• রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩২ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

আদালত ভবন নির্মাণের শুরুতেই ধসে পড়ল দেয়াল

  সম্রাট, কয়রা (খুলনা)

০৪ জুলাই ২০২৩, ১১:১৫
আদালত ভবন নির্মাণের শুরুতেই ধসে পড়ল দেয়াল

খুলনার কয়রা উপজেলায় আদালতের অস্থায়ি ভবন নির্মাণের শুরুতেই এর একটি দেয়াল ধসে পড়েছে। কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের কারণে এমনটি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আদালতের দাপ্তরিক কাজে কর্মরতরা।

তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন জানিয়েছেন, তাড়াহুড়ো করে কাজটি করতে গিয়ে নির্মানে কিছুটা ত্রুটি হয়েছে। সেটি ঠিক করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, ১৯৮৪ সালে নির্মিত কয়রা উপজেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও সহকারী জজ আদালতের ভবনটি ২০১৩ সালে পরিত্যাক্ত ঘোষনা করে গণপূর্ত বিভাগ। ভবনের দুর্দশা নিয়ে গত ৬ মে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার সংবাদ প্রকাশিত হয়।

পরবর্তিকালে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে গত ১০ মে কয়রা উপজেলার পুরাতন আদালত ভবনের পাশে একটি অস্থায়ি আদালত ভবন নির্মাণের জন্য ৩০ লাখ বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরে খুলনা গণপূর্ত বিভাগ-২ থেকে ভবন নির্মাণের জন্য দরপত্রের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হলে শওকত আলী বিশ্বাস নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ পায়। তাদের নিকট থেকে কাজটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব নেয় রবিন ট্রেডার্স নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান।

গত ১৫ জুন ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করেন তারা। নির্মাণ কাজ চলমান অবস্থায় গত ২৯ জুন রাতে ভবনের পিছনের অংশের দেয়ালের প্রায় ২৫ ফুট ইটের গাঁথুনি ধসে পড়ে। এতে কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আদালতের কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা। তাদের অভিযোগ অধিক লাভের আশায় ঠিকাদার নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করেছেন। যে কারণে শুরুতেই দেয়াল ধসের ঘটনা ঘটেছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, কায়রা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারি জজ আদালতের মূল ভবনের দক্ষিণ পাশে ২৫ ফুট লম্বা ও ১৫ ফুট চওড়া একটি অস্থায়ি ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। বর্তমানে ভবনের ভীত থেকে প্রায় প্রায় পাঁচ ফুটের মতো দেয়াল গেঁথে তার ভিতরে বালু ফেলে ভরাট করা হয়েছে।

এ অবস্থার ভবনের পূর্ব পাশের দেয়ালের পুরোটাই ধসে পড়ে গেছে। এছাড়া ভবনের দক্ষিণ পাশের দেয়ালের ১৫ ফুট অংশে ও বাকা হয়ে দসে পড়ার উপক্রম ধরেছে।

কয়রা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের স্টেনো দেলোয়ার হোসেন জানান, আদালতের মূল ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সেখানে বিচারিক কার্যক্রমসহ আদালত সংশ্লিষ্ট সকল কাজে গতিহীনতা দেখা দেয়।

গত ২৭ মার্চ গণপূর্ত বিভাগসহ বিভিন্ন দপ্তরকে ঝুঁকির বিষয়টি অবহিত করে চিঠি দেওয়া হয়। এ প্রেক্ষিতে আদালতের মূল ভবনের দক্ষিন পাশে দুই কক্ষ বিশিষ্ট একটি অস্থায়ি ভবন নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা আসে।

তিনি অভিযোগ করেন, ভবন নির্মাণের শুরুতেই ঠিকাদারের লোকজনকে মানস্মতভাবে কাজ করার অনুরোধ জানানো হয়। তারা কোনো কথায় কর্ণপাত না করে নিজেদের মতো করে কাজ করে যাচ্ছেন। গাঁথুনিতে সিমেন্টের পরিমান কম দিয়ে বালু বেশি দেওয়া হয়েছে।

তাছাড়া ভবনের বেজ ঢালাইয়ে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করেছেন ঠিকাদার। যে কারণে সহজেই তা ধসে গেছে। এভাবে ভবন নির্মাণ করা হলে আগের মতোই ঝুঁকিতে পড়তে হবে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

ঠিকাদারের পক্ষে আদালত ভবন নির্মানে কর্মরত মো. বিল্লাল হোসেন জানান, কাঁচা গাথুনির মধ্যে বালু ভরাট করা এবং অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে একটি দেয়াল ধসে গেছে। সেটি পুনরায় নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে কাজের মূল ঠিকাদার শওকত বিশ্বাস লাবু জানিয়েছেন, কাজ সাব কন্ট্রাক্ট দেওয়া হয়নি, একজনকে দেখাশুনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। নির্মান কাজটি শেষ করতে আদালত সংশ্লিষ্টরা বারবার তাগাদা দিচ্ছিলেন। কাজটি তাড়াহুড়ো করে করতে গিয়ে নির্মানে কিছুটা ত্রুটি হয়েছে। এখন থেকে আমি নিজেই কাজ দেখাশোনা করবো।

কিন্তু আদালত সংশ্লিষ্টরা জানান, শওকত বিশ্বাস লাবু নামে কেউ মূল কাজ পেয়েছে এমন কোন কথা আমাদেরকে জানানো হয়নি। তাছাড়া আমরা কোন কাজের তাড়াহুড়োর কথা বলিনি। তাদেরকে জুন মাস শেষ, এখন কাজ করবেন কিভাবে এমন প্রশ্নের জবাবে তারা জানান জুনের ভিতরে আমরা অনেকটা কাজ করে ফেলবো এবং ৫ লাখ টাকা করে পে অডার এর মাধ্যমে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে কাজ করবো।

তবে কোনো প্রক্রিয়ায় কিভাবে কাজ করবে এমন প্রশ্নের উত্তরে কোন সদুত্তর দিতে পারিনি। মূলত ভবন নির্মানের কাজটি তিন দফায় হাত বদল হয়েছে। কাজের মূল ঠিকাদার শওকত বিশ্বাসের নিকট থেকে কাজটি নিয়েছে রবিন ট্রেডার্স নামে আরেকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তাদের নিকট থেকে বিল্লাল হোসেন নামের এক মিস্ত্রি কাজটি নিয়েছেন। এসব অনিয়মের কারণেই কাজের শুরুতেই দেয়ালে ধস নিয়েছে। তাছাড়া আদালতের কাজ হওয়া সত্বেও কতৃপক্ষের কেউই সরেজমিনে কোনদিন কাজের তদারকি করেনি।

জানতে চাইলে খুলনা গণপূর্ত বিভাগ-২ এর উপসহকারি প্রকৌশলী আবুল হাসান বলেন, ঠিকাদারের কান্ডজ্ঞানহীন সিদ্ধান্তের কারণে ভবনের একটি দেয়াল ধসে পড়েছে। তাদেরকে যেভাবে কাজ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল সেভাবে কাজ করা হলে দূর্ঘটনা ঘটতো না। আমি সরেজমিন কাজের সাইট দেখে পরবর্তি পদক্ষেপ নেব।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড