজ নিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে চারতলা ফাউন্ডেশনের একটি দোতলা বিল্ডিং। অবদা বেড়িবাঁধ সড়কের সাথে এমনভাবে এই দোতলা বিল্ডিং করা হয়েছে যা সামনে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই এর পিছনে দোতলা বিল্ডিং করা হয়েছে।
সামনের অংশে সড়কের পাশে সেমিপাকা টিনের বড় বড় চার-পাঁচটি দোকান ঘর বানিয়ে ভাড়া দেয়া হয়েছে। দেখলে মনে হবে সেগুলো অস্থায়ী কোনো স্থাপনা। তবে পাশের সড়কের ঢাল দিয়ে বাঁ দিকে তাকালে চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়।
প্রায় ২০ মিটার লম্বা কংক্রিটের তৈরি ছাদের নিচে রীতিমতো একটি বাড়ি তৈরি করে ফেলা হয়েছে পাউবোর অগোচরেই। একটু একটু করে দখল নিতে নিতে পাউবোর ওই বেড়ীবাঁধের জমির মালিকানাই এখন দাবি করে বসেছেন সৌদি আরব ফেরত প্রবাসী মো. জাঁকির হোসেন (৬২) নামে এক ব্যক্তি। সেই সূত্রে তৈরি করেছেন এই ভবন।
সাংবাদিকদের কাছে পাউবোর বেড়ীবাঁধের উপরে তৈরি বিল্ডিং তার নয় বলে প্রথমে এড়িয়ে গেলেও পরে তিনি বলেন, পাউবোর ওই সংরক্ষিত জমি মালিকানা সূত্রে তার ক্রয় করা সম্পত্তি।
তবে পাউবো সূত্র জানিয়েছে, জাঁকির হোসেন কৃষিকাজের জন্য পাউবো থেকে ১১ শতাংশ জমি লীজ নেন কয়েকবছর আগে। তবে লিজের শর্ত লঙ্ঘন করায় তার লীজ নবায়ন করা হয়নি। তিনি নতুন করে আরও জমি লীজ নেয়ার আবেদন করেছেন।
জাঁকির হোসেন কৃষিকাজ করতেন। ২১ বছর আগে সৌদি আরব যান। এখন ফিরে এসে দোতলা বিল্ডিংয়ের পাশে রাস্তার ওপারে বেড়ীবাঁধের আরও জমি তিনি দখল নিতে শুরু করেছেন। মাটি ফেলে জলাশয় ভরাট করে লম্বালম্বি টিনের ছাপরা বানিয়ে এরই মধ্যে দোকান তুলেছেন।
সংলগ্ন জমির প্রতিবেশী কাজী মঈনুল আলম বলেন, ২০০৫ সাল থেকে এই পুকুরের জমি আমাদের লিজ নেয়া। ক'দিন আগে এক ভোরবেলা জাঁকির হোসেন সেখানে ঘর তুলেছেন। অভিযোগ পেয়ে অবদার লোকেরা এসেছিলেন সরেজমিনে দেখতে। তার ছেলেরা এমন একটা হট্টগোল বাঁধাল, তা দেখে তারা চলে গেছে।
পাশের ওয়ার্ডের মেম্বার শাহাদাত হোসেন বলেন, অনেক আগে ৬২ সালে এই জমি ব্যক্তি মালিকানায় ছিল। পরে অবদা কিনে নিছে। এখন অবদার। তবে জাঁকির হোসেন কিভাবে কিনেছে তা জানেন না।
নথিপত্রে দেখা যায়, ২০০৯ সালে দুটি দলিলে জাঁকির হোসেন পাঁচজন ব্যক্তির নিকট থেকে ২ একর ৫৩ শতাংশ জমির মধ্যে পৌনে ৮ শতাংশ করে জমি রেজিস্ট্রি করেন।
দলিলে দাতাগণ হলফ নামায় বলেন, এই সম্পত্তি সরকারি খাস/অর্পিত বা পরিত্যক্ত সম্পত্তি নয় বা অন্য কোনোভাবে সরকারের উপর বর্তায় নাই। তিনি ২০১৩ সালে গোপালপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে ৮টি দাগে ১ একর ৫ শতাংশ ও ২ এক ৯৬ শতাংশ জমি বাবদ ১৪২০ বঙ্গাব্দের ২ টাকা খাজনা পরিশোধ রসিদ সংগ্রহ করেন। ২০২২ সালে তিনি ওই মৌজার ৮৬২ ও ৮৬৩ নং দুটি দাগের ৮ শতাংশ জমি লিজের আবেদন করেন পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে।
পাউবোর নথিতে দেখা যায়, ২৭৮/৬১-৬২ এল.এ. কেসের মাধ্যমে ওই দুটি দাগের ৩৬ শতাংশ জমি সহ ১১ একর ১১ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করা হয়। বেড়িবাঁধ নির্মাণের পর ওই দুটি দাগের ২২ শতাংশ জমি প্রকল্প রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সংরক্ষণ করা হয়। ২০০৫ সালে কৃষিকাজের জন্য সাময়িক বা বাৎসরিক ভিত্তিতে লিজ দেয়ার সুপারিশের পর মঈনুল পাউবোর ওই লিজের অন্যতম শর্ত হলো, লিজই শুধুমাত্র কৃষিকাজেই জমি ব্যবহার করতে পারবেন। কোনো প্রকার অবকাঠামো বা স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না।
এ ব্যাপারে জাঁকির হোসেন বলেন, আমার মালিকের নামে রেকর্ড আছে। এস এ রেকর্ড মতে আমি কিনিছি এবং বাড়ি করে ভোগদখলে আছি। বিএস রেকর্ড হয় নাই। নকশা করে গেছে।
এই জমি পাউবোর অধিগ্রহণ করা এই কিনা? জবাবে তিনি বলেন, আমি জানি কিছুটা তাদের আছে, সেটাও ঠিক। আমার ভাই মিনিস্টারিতে আছে। জমিটা সেই ঠিক করছে। সরকারিভাবে যেইটা করতে হয়। এক সময় নদী ভাঙ্গনে সর্বহারা এই ব্যক্তির দাবি, গোপালপুরের এক মৌজায় তার ৩ একর জমি রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. আবুল কালাম বলেন, এটা অবদার জায়গা। তারা লিজ কেটে এনেছে। গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইনামুল হাসান বলেন, এটি অবদার জায়গা, আবার ব্যক্তি মালিকানায় কেনা সেটিও জানি। এটি নিয়ে আমরা সালিসও করে দিয়েছি। দুই পক্ষের লিজ নেয়া। হয়তো কমবেশি। অবদা থেকে লোক এসে দেখে গেছে।
ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা বলেন, গোপালপুর বাজারে পাউবোর লিজকৃত জমিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করেছে। এ ব্যাপারে একটি অভিযোগ পেয়েছি এবং দাপ্তরিকভাবে একটি কমিটি করেছি।
তিনি আরও বলেন, সরেজমিনে তদন্তে যদি কেউ অবৈধ দখল করে থাকে তাহলে আমরা প্রশাসনের সহযোগিতায় তাকে উচ্ছেদ করার জন্য ব্যবস্থা নেবো। আমরা ম্যাজিস্ট্রেট এবং পুলিশের সহায়তায় তাকে আমাদের লিজকৃত সম্পদ থেকে উচ্ছেদ করে দিব।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড