• সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মামলা দিয়েও ঠেকানো যাচ্ছে না সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ শিকার

  সম্রাট, কয়রা (খুলনা)

০৪ জুলাই ২০২৩, ১৫:৪৪
সুন্দরবন

সুন্দরবনের অভয়ারণ্য (সংরক্ষিত) এলাকার খালে বিষ দিয়ে মাছ শিকার ঠেকাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বন বিভাগকে। বন বিভাগের বাঁধা উপেক্ষা করে সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশ করছে স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ীদের নৌকা ও ট্রলার। ইদের আগে এক সপ্তাহে ১২টি নৌকা আটক ও বিষ দিয়ে ধরা প্রায় দেড়শ কেজি চিংড়ি জব্দ করা হয়েছে। এ সময় কাউকে আটক করা না গেলেও জেলেদের দুই সহযোগীর নামে মামলা করেছে বনবিভাগ। মামলা হলেও থেমে নেই সুন্দরবনে মাছ ধরা বন্ধের সময় অভয়ারণ্যে বিষ দিয়ে মাছ শিকার। প্রতিদিন স্থানীয় মৎস্য আড়ৎ গুলোতে বিক্রয় হচ্ছে সুন্দরবন থেকে বিষ দিয়ে ধরা মাছ।

বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর ১ জুন থেকে ৩১ আগষ্ট পর্যন্ত তিন মাস সুন্দরবনের নদীতে মাছের প্রজনন মৌসুম চলে। এই তিন মাস সুন্দরবনে সব ধরনের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এছাড়া অভয়ারণ্য এলাকাগুলিতে সারা বছর জেলে-বাওয়ালি প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকে। সুন্দরবনের খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জের আওতায় এক লাখ ১৯ হাজার ৭১৮ হেক্টর এলাকা অভারণ্য হিসেবে চিহ্নিত রয়েছে।

পশ্চিম সুন্দরবনের কাশিয়াবাদ স্টেশন কর্মকর্তা শ্যামা প্রসাদ রায় অভিযোগে জানিয়েছেন, সুন্দরবন সংলগ্ন কয়রা ও দাকোপ উপজেলার জেলে মহাজন নামধারি কতিপয় ব্যাক্তি প্রতি বছর নিষিদ্ধ সময়ে সুন্দরবনের খালে মাছ শিকারের চেষ্টা করেন। এলাকার জেলেদের দাদনের ফাঁদে ফেলে বিষ দিয়ে মাছ শিকারে উৎসাহিত করেন তারা। আবার কেউ কেউ জেলেদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে সংরক্ষিত বনের খালে বিষ দিয়ে মাছ শিকার ও পাচারে সুযোগ করে দেন। তারা বনরক্ষিদের টহলের গতিবিধি লক্ষ করে জেলেদের সতর্ক করে থাকেন। এ রকমই দুই জনকে সনাক্ত করে তাদের নামে মামলা করা হয়েছে। তারা হলেন, কয়রা উপজেলার মঠবাড়ি গ্রামের রমজান সরদার ও মামুন মল্লিক।

তিনি বলেন, মামলার পর থেকে স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ি ও তাদের অধিনস্থ জেলেরা দল বেঁধে স্টেশনের সামনে এসে নিয়মিত হুমকি-ধামকি দিয়ে যাচ্ছেন। বিষয়টি উর্ধ্বতনদের জানিয়েছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাশিয়াবাদ ফরেষ্ট স্টেশনের একজন বনরক্ষী জানিয়েছেন, তাদেরকে এক প্রকার অবরুদ্ধ করে বনের খাল থেকে মাছ ধরে আনছেন ‘বিষদস্যু’ খ্যাত জেলেরা তাদের কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ও সিএমসির নামধারী কতিপয় ব্যক্তি সার্পোট দিয়ে থাকেন। তিনি আরও বলেন, স্থানীয় সামাজিক সংগঠনের এক নেতা, কতিপয় পুলিশ সদস্য ও সুন্দরবন অভ্যন্তরের কয়েকটি টহল ফাঁড়ির সদস্যরা জড়িত রয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।

সুন্দরবন কমিউনিটি পেট্রোলিং টিমের (সিপিপি) সদস্য বেলাল হোসেন অভিযোগ করেন, সুন্দরবন কেন্দ্রিক অপরাধ দমনে তারা পাহারা দিয়ে থাকেন। গত কয়েকদিন ধরে স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ীরা পাহারা কমিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছেন।

স্থানীয় কয়েকজন জেলের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সুন্দরবন অভ্যন্তরের নীলকমল ফরেষ্ট স্টেশনের দায়িত্বরত এক কর্মকর্তার সহযোগীতায় মাছ শিকারের সুযোগ পাচ্ছেন মাছ ব্যবসায়ীরা। ট্রলার প্রতি ১০ হাজার এবং নৌকা প্রতি ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে পূর্ণিমা ও আমাবস্যার গণে জেলে নামধারি দুর্বৃত্তদের ট্রলার অবস্থান করে অভয়ারণ্য এলাকায়। ওই সময়ে তারা অভয়ারণ্যের খালে বিষ দিয়ে অল্প সময়ে অধিক মাছ শিকার করে থাকেন। বন অভ্যন্তরে অবস্থানকালীন জেলেদের সার্বিক নিরাপত্তা দিয়ে থাকেন ওই কর্মকর্তা। এছাড়া জেলেদের শিকার করা মাছ নিরাপদে লোকালয়ে পৌঁছাতেও টাকা দিতে হয় স্থানীয় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের।

জানতে চাইলে নীমকমল ফরেষ্ট স্টেশন কর্মকর্তা জহির উদ্দীন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সুন্দরবনের বিশাল এরিয়া তার একার পক্ষে সামাল দেওয়া সম্ভব হয় না। অনেক সময় বনবিভাগের চোখ ফাঁকি দিয়ে অবৈধ জেলেরা প্রবেশ করেন। খবর পেলে আমরা তাদেরকে আটক করি। অর্থের বিনিময়ে কাউকে মাছ ধরার সুযোগ দেওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়।

সুন্দরবনের কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা শ্যামা প্রসাদ রায় বলেন, প্রতিবছর প্রজনন মৌসুমে তিনমাস সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এই সময়টায় প্রতিবছর স্থানীয় চিহ্নিত কয়েকজন মাছ ব্যবসায়ী সুন্দরবনের নিষিদ্ধ খালগুলিতে জেলে পাঠিয়ে বিষ দিয়ে মাছ শিকার করে থাকে। তাদের বির“দ্ধে অভিযান পরিচালনার কারণে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে আমার উপর আক্রমণের চেষ্টা করেন এবং আমাকে স্টেশন থেকে বদলি করার হুমকি দেন।

কয়রা থানার ওসি এবিএমএস দোহা বলেন, সুন্দরবন কেন্দ্রিক অপরাধ দমনে বনবিভাগকে সহযোগীতা করে থাকে পুলিশ। আমরা তথ্য পেলে সাথে সাথে ব্যবস্থা গ্রহণ করি। তবে কেউ যদি এ ধরনের কাজে জড়িত থাকার প্রমান পেলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পশ্চিম সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মহসীন হোসেন বলেন, নিষিদ্ধ সময়ে কেউ যাতে সুন্দরবনে প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য বনবিভাগের টহল জোরদার করা হয়েছে। তবে কোন অবৈধ কাজে সহযোগীতায় বনবিভাগের কারো জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড